সারা দেশে ফার্মেসিগুলোতে দেদার বিক্রি হচ্ছে গর্ভপাতের বিভিন্ন ওষুধ। অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের পর বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই এগুলো সেবন করছেন নারীরা। হরমোনাল এসব ওষুধ সেবনে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, অসম্পূর্ণ গর্ভপাত এবং মাসিক না হওয়ার মতো জটিলতা দেখা দেয়। অপরিকল্পিত গর্ভপাতের এই চেষ্টার ফলে নারীর মৃত্যুঝুঁকি বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
সঠিক নিয়ম মেনে ওষুধ সেবনের মাধ্যমে মাসিক নিয়মিতকরণ বা এমআরএম সেবা না পাওয়ায় দেশে নারীর মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। অপরিকল্পিত গর্ভধারণের ফলে মাসিক বন্ধ থাকলে সর্বশেষ মাসিক হওয়ার ৭০ দিন পর নিয়ম মেনে এই ওষুধ সেবন করলে মাসিক শুরু হবে। কিন্তু সচেতনতা, প্রচারণা ও সেবা প্রদানে অনীহার কারণে এমআরএম সেবা না পাওয়ায় দেশে অনেকেই ভুল পদ্ধতিতে গর্ভনিরোধ করতে গিয়ে মৃত্যুর শিকার হন।
বারডেম জেনারেল হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সামছাদ জাহান শেলী বলেন, প্রথমে গর্ভাবস্থা হয় টিউবের মধ্যে।
এরপর জরায়ুতে প্রবেশ করে। নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার আগে এই ওষুধ সেবনে টিউবে প্রেগনেন্সি থেকে যেতে পারে। পরবর্তী সময়ে টিউব ফেটে পেটের অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণে রোগী মারা যেতে পারেন। এজন্য কোনো চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গর্ভপাতের ওষুধ সেবন করা যাবে না।
তিনি বলেন, যেহেতু আমাদের দেশে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এই ওষুধ সহজলভ্য, সেক্ষেত্রে ওষুধ বিক্রির আইন অনুযায়ী এটি যত্রতত্র বিক্রি বন্ধ করতে হবে। এই ওষুধের সহজলভ্যতার কারণেই মাতৃমৃত্যু হার বাড়ছে।
দুই সন্তানের মা বরিশালের মিতা বেগম (প্রকৃত নাম নয়)। ছোট সন্তানের বয়স ৬ বছর। বছর খানেক আগে তার প্রচণ্ড মাথাব্যথা দেখা দেয়। ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করে সাময়িক স্বস্তি পেলেও এর কিছুদিন পর শুরু হয় মাথা ঘোরানো, বমি বমি ভাব ও খাওয়ায় অরুচি। স্বামীর সঙ্গে আলোচনা করে স্থানীয় ফার্মেসিতে ওষুধ বিক্রেতাকে সমস্যার কথা জানান।
তার পরামর্শে টেস্ট কিটের মাধ্যমে গর্ভধারণ পরীক্ষা করান মিতা। পরীক্ষায় তার গর্ভধারণের বিষয়টি নিশ্চিত হন। তবে তারা স্বামী-স্ত্রী দুজনই আর সন্তান নিতে চাননি। বিষয়টি ওষুধ বিক্রেতাকে জানালে তিনি গর্ভপাত করানোর কথা বলেন। বিক্রেতা এমএম কিট দিয়ে বলেন, এই ওষুধ সেবনে গর্ভপাত হয়ে মাসিক নিয়মিত হয়ে যাবে। কিন্তু ওষুধ সেবনের দুদিন পর্যন্ত পেট ব্যথা হলেও কোনো রক্তপাত হয়নি। এ কারণে তৃতীয় দিন এলাকার এক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। তার পরামর্শে আল্ট্রাসনোগ্রাম করলে টিউবের ভেতরে বাচ্চা থাকার বিষয়টি ধরা পড়ে। এরপর ওই চিকিৎসক কিছু ওষুধ দেন। ওষুধ সেবনের পর রাতে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয়। ওই অবস্থায় মিতাকে শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, গর্ভপাতের ওষুধ সেবনের কারণে টিউবের মধ্যে বাচ্চা নষ্ট হয়ে গেছে।
মিতা বেগম বলেন, অতিরিক্ত রক্তপাতের কারণে আমাকে ৭ ব্যাগ রক্ত নিতে হয়েছে। প্রায় আট দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিই। এখন সুস্থ হলেও মাঝে মাঝে মাথা ঘোরানো ও দুর্বলতা অনুভব করি।