গায়ে ফোস্কা ফেলা গরম থেকে নিস্তার পেতে ভরসা বৃষ্টি। অথচ বৃষ্টি আসবে আসবে করেও আসছে না। বর্ষার এখনও কিছুটা দেরি। তার আগে বৃষ্টির মন পেতে নানা রকম আয়োজন করে চলেছেন এখনো বৃষ্টি না হওয়া অঞ্চলের বাসিন্দারা।
মুসলমান অধ্যুষিত বাংলাদেশে যেমন বিভিন্ন স্থানে ইসতিসকার নামাজ আদায় করা হচ্ছে, তেমনি বহু জাতিগোষ্ঠীর ভারতে পালিত হচ্ছে বিচিত্র সব রীতি-রেওয়াজ।
যেমন দক্ষিণ ভারতের কর্নাটক রাজ্যের গড়গ জেলায় লক্ষ্মেশ্বর গ্রামের বাসিন্দারা পুতুলের বিয়ে দিয়েছেন! কাপড়ের দু’টি পুতুলকে বর-বউ সাজিয়ে তাদের গ্রামের ছেলে-মেয়ের মতোই আদরযত্ন করেছেন। মানুষের বিয়ে আর পুতুলের বিয়ের ফারাক ছিলো না কোনও। সমস্ত রীতি মেনেই হয়েছে অনুষ্ঠান। প্রথমে পাত্রীপক্ষ এবং পাত্রপক্ষে কারা থাকবেন, তা ঠিক করেছেন গ্রামবাসীরা। তার পর গায়েহলুদ থেকে শুরু করে কন্যাদান, সিঁদুরদান, সাত পাক ঘোরা, এমনকি নববিবাহিত পুতুল-বউকে পুতুল-বরের সঙ্গে জাঁকজমক করে তার ‘বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থাও হয়েছে। আর পাঁচটা বিয়েবাড়ির মতোই এই বিয়েতেও ছিল ঢালাও খাওয়াদাওয়ার আয়োজন। পাত পেড়ে পুতুলের বিয়ে খেয়েছেন গ্রামের লোকই।
তারা জানিয়েছেন, এ সবই আদতে বৃষ্টির দেবতাকে তুষ্ট করার নিয়ম। যা এই গ্রামে দীর্ঘ দিন ধরে পালন করা হচ্ছে। আর তারা দেখেছেন, যত বারই এই নিয়ম পালন করা হয়েছে, তার সাত দিনের মধ্যে বৃষ্টি নেমেছে গ্রামে।
লক্ষ্মেশ্বরের মতোই কর্ণাটকের আর এক গ্রাম বিজয়পুরার কালাকেরিতে চালু আছে আর এক অদ্ভূত রীতি। বৃষ্টি না হওয়াকে ওই গ্রামের মানুষ মনে করে আত্মার অভিশাপ। তাই আত্মাদের তুষ্ট করে বৃষ্টি আনতে সেখানে কবর খুঁড়ে তুলে আনা হয় মৃতদেহ। তার পর পাম্প করে পানি ঢুকিয়ে দেওয়া হয় মৃতদেহের মুখে। গত বছর বৃষ্টির আনার জন্য গ্রামে মৃতদের একটি তালিকা তৈরি করে, সেই তালিকা ধরে একের পর এক মৃতদেহকে পানি ‘খাওয়ানো’ হয়েছিল। আশ্চর্যজনকভাবে তারপর বৃষ্টিও নেমেছিল ওই গ্রামে। প্রতিটি কবরের ঠিক মাথার দিকে পাইপ ঢুকিয়ে পাম্প করে পানি ঢোকানো হচ্ছিল। ২৫তম কবরটিতে যখন পানি দেওয়া হচ্ছে, ঠিক তখনই গ্রামে বৃষ্টি নামে!
কালকেরির গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, বহু বছর আগে হাঁ করে মুখ খোলা অবস্থায় এক ব্যক্তির মৃতদেহ কবর দেওয়া হয়েছিল কালকেরিতে। সে বছর গোটা গ্রামে খরা হয়েছিল।
গ্রামের বয়স্করা এর পর এক জ্যোতিষীকে বিষয়টি জানাতে তিনি বলেন, তৃষ্ণার্ত মৃতদেহকে কবর দেওয়ার জন্যই গ্রামবাসীদের ‘শাস্তি’ পেতে হচ্ছে।
এর পর ওই জ্যোতিষীর কথা শুনেই ওই ব্যক্তির কবরে পানি প্রবেশ করানো হয়। কথিত আছে, তার পরেই বৃষ্টি নেমেছিল গ্রামে। এই ঘটনায় গ্রামবাসীদের মনে দৃঢ় বিশ্বাস জন্মায়। যা আজও চলে আসছে।
বৃষ্টি না হলে বর্ষার রাগ গাওয়ারও চল আছে। সব থেকে প্রচলিত যে গল্প, তা মিয়াঁ তানসেনের। আকবরের সভায় নবরত্নের অন্যতম রত্নটিকে নিয়ে নাকি অনেকেই হিংসায় জ্বলেপুড়ে যেতেন। তারাই নাকি তানসেনকে শেষ করার উপায় হিসেবে তাকে দীপক রাগ গাইতে প্ররোচিত করেন। যে রাগ গাইলে আগুনে পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিলো। তা হলে সেই আগুনে তানসেনও পুড়ে যেতে পারতেন। এই ছিলো তাদের অভিসন্ধি।
পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে দীপক গাওয়ার পর বৃষ্টি আনতে মেঘমল্লার গাওয়ার প্রয়োজন। সেটা তানসেন বিলক্ষণ জানতেন। যে কারণে নিজের কন্যা এবং গুরু-কন্যাকে মল্লারে তালিম দেন।
নির্দিষ্ট দিনে যখন তানসেন দীপক রাগ ধরলেন, কিছু ক্ষণের মধ্যে চারদিক তপ্ত হতে থাকল। সভাগৃহের মোমবাতিতে আগুন ধরে গেল। বিপদ বুঝে সবাই দিগ্বিদিক ছুটতে শুরু করলেন। তানসেনের গায়েও প্রবল তাপ। যে তাপ ক্রমে বাড়ছে।
এর পর তানসেন বাড়ির পথ ধরলেন। যেখানে তখন দুই মেয়ে গান ধরেছে মেঘমল্লারে। অতঃপর বৃষ্টি নামল। শান্ত হল বসুধা। প্রাণে বাঁচলেন তানসেনও।
(আনন্দবাজারসহ বিভিন্ন অনলাইন পোর্টার অবলম্বনে)