ঘুম হচ্ছে শারীরবৃত্তীয় একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। অনেকেই হয়তো অবসর বা বিশ্রামের মাধ্যম হিসেবে নিয়ে থাকেন ঘুমকে। এমনটা হলেও ঘুমের মধ্যে বিভিন্ন জরুরি কাজ করে থাকে শরীর। তাই পর্যাপ্ত ঘুমের ফলে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকে। কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়, যদি সেই ঘুমই ভালো না হয়, তাহলে সবার আগে খারাপ থাকে মেজাজ।
দেখা যায় বিছানায় ঠিক ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা কাটিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু এই সময় ভালো ঘুম হয় না। এ কারণে শরীরের ছোট ছোট বিভিন্ন ধরনের অসুখ পিছু নিয়ে থাকে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে―ঘুম ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা তা কীভাবে বুঝবেন আপনি? এ ব্যাপারেই সম্প্রতি ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন কলকাতা শহরের বিশিষ্ট পালমুনোলজিস্ট এবং ঘুম বিশেষজ্ঞ ডা. অরূপ হালদার। এবার তাহলে এ বিষয়ে জেনে নেয়া যাক।
যেসব লক্ষণে সাবধান হতে হবে: ঘুম থেকে উঠার পর চোখ যদি তন্দ্রাচ্ছন্ন থাকে। দুর্বল অনুভব হলে, কাজে মনোযোগ না থাকলে, কাজে বারবার ভুল হওয়া, ছোট ছোট বিষয়ও ভুলে যাওয়া এবং নতুন কিছু শিখতে সমস্যা হওয়ার মতো লক্ষণ থাকলে আপনাকে অবশ্যই সাবধান হতে হবে। এ ধরনের সমস্যা থাকলে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানোর চেষ্টা করতে হবে। তা না হলে শারীরিক বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে।
যেসব সমস্যা হতে পারে: ডা. অরূপ হালদারের ভাষ্যমতে দীর্ঘদিন যদি ঘুম পর্যাপ্ত পরিমাণে কিংবা ঠিকঠাক না হয়, তাহলে ব্লাড প্রেশার বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। ফলে একপর্যায়ে এর প্রভাব হার্টে পড়তে পারে। এ থেকে হৃৎপিণ্ডের ছন্দপতনের ঝুঁকিও থাকে। আবার ঘুম না হওয়া সরাসরি স্নায়ুর উপর প্রভাব ফেলে। যা থেকে ডিমেনশিয়া, অ্যালঝাইমার্সের মতো রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। এমনকি মস্তিষ্কে আঘাত করে স্ট্রোকের মতো ভয়াবহ জটিলতাও হতে পারে।
দিনে কতক্ষণ ঘুমানো উচিত: ঘুমের চাহিদা মূলত বয়সভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন ছোটদের অনেক বেশি সময় ঘুমাতে হয়। যা তাদের বেড়ে উঠায় সহায়তা করে। তারপর বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে ঘুমের পরিমাণ কমতে থাকে। তবে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দিনে অন্তত ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। হ্যাঁ, এই সময় শুধু বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ রাখলে হবে না, ভালোভাবে ঘুমাতে হবে। তাহলে শরীর ও মন ভালো থাকবে। কম বয়সীদের কেন স্ট্রোক হয়, প্রতিরোধে করণীয় কী, জানালেন চিকিৎসক
ঘুমের জন্য যা প্রয়োজন: সাপ্তাহিক ছুটি বলে একটু বেশি ঘুমাব―এই ধরনের ভাবনা একদমই ঠিক নয়। তাতে ঘুমের রুটিনে পরিবর্তন হয়। রাতে ভালো ঘুমের জন্য যতটা সম্ভব চা-কফি কম পান করুন। কেননা, চায়ে ট্যানিন ও কফিতে ক্যাফিন রয়েছে। দুটি উপাদানই ঘুমের রেশ কাটিয়ে থাকে। ফলে ঘুম আসতে চায় না। ঘুমানোর ঘর নিঃশ্বদ কিনা সেটি নিশ্চিত করুন। ঘুমের প্রায় ঘণ্টাখানেক আগে থেকে ডিজিটাল ডিভাইস, যেমন মোবাইল, ল্যাপটপ, টেলিভিশন থেকে সরে আসুন। তবে বই পড়া বা গান শুনার অভ্যাস করতে পারেন। সব প্রস্তুতি নিয়ে বিছানায় শোয়ার ২০ মিনিট পরও যদি ঘুম না আসে, তাহলে উঠে পড়ুন এবং যখন চোখে ঘুম আসবে তখন শুয়ে পড়ুন। আর ঘুম আসছে না ভেবে কখনো চিন্তিত হবেন না, এতে আরো সমস্যা বাড়তে পারে।
চিকিৎসা প্রয়োজন: স্লিপ অ্যাপনিয়া বা নাক ডাকার মতো সমস্যা থাকলে ঘুম ভালো হয় না। এ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীকে যতটা সম্ভব দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। আবার যারা রেস্টলেস লেগ সিনড্রোমে ভুগছেন, তাদেরও চিকিৎসকের দ্বারস্থ হওয়া ভালো উপায়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করলেই পর্যাপ্ত ঘুম হবে এবং মন ও শরীর সুস্থ ও ভালো থাকবে।