হত্যা মামলায় সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াকে দশ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করা হয়েছে। রাজধানীর খিলগাঁও থানা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুজ্জামান জনিকে পুলিশি হেফাজতে ‘ক্রসফায়ারের নামে হত্যার’ অভিযোগে এ মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলায় তিনি এজহারনামীয় ১২ নম্বর আসামি।
বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলামের আদালতে তার উপস্থিতিতে এ রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজধানীর মহাখালী ফ্লাইওভার এলাকা থেকে আছাদুজ্জামান মিয়াকে গ্রেফতার করে র্যাব।
২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ২০ জানুয়ারি খিলগাঁও এলাকায় পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় কথিত বন্দুকযুদ্ধে মো. নুরুজ্জামান নিহত হন। এর ৯ বছর পর গত ৩ সেপ্টেম্বর জনির বাবা ইয়াকুব আলীর করা রাজধানীর খিলগাঁও থানায় মামলায় সাবেক এমপি সাবের হোসেন চৌধুরীসহ ৬২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ জানুযারি সকাল আনুমানিক ৮টা ১৫ মিনিটের দিকে নূরুজ্জামান জনি ও তার সহপাঠী মইনসহ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ছোট ভাই মনিরুজ্জামান হীরাকে দেখতে যায়। কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ফেরার পথে আসামিরা জনি ও মইনকে ডিবি পরিচয় দিয়ে অবৈধভাবে আটক করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন চালায়। পরবর্তীতে তাদের ডিবি ঢাকা মেট্রোপলিটন-দক্ষিণ কার্যালয়ে নিয়ে গিয়েও নির্যাতন চালানো হয়।
তখন নুরুজ্জামান জনির ৭ (সাত) মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মুনিয়া পারভিনসহ আত্মীস্বজনরা খিলগাঁও থানা, ডিবি দক্ষিন অফিস, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অফিসসহ বিভিন্ন থানায় হন্য হয়ে খুঁজে বেড়ায়। আসামিরা জনিকে আটক করেননি বলে জানান। প্রায় ২ দিন ধরে খোঁজাখুজি করার পরেও নুরুজ্জামান জনির কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে ২০ জানুযারি রাত আনুমানিক ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার দিকে খিলগাঁও থানার জোড়াপুকুর খেলার মাঠের আশপাশের মানুষজন চিৎকার করা কণ্ঠে কান্নার শব্দ শুনতে পায়। নির্যাতিত ব্যক্তিটি পানি-পানি বলে চিৎকার ও মা-মা বলে আর্তনাদ করতে থাকেন।
ঘটনাস্থলের এলাকার পাশে সি-ব্লকের বাসিন্দা লাভলী বেগম রাতের কান্নার শব্দ শুনেছে বলে জানান। এ-ব্লকের বাসিন্দা সাইফুদ্দিনের স্ত্রী সানজিদা আক্তার সেতু জানান, রাত ৩টার দিকে ওমাগো, মা, মা.. বাঁচাও বলে কয়েকবার চিৎকার শুনেছেন।
সেই সময় আশপাশ এলাকার বাসিন্দারা গুলির শব্দ শুনতে পায়। ভোর রাতে বাদীসহ সাক্ষীরা ও প্রতিবেশীরা খিলগাঁও থানার জোড়াপুকুর মাঠের দিকে গিয়ে পুলিশদের দেখতে পায়। আসামিরা বলে যে, নুরুজ্জামান জনি পুলিশের সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়েছে। তার মৃতদেহ ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে।
বাদী ও সাক্ষীরা ঢাকা মেডিক্যাল মর্গে যায় এবং সেখানে গিয়ে দেখতে পান নুরুজ্জামানের বুকের বামে, ডান দিকে, দুই হাতের তালুতে ১৬টি গুলির চিহ্ন রয়েছে। তার সমস্ত শরীর ঝাঁজরা করে ফেলেছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জিজ্ঞাসা করলে তারা কর্কশ ভাষায় গালিগালাজ করে। লাশ গ্রহণ না করলে মামলা দেওয়ার হুমকি দেয়।