ফুটবল অসামান্য, অপ্রতিদ্বন্দ্বী, অপরাজেয় ও পৃথিবীর সুন্দর এক বিষয়। বিশ্বকাপে যুগে যুগে অঘটনের বর্ণনা করতে গিয়ে এসব উপমাই ব্যবহার করেছে দু শ বছরের পুরোনো ব্রিটিশ পত্রিকা গার্ডিয়ান।
গার্ডিয়ান তাদের সেরা পাঁচ অঘটনের যেসব ম্যাচের উল্লেখ করেছে, সেখানে তালিকায় দুবার নাম এসেছে আর্জেন্টিনার। সবশেষ গতকাল সৌদি আরবের বিপক্ষে। ১৯৯০ সালে ক্যামেরুনের কাছে হারের পরও বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেছিল ডিয়েগো ম্যারাডোনার দল। কিন্তু সৌদির কাছে ২-১ গোলে হারের পর লিওনেল মেসি তাঁর শেষ বিশ্বকাপটা রাঙাতে পারবেন কি না, তা নিয়ে ঘোর সংশয় তৈরি হয়ে গেছে। গ্রুপের সবচেয়ে সহজ দলের কাছে হারের পর আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়দের মধ্যে যে হতাশা দেখা গেছে, সেখান থেকে বের হতে না পারলে মেক্সিকো ও পোল্যান্ডের কাছে আরও বড় ধাক্কাও খেতে হতে পারে মেসির দলের।
আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ২-১ গোলের জয়কে অঘটন বললে খাটো করে দেখা হয় সৌদির অর্জনকেও। মেসি, লাউতারো মার্তিনেজ ও আনহেল ডি মারিয়ার মতো আক্রমণভাগ নিয়ে ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত আর্জেন্টিনাকে কীভাবে থামানো যায়, সে প্রশ্নের উত্তর যখন হন্যে হয়ে খুঁজছেন কোচরা, তখন সৌদি কোচ হার্ভে রেনার্দ অপূর্ব কৌশলে দেখিয়ে দিলেন আকাশি-নীলদের বড় ফাটলটা। বিশেষজ্ঞরা ভাবছিলেন, সৌদি তাদের ১১ খেলোয়াড়কেই খেলাবে নিচে নামিয়ে, রেনার্দ তাঁর দলকে খেলালেন সাহসী ফুটবল। ওপরে উঠে হাইলাইন ডিফেন্সে পাতলেন অফসাইডের ফাঁদ। মেসি-মার্তিনেজ সেই ফাঁদে পা দিয়ে খোয়ালেন তিন গোল। ভিএআর প্রযুক্তির সহায়তায় অফসাইডে প্রথমার্ধে তিন গোল বাতিল হওয়ার পর মনোবল হারিয়ে ফেলেন আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়েরা। ভঙ্গুর আর্জেন্টিনার ওপর দ্বিতীয়ার্ধে হাই প্রেস ফুটবলে ৪ মিনিটের এক ঝড় তুলে মেসিদের ম্যাচ থেকেও ছিটকে দিল হার্ভে রেনার্দের দল।
হারের পেছনে আর্জেন্টিনা দোষ দিতে পারে প্রযুক্তিকেও। হাতের কারণেও যে অফসাইড হতে পারে, সেটা গতকালই হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন মেসিরা। ভিএআর প্রযুক্তির সহায়তায় মেসির একটি ও লাউতারো মার্তিনেজের ২ গোল বাতিল করে দেন স্লোভেনিয়ান রেফারি স্লাভকো ভিনচিচ। তিন গোল বাতিল হলেও আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে রেখেছিল মেসির মাইলফলকের গোল। ১০ মিনিটে মেসির পেনাল্টি গোলটি ছিল একমাত্র আর্জেন্টাইন হিসেবে চার বিশ্বকাপে করা গোল।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু হতেই যেন বিপর্যয় নেমে আসে আর্জেন্টাইন রক্ষণে। হাইপ্রেসিংয়ে বারবার মেসিদের পা থেকে বল কেড়ে নিচ্ছিলেন সৌদি ফুটবলাররা। এভাবেই ৪৯ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে মেসির পা থেকে বল কেড়ে নেন ফেরাস আল ব্রিকান। তাঁর বাড়ানো বলে গায়ে লেগে থাকা ক্রিস্টিয়ান রোমেরোকে ঝেড়ে ফেলেন সালেহ আল শেহরি। এরপর বাঁ প্রান্ত ধরে তাঁর নেওয়া কোনাকুনি শটে হার মানতে বাধ্য করেন আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক মার্তিনেজকে।
৫ মিনিট পর আর্জেন্টিনাকে মাটিতে নামিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো এগিয়ে যায় সৌদি আরব। আর্জেন্টাইন ডি-বক্সের ভেতর দুই খেলোয়াড়কে কাটিয়ে চোখজুড়ানো শট নেন সালেম আল শেহরি। তাঁর শট ঠেকানোর কোনো সাধ্যই ছিল না আর্জেন্টিনার গোলরক্ষকের।
দুই গোলে পিছিয়ে পড়ার পর অসংখ্য চেষ্টা করেও গোলের দুয়ার আর খুলতে পারেনি আর্জেন্টিনা। ক্রসবারের নিচে চীনের প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন সৌদি গোলরক্ষক মোহামেদ আল ওয়াই। ৬৫ মিনিটে নিকোলাস তাগলিয়াফিকোর ভলি গোললাইন থেকে ফেরান তিনি। ৭২ মিনিটে ডি মারিয়ার শটও আটকে দেন সৌদি গোলরক্ষক। ৮৪ মিনিটে হেড নিয়েও আল ওয়াইসকে হার মানাতে পারেননি মেসি।
নকআউট পর্বে যেতে হলে মেক্সিকো ও পোল্যান্ডের শক্ত বাধা পার হতে হবে মেসিদের। ১৯৯০ বিশ্বকাপ থেকে অনুপ্রেরণা নিলে এখনো সুযোগ আছে। কিন্তু অপরাজেয় দৌড় থামার পর পরাজয়ের ক্লান্তিতেই না এখন ভেঙে পড়েন মেসি ও তাঁর সতীর্থরা।