এবার কানাডায় পাঠানোর নামে দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৩০ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হওয়ার অভিযোগ উঠলো ক্যামিব্রিয়ান এডুকেশন গ্রুপের অন্যতম অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান এম কে বাশারের বিরুদ্ধে।
রোববার (৩ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে প্রতারণার শিকার শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা এ অভিযোগ করেন। ভুক্তভোগী সহস্রাধিক ছাত্র সমাজের ব্যানারে আয়োজিত গতকালের মানববন্ধনে বাশারসহ পুরো প্রতারকচক্রকে গ্রেফতার করে টাকা ফেরত ও তাদের শাস্তির দাবি জানানো হয়।
এর আগে গত ১৮ অক্টোবর জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বাশারের বিরুদ্ধে সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর কাছে দুই শতাধিক কোটি টাকা হাতিয়ে সটকে পড়ার অভিযোগ তুলেছিলেন প্রতারিতরা।
গতকালের মানববন্ধনে অংশ নেয়া প্রতারিত ছাত্রদের প্রতিনিধি আলিফ মাহমুদ দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, গত দুই বছর ধরে কানাডায় পাঠানোর কথা বলে টাকা জমা নিয়েছে বিএসবি গ্লোবাল। তারা কানাডার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও টিউশন ফি বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা জমা নিয়েছে। অনেকে তার পরিবারের সদস্যদের জন্যও টাকা জমা দিয়েছেন। কেউ ১২ লাখ, কেউ ১৫ লাখ টাকাও দিয়েছেন। তারা সবাই এখন বিপাকে পড়েছেন।
সেলিম রেজা নামে একজন ভুক্তভোগী বলেন, আমার স্ত্রীর জন্য ১২ লাখ টাকা জমা দিয়েছিলাম। গত বছর টাকা দিলেও তারা (বিএসবি) আমার স্ত্রীকে বিদেশে পাঠাতে পারেননি। আবার টাকা ফেরতও দিচ্ছেন না। উল্টো হুমকি দিচ্ছেন। এখন পরিস্থিতি পরিবর্তন হওয়ায় আমরা সবাই সাহস পেয়েছি। আশা করছি, প্রশাসনের হস্তক্ষেপে আমাদের টাকাগুলো ফেরত পাবো।
মানববন্ধনে উপস্থিত ভুক্তভোগীরা বলেন, কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি বাবদ প্রায় ২০০ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রায় ৩০ কোটি টাকা নিয়েছে বিএসবি গ্লোবাল। টাকার পরিমাণ আরও বেশিও হতে পারে। বিএসবি চেয়ারম্যান যখন আমাদের কানাডা পাঠাতে ব্যর্থ হয়েছে, তখন আমরা টাকা ফেরত চেয়েছি। তিনি টাকা না দিয়ে বারবার তারিখ পরিবর্তন করেছেন। দেড় বছরেও অনেকে টাকা ফেরত পাননি।
এর আগে গত ১৮ অক্টোবর জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর কাছে ২শ’ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলেছিলেন প্রতারিত শিক্ষার্থীরা। সে সময়ও আত্মসাৎ করা টাকা ফেরত ও দোষিদের শাস্তির জোর দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত প্রতারিত শিক্ষার্থী রুমান আলী তখন বলেন, ক্যামব্রিয়ান এডুকেসন গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য কানাডা, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ পৃথিবীর উন্নত দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রলোভন দেখিয়ে আমাদের থেকে টাকা নেয়। কলেজে সেশন ফি বাবদ যে টাকাগুলো দেয়া হয় তা বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে দিতে হয়। কিন্তু সেটি না করে মানি লন্ডারিং আইন বহির্ভূত কাজ করে সেই টাকাগুলো আমাদের থেকে নিয়ে তারা আত্মসাৎ করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত আরও এক প্রতারিত শিক্ষার্থী সিহাবুল ইসলাম সেদিন বলেন, ভুক্তভোগীর সংখ্যা সহস্রাধিক ও প্রত্যেকের পাওনা টাকার পরিমাণ গড়ে ২০ লাখ। তারা ২শ’ কোটিরও বেশী টাকা আত্মসাৎ করেছে।
সিহাবুল আরো বলেন, বিগত সরকারের আমলে এই প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা ফেরত চাইলে টালবাহানা করে সময়ক্ষেপণ করে। যার ফলশ্রুতিতে অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীর শিক্ষাজীবন বিপর্যস্ত হয়, এবং উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন ভেঙে যায়। আর্থিকভাবে প্রতিটি পরিবার অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরবর্তীতে অনেক দেন- দরবার করার পর পাওনা টাকার বিপরীতে বিএসবি কর্তৃপক্ষ অনেক পাওনাদারকে বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান মো. খাইরুল বাশার বাহার স্বাক্ষরিত চেক দেয় যা ব্যাংকে প্রত্যাখাত হয়।
তিনি সেদিন আরো বলেন, টাকা উদ্ধারের জন্য থানায় লিখিত অভিযোগ করা হলে এবং পরে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে গেলে বিএসবির চেয়ারম্যান খাইরুল বাশারের গুন্ডাবাহিনী আক্রমণ চালায়। এছাড়াও তারা পাওনাদারদের ক্রমাগত টাকা না দেবার হুমকি দিয়ে আসছে।
ওই দিনের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত আর এক ভুক্তভোগী চাঁদনী আক্তার বলেন, বিএসবি চেয়ারম্যান বাশার ও পাওনাদারদের এক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে স্ট্যাম্প পেপারে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, পাওনা টাকা ৩ কিস্তিতে যথাক্রমে ২৩ সেপ্টেম্বর, ২২ অক্টোবর ও ২৫ নভেম্বর সবাইকে পরিশোধ করবে। কিন্তু প্রথম কিস্তি পরিশোধের দিন (২৩ সেপ্টেম্বর) টাকা দিতে ব্যর্থ হয় ও তার গুন্ডাবাহিনী দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। সেখানে অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়। যা গুলশান থানা প্রশাসন অবগত।
চাঁদনী আক্তার সেদিন আরো বলেন, নিরুপায় হয়ে টাকা উদ্ধার ও নিরাপত্তার জন্য অনেকে জিডি, প্রতারণা ও চেক জালিয়াতির মামলা দায়ের করেছে এবং বিভিন্ন নিরাপত্তা-আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। বর্তমানে বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের কার্যক্রম আনুমানিক ২০-২৫ দিন ধরে বন্ধ করে রেখেছে। তারা সব মোবাইল নম্বরও বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করছে না। চেয়ারম্যান মো. খাইরুল বাশার অজ্ঞাতস্থানে আত্মগোপনে রয়েছেন।