বরিশালের চরমোনাইয়ে চলমান ওয়াজ মাহফিলে ধর্ম প্রচারের সঙ্গে আগামী সংসদ নির্বাচনে ধর্মভিত্তিক কয়েকটি রাজনৈতিক দলের জোটের প্রস্তুতি চলছে। চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলনের নেতৃত্বে এ জোট হচ্ছে। ধর্মভিত্তিক দলের বাইরে এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। গতকাল বৃহস্পতিবার দিনভর তিনি চরমোনাইয়ে ছিলেন। এ সময় বক্তব্যে আগামী নির্বাচনে পীরের নেতৃত্বাধীন ভোটের জোটে থাকার আভাস দিয়েছেন।
আরও কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দলের শীর্ষ নেতা গতকাল চরমোনাই মাহফিল প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত ওলামা-মাশায়েখ সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেন। তাদের বক্তব্যেও আগামী নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার ইঙ্গিত রয়েছে। তবে আগের মাহফিলগুলোতে বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল অংশ নিলেও এবার কেউ যাননি। যাননি জামায়াতে ইসলামীর কেউ।
চরমোনাই দরবারে তিন দিনের বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল গত বুধবার শুরু হয়। প্রতিবছর মাহফিলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের জাতীয় নেতা ও স্থানীয় প্রতিনিধিরা অংশ নেন। ইসলামী আন্দোলনের সর্বস্তরের নেতাকর্মীও চরমোনাইয়ে উপস্থিত থাকেন। এ সময় দলের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়। ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর এবারের মাহফিলের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় প্রস্তুতির পাশাপাশি জোটের প্রস্তুতিও নিচ্ছে ইসলামী আন্দোলন।
জানা গেছে, বুধবার ফজরের নামাজের আগে সড়কপথে চরমোনাইয়ে পৌঁছান গণঅধিকারের সভাপতি নুরুল হক নুর। এই প্রথম তিনি চরমোনাইর মাহফিলে অংশ নেন। ফজরের নামাজের পর তাঁকে পাশে বসিয়ে মুসল্লিদের উদ্দেশে ধর্মীয় বয়ান করেন পীর ও ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম। এর আগে মঞ্চে নুরকে টুপি পরিয়ে পীর বরণ করেন ও মুসল্লিদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।
দুপুরে মাহফিল প্রাঙ্গণে ওলামা-মাশায়েখ সুধী সম্মেলনে নুর ছাড়াও বক্তব্য দেন খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আবদুল বাসিত আজাদ, ফরায়েজী জামায়াতের আমির বাহাদুরপুরের পীর হাফেজ মাওলানা আবদুল্লাহ মোহাম্মদ হাসান, হাফেজ মাওলানা নেয়ামত উল্লাহ আল ফরিদী, ইসলামী বক্তা হাফিজুর রহমান সিদ্দিক, খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা তোফাজ্জল হোসেন মিয়াজী প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন নেজামী ইসলামীসহ আরও কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দলের নেতারা।
বক্তব্যে খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আবদুল বাসিত আজাদ বলেন, ‘ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হবো।’
ফরায়েজী জামায়াতের আমির মাওলানা আবদুল্লাহ মোহাম্মদ হাসান বলেন, ‘পীর সাহেব চরমোনাইয়ের ইমামতিতে কাজ করতে একমত। এ জন্য যা যা করা দরকার, তা করতে রাজি আছি।’
খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা তোফাজ্জল হোসেন মিয়াজী বলেন, ‘চরমোনাই পীর ও আল্লামা মামুনুল হক একসঙ্গে বসেছেন, হাতে হাত রেখে একত্রে পথচলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুর বলেন, ‘কোনো রাজনৈতিক দলকে প্রাধান্য দিয়ে অন্যদের অবজ্ঞা করা যাবে না। ছোটখাটো বিরোধের কারণে নতুন করে দেশ গড়ার সুযোগ থেকে যাতে আমরা বঞ্চিত না হই।’
ইসলামী আন্দোলনের মিডিয়া সেলের সদস্য কে এম শরীয়ত উল্লাহ জানান, ২৬ নভেম্বর বরিশাল নগরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে বিভাগীয় কওমি মাদ্রাসা ঐক্য পরিষদের মহাসম্মেলনে চরমোনাই পীর সৈয়দ রেজাউল ও খেলাফত মসলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক একই মঞ্চে বক্তব্য দিয়ে ইসলামী দলগুলোর ঐক্যের ডাক দেন। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার চরমোনাইর কর্মসূচিতে কয়েক দলের শীর্ষ নেতারা অংশ নেন।
নুরসহ অন্য দলের নেতাদের চরমোনাইয়ে উপস্থিত হওয়া নির্বাচনী ঐক্যের আভাস কিনা, জানতে চাইলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুস আহমেদ বলেন, সমমনাদের নিয়ে জোট গঠনের কার্যক্রম অনেক আগে শুরু করেছি। বৃহস্পতিবার কয়েকটি দলের নেতারা চরমোনাইয়ে ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলনে গিয়ে সংহতির কথা জানিয়েছেন। এর ফলে জোট গঠনের উদ্যোগ আরও একধাপ এগিয়ে গেল।
ভিপি নুরু প্রথমবার চরমোনাইয়ে এসেছেন জানিয়ে অধ্যক্ষ ইউনুস বলেন, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকে মাহফিলে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তবে জোট গঠনের ক্ষেত্রে সবার সঙ্গে আলোচনার আরও অনেক সুযোগ আছে।
এ ব্যাপারে নুরুল হক নুরের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে । তবে নুরের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি।