আজ ২০ জানুয়ারি। ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানের অগ্রনায়ক শহীদ আসাদের ৫৪তম শাহাদাতদিবস। শহীদ আসাদ একটি প্রেরণা, একটি সংগ্রাম আর একটি আদর্শের নাম। যার পুরো নাম আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের পেটুয়া বাহিনীর গুলিতে মিছিলের অগ্রভাগে থাকা আসাদ শহীদ হন। এ মিছিলের নেতৃত্ব দেন প্রখ্যাত ছাত্রনেতা ও রাজনীতিক তোফায়েল আহমেদ। শহীদ আসাদের রক্তদানের মধ্য দিয়ে বাঙালি পায় ১৯৭০এর গণমান্ডেট, মুক্তিযুদ্ধ ও বহু প্রতীক্ষিত স্বাধীনতা।
শহীদ আসাদ স্মরণে কবি শামসুর রাহমান লিখেছিলেন কালজয়ী কবিতা ‘আসাদের শার্ট’। তাতে কবি লিখেছিলেন ‘আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা/সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক/ আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা’। স্বাধীনতার লাখ লাখ শহীদের মধ্যেও আসাদ অনন্য এবং সমুজ্জল।
রাজধানী শেরেবাংলা নগর পেরিয়ে মোহাম্মদপুরের প্রবেশদ্বারে রয়েছে একটি বিশাল তোরণ-যা ‘আসাদ গেট’ নামেই পরিচিত। ‘আসাদ গেট’ নামটি শোনেননি বর্তমান প্রজন্মের কাছে এমোন মানুষ পাওয়া দুর্লভ। কিন্তু তাদের অনেকেই জানেন না, শহীদ আসাদ কে? কেনোই বা এ গেটটির নামকরণ? ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ২০ জানুয়ারি ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের নায়ক শহীদ আসাদ স্মরণে এ গেইটের নামকরণ হয়।
শহীদ আসাদের নাম জনগণের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, শোষণমুক্তি ও অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের পতাকায় উজ্জ্বল।ষাট দশকে পাকিস্তানের স্বৈরাচারী শাসন, জাতিগত বৈষম্য ও নিপীড়ন এবং শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার সংগ্রামে সেদিন আসাদ শহীদ হওয়ার ঘটনা বাংলার সংগ্রামী মানুষের প্রাণে জাগিয়েছিলো অমিত সাহস ও দৃঢ় শক্তি। গণতন্ত্র আর স্বদেশ মুক্তির লড়াইয়ে আসাদ সাহসী পথপ্রদর্শক, প্রেরণার উৎস। আসাদ শহীদ না হলে ঊনসত্তুরের গণঅভ্যুত্থান হতো না, আসাদের পথ ধরেই মতিউর শহীদ হন। আসাদের আত্মদানেই সেদিন স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের পতন হয়েছিলো। সেদিন শহীদ আসাদের রক্তমাখা শার্ট ছুঁয়ে শপথ নেওয়ার মধ্য দিয়ে যে আন্দোলনের সূচনা হয়েছিলো, সেই চেতনা গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনের এক অনুপ্রেরণা। বর্তমান প্রজন্মকে স্বদেশ মুক্তি আর গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের কথা জানতে হলে আসাদকে পড়তে হবে, জানতে হবে।
আসাদ শহীদ হওয়ার কিছুদিন আগেও কৃষক আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের হাতে চরমভাবে অপমানিত হয়েছিলেন। সত্যিকার অর্থে তিনি ছিলেন অসম্ভব যোদ্ধা ও চরিত্রবান বিপ্লবী। শহীদ আসাদ ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী ছিলেন। নেতৃস্থানীয় পদেও ছিলেন। আসাদ মনেপ্রাণে বিপ্লবকে ধারণ করতেন। মার্ক্সবাদে বিশ্বাসী সৎ, নিষ্ঠাবান একজন মানুষ।একই সঙ্গে তিনি বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের নেতা ছিলেন, আবার একই সঙ্গে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন কৃষক সংগঠনও করতেন। আসাদের জন্ম ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দের ১০ জুন নরসিংদী জেলার শিবপুর গ্রামে। আসাদের কর্মজীবনের ইতিহাস খুব দীর্ঘ নয়।
ঐতিহাসিক ২০ জানুয়ারির সম্পর্কে প্রবীণ রাজনীতিক হায়দার আকবর খান রনো বলেন, সেদিন ১৪৪ ধারা জারি করেছিলো আইয়ুব খান। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে যারা মিছিল নিয়ে বেরিয়েছিলেন,তাদের মধ্যে আসাদও ছিলেন। আমার ভাই হায়দার আনোয়ার খান জুনু আসাদের পাশেই সামনের সারিতে ছিলেন।কিছুদূর থেকে একটা জিপ থেকে মিছিল লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে পুলিশ। আসাদ শহীদ হন। আসাদ শহীদ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশ পুরো অগ্নিস্ফুলিঙ্গ হয়ে ওঠে।সারা দেশ যেনো কেঁপে উঠলো, জেগে উঠলো। পতন হলো স্বৈরশাসক আইযুব খানের।
লেখক : কলামিস্ট ও মহাসচিব, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি