স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অপসারণ আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের ১২টি সিটি করপোরেশন মেয়রবিহীন থাকলেও ব্যতিক্রম চট্টগ্রাম। নির্বাচনের সাড়ে তিন বছর পর আদালতের দেয়া রায়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে রোববার শপথ নিয়েছেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শাহাদাত হোসেন। এর ফলে দেশে এই মুহূর্তে একমাত্র মেয়র তিনি।
গত ১৯ আগস্ট স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৪’-এর ধারা ১৩-ক প্রয়োগ করে চট্টগ্রামসহ ১২টি সিটি করপোরেশনের মেয়রকে অপসারণ করা হয়। এ সময় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন আওয়ামী লীগের মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। একই দিন জারি করা অন্য এক প্রজ্ঞাপনে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
সিটি করপোরেশনের মেয়রদের অপসারণের ১ মাস ২১ দিন পর ১ অক্টোবর নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক ও চট্টগ্রাম প্রথম যুগ্ম জেলা জজ মো. খাইরুল আমিন এক রায়ে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীকে জয়ী ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন ঘোষিত ফলাফল বাতিল করে বিএনপি প্রার্থী শাহাদাত হোসেনকে মেয়র হিসেবে ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে ১০ দিনের মধ্যে এ-সংক্রান্ত গেজেট জারির জন্য নির্বাচন কমিশন সচিবকে নির্দেশনা দেন।
সিটি করপোরেশনের মেয়রদের অপসারণের ১ মাস ২১ দিন পর ১ অক্টোবর নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক ও চট্টগ্রাম প্রথম যুগ্ম জেলা জজ মো. খাইরুল আমিন এক রায়ে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীকে জয়ী ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন ঘোষিত ফলাফল বাতিল করে বিএনপি প্রার্থী শাহাদাত হোসেনকে মেয়র হিসেবে ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে ১০ দিনের মধ্যে এ-সংক্রান্ত গেজেট জারির জন্য নির্বাচন কমিশন সচিবকে নির্দেশনা দেন।
২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরীকে বিজয়ী ঘোষণা করেছিল নির্বাচন কমিশন। তার প্রাপ্ত ভোট ছিল ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮টি। অন্যদিকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন পেয়েছিলেন ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট। এরপর প্রায় সাড়ে তিন বছর মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এদিকে, নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে ফল বাতিল চেয়ে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ৯ জনকে বিবাদী করে মামলা করেছিলেন ডা. শাহাদাত হোসেন। গত ১ অক্টোবর চট্টগ্রাম প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ খাইরুল আমিন ওই মামলার রায়ে আগের ফলাফল বাতিল করে শাহাদাত হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করেন।
মেয়র হিসেবে শপথ নিলেন শাহাদাত : চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ নিলেন ডা. শাহাদাত হোসেন। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এএফ হাসান আরিফ রোববার সকালে সচিবালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে তাকে শপথবাক্য পাঠ করান।
শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে উপদেষ্টা হাসান আরিফ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়রকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘ডা. শাহাদাত হোসেন বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশের একটি প্রধান নগরীর মেয়র হয়েছেন। ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের শিক্ষাকে বুকে ধারণ করে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবেন এটাই তার কাছে প্রত্যাশা করি। আমরা গ্রিন চট্টগ্রাম দেখতে চাই। জলাবদ্ধতামুক্ত চট্টগ্রাম দেখতে চাই। ক্লিন সিটি হিসেবে নগরবাসীরও একই প্রত্যাশা।’
এ সময় তিনি বলেন, ‘পেছনের সব ধ্যানধারণা, চিন্তাকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে ছাত্র-জনতা-শ্রমিকদের যে অর্জনের জন্য তাদের আত্মত্যাগ রয়েছে, সে প্রত্যাশা পূরণের জন্য বৈষম্যহীন শক্তিশালী বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয় মেয়র শাহাদাত হোসেনের কাছে দেখতে চাই। আমি মনে করি, এ প্রত্যাশা চট্টগ্রামের প্রতিটি নাগরিকের। আমাদের প্রত্যাশা বৈষম্যহীন বাংলাদেশের।’
উপদেষ্টা এএফ হাসান আরিফ বলেন, চট্টগ্রামে কাউন্সিলর না থাকায় ১৭ সদস্যের একটি কমিটি করে দেয়া হয়েছে, যারা মেয়রের নেতৃত্বে কাজ করবেন। আইন অনুযায়ী চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মেয়রের মেয়াদ ঠিক হবে। তিনি বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই সরকার গঠিত হয়েছে। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় এ সরকার গঠিত হয়নি। তাই এ সরকারের প্রতি মানুষের প্রত্যাশা বেশি।’
তিনি আরো বলেন, ‘শনিবার ডেঙ্গুতে ১০ জন মারা গেছে। এটা উদ্বেগের। কীভাবে ডেঙ্গু আরও নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তা নিয়ে কাজ করছে মন্ত্রণালয়। ডেঙ্গু নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এ নিয়ে কাজ করবে মন্ত্রণালয়।’
শপথ নিয়ে ডা. শাহাদাত হোসেন তার প্রথম প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘চট্টগ্রাম বাঁচলেই বাংলাদেশ বাঁচবে। যদি চট্টগ্রাম শহরের ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপ করা যায়, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। এজন্য সবার সহযোগিতা কামনা করছি। গ্রিন সিটি, ক্লিন সিটি, হেলদি সিটি এসব আমার নির্বাচনী ইশতেহার। নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাব।’
স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহ উদ্দিন আহমদ, ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার, বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম, চট্টগ্রাম বিভাগের কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম বক্কর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, জেলা ও দায়রা জজ আদালত চট্টগ্রামের পিপি অ্যাডভোকেট আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক, মহানগর দায়রা জজ আদালত চট্টগ্রামের পিপি অ্যাডভোকেট মফিজুল হক ভূঁইয়া, বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম সাজ্জাদ প্রমুখ।
১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দের ২ জুন চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার হরলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন শাহাদাত হোসেন। ছাত্রদলের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাত হোসেন নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সাহসী ভূমিকা রাখেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ছাত্রদল সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এমবিবিএস পাস করার পর ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাবের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও পরে সভাপতি ছিলেন। বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকও করা হয়েছিল ডা. শাহাদাতকে। বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকও তিনি। নগর-বিএনপির একাধারে সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করার পর সর্বশেষ আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।