ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ , ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

nogod
nogod
bkash
bkash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
nogod
nogod
bkash
bkash

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কতো

মতামত

একেএম আবদুল আউয়াল মজুমদার

প্রকাশিত: ১৩:২৭, ২৫ জানুয়ারি ২০২৩

সর্বশেষ

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কতো

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী হৃসি সুনাককে ১০০ পাউন্ড জরিমানা করা হয়েছে। তিনি চলন্ত গাড়িতে বেল্ট না বেঁধে ভ্রমণ করার অপরাধে জরিমানা দিতে বাধ্য হন। দুঃখ প্রকাশ করেও রেহাই পান নি। একে বলে আইনের শাসন। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী আইনানুগ কাজে ক্ষমতাধর। কিন্তু আইন অমান্য করলে অসহায়।

ওই ঘটনার পর কোনো কোনো লেখক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে লিখেছিলেন, তিনি নারীকে পুরুষ এবং পুরুষকে নারীতে রূপান্তরিত করা ছাড়া অন্য যে কোনো কাজ করতে পারেন।

আসলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার তুলনামূলক বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তারা এমন বাক্য লিখেছেন। তাঁরা উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, সব গুরুত্বপূর্ণ পদের নিয়োগে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের অনুমোদন নিতে হয়। সিনেট অনুমোদন না দিলে প্রেসিডেন্টকে নিয়োগ বাতিল করতে হয়। ধরনের বাতিলের অনেক উদাহরণ রয়েছে।

বস্তুত, নিয়োগের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টের উপর নির্ভরশীল নন। এসব ক্ষেত্রে

অনুমোদনের জন্য নথি রাজা অথবা রানীর কাছে গেলেও, সেটি একান্তই আনুষ্ঠানিকতা। দেশটির রাজা অথবা রানী প্রায় শতভাগ কাজই প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ

অনুযায়ী করেন। প্রধান মন্ত্রীর ক্ষমতার উৎস পার্লামেন্ট। তিনি পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা। তিনি পুরো পার্লামেন্টের লিডার। বিশেষ কোনো জটিলতা দেখা না দিলে তিনি পার্লামেন্টের হিরো। তাঁর নেতৃত্বে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যরা পরিচালিত হন। পার্লামেন্ট

নিজে নির্বাক। প্রধান মন্ত্রী সবাক। তিনি রাষ্ট্রের সরকার প্রধান। তিনি রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী। তিনি পার্লামেন্টের উপর ভর করে দেশ চালান। যাঁদেরকে কেন্দ্র করে পার্লামেন্ট সরব হয়, তাঁদের মধ্যে তিনি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি শক্তিশালী অবস্থানে থাকলে পার্লামেন্ট শক্তিশালী হয়। তাঁর অবস্থান নড়বড়ে থাকলে পার্লামেন্ট হয় ঝুলন্ত পার্লামেন্ট।

পার্লামেন্ট নিজে নিজে সক্রিয় হতে পারে না। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ পেলেই রাজা অথবা রানী পার্লামেন্টের অধিবেশন ডাকেন। তখনই পার্লামেন্ট মুখরিত হয়। পার্লামেন্টকে বিদায় নিতে হলেও তাঁর সুপারিশ লাগে।

একজন সংসদ নেতা ( লিডার অব দ্য হাউস) ছাড়া সংসদ কাঠ- বালি ছাড়া আর কিছুই নয়। সংসদ নেতা নির্ধারণের আগে বিরোধী দলীয় নেতা নির্ধারিত হন না। স্পিকার নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য ভূমিকা থাকে। সংসদ নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টের প্রাণ।

গ্রামবাংলায় একটি কথা আছে, ‘হাতি খাদে পড়লে উইপোকায়ও যাঁতে।’ অনাস্থায় পড়লে প্রধানমন্ত্রীও বেকায়দায় পড়েন। অন্যথায় তিনিই তো হিরো। তিনি থাকলে পার্লামেন্ট সক্রিয় থাকে। তিনি না থাকলে পার্লামেন্ট টলতে থাকে।

তবে এটিও সত্য যে, তাঁর সব শক্তির ক্ষমতার উৎস পার্লামেন্ট। তিনি পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবেই ক্ষমতার অধিকারী হন।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট অপেক্ষা যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের ক্ষমতা বেশি। সব ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে কংগ্রেসের কাছে বেশি জবাবদিহি করতে হয়। তাই ক্ষমতার তুলনামূলক বিশ্লেষণের সুবিধার্থে কোনো কোনো লেখক ব্রিটিশ

প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে কথাটি বলেছিলেন। তবে আমি এমন মতের সাথে সহমত পোষণ করি না। In my opinion, British Prime Minister is the number one among equals.

সব equal সমান মান মাপের হন না। উইনস্টন চার্চিল এবং মার্গারেট থ্যাচার স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পরাক্রমশালী ছিলেন।

তাছাড়া দুর্বল রাজার কারণে কোনো কোনো প্রধান মন্ত্রীর হাতে অনেক ক্ষমতা চলে আসে। ব্রিটেনের দশম রাজা প্রথম জর্জ ছিলেন জার্মানির হেনোভারিয়ান রাজবংশের সন্তান। ব্রিটিশ রাজ পরিবার ছিল তাঁর নানার বংশ। নানার বংশে যোগ্য লোক না থাকায় তাঁকে জার্মানি থেকে এনে ব্রিটেনের সিংহাসনে বসানো হয়। তিনি ইংরেজি জানতেন না। তাই তিনি মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতিত্ব করা থেকে বিরত থাকতেন। দেশ শাসনেও তাঁর তেমন ভূমিকা ছিল না। তিনি সিনিয়র মন্ত্রী স্যার রবার্ট ওয়ালপলের উপর সব কিছু ছেড়ে দেন। অধিকাংশ সময় তিনি ব্রিটেনে থাকতেন না। তিনি জার্মানিতেই থাকতেন। অবস্থায় ১৭২১ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটেনে প্রধান মন্ত্রীর পদ সৃজন হয়।

স্যার ওয়ালপল ব্রিটেনের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। তিনি ১৭২১ থেকে ১৭৪২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ব্রিটেনের দশম রাজা প্রথম জর্জের শাসন কাল ছিল ১৭১৪ থেকে ১৭২৭ খ্রিষ্টাব্দ। রাজা দ্বিতীয় জর্জও (১৭২৭ থেকে ১৭৬০) দেশ শাসনে মন দেন নি। তিনিও দেশ শাসনে প্রধানমন্ত্রীর উপর নির্ভরশীল ছিলেন।

প্রসঙ্গত, Jean Louis de Lolme ছিলেন একজন রাজনৈতিক

তাত্ত্বিক। তাঁর জন্ম বেড়ে উঠা জেনেভায়। পরে তিনি ব্রিটেনে পাড়ি জমান। অতঃপর তিনি

ব্রিটিশ প্রজা ছিলেন। তাঁর জীবনকাল ছিল ১৭৪০ থেকে ১৮০৬ খ্রিষ্টাব্দ। তিনি একজন লেখক ছিলেন। তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত গ্রন্থের নাম, The Constitution of England. যা ১৭৭১ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়।

ওই গ্রন্থে তিনি লিখেছেন, Parliament can do everything but make a woman a man and a man a woman. ’

তিনি এটি লিখেছিলেন ১৭৭১ খ্রিষ্টাব্দে। তখন প্রতিবেশী অন্যান্য দেশের তুলনায় ব্রিটিশ সংবিধান উদার ছিল। ললমি ব্রিটেনের প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের প্রশংসা করেন। তবে তিনি রাজতন্ত্র, অভিজাততন্ত্র এবং গণতন্ত্রের মাঝে আরও ভারসাম্যপূর্ণ আইন তৈরি সার্বজনীন ভোটাধিকারের পরিধি বাড়ানোর পক্ষে মতামত দেন। কিন্তু পার্লামেন্টের অনুমোদন ছাড়া ওইসব বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ ছিল না।

ঐতিহাসিক সত্য  হলো, লুইস কথাটি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী নয়, পার্লামেন্ট সম্পর্কে বলেছিলেন।

 

লেখক : সাবেক সচিব, লেখক গবেষক

জনপ্রিয়