ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

nogod
nogod
bkash
bkash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
nogod
nogod
bkash
bkash

বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পরও কাতারে থাকতে চান অভিবাসী শ্রমিকরা

আন্তর্জাতিক

আমাদের বার্তা ডেস্ক 

প্রকাশিত: ১৭:৫০, ৫ ডিসেম্বর ২০২২

সর্বশেষ

বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পরও কাতারে থাকতে চান অভিবাসী শ্রমিকরা

কাতারে যাদের শ্রমে ঘামে নির্মিত স্টেডিয়ামগুলোতে ২০২২ সালের বিশ্বকাপের আসর বসেছে, সেই অভিবাসী শ্রমিকরা আসর শেষ হয়ে যাওয়ার পরও কাতারে থাকতে চান। যদি কাতারের সরকার বিশ্বকাপ আসর শেষ হওয়ার পরও এই শ্রমিকদের বসবাস ও কাজের অনুমতি দেয়, তাহলে সেটি হবে তাদের জন্য সবচেয়ে বড় পুরস্কার।

রোববার আল বাইত স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডের কাছে ৩-০ গোলে পরাজিত হয়েছে সেনেগাল। বস্তুত সেই ম্যাচের পর এই বিশ্বকাপ থেকে আফ্রিকা মহামদেশের বিদায় আরও একধাপ এগিয়েছে। বিশ্বকাপে এখন আফ্রিকার আশা একমাত্র ধরে রেখেছে মরক্কো।

কিন্তু স্টেডিয়ামের ফ্যান জোনে বসে যেসব অভিবাসী শ্রমিক ওই ম্যাচ  উপভোগ করছিলেন, তাদের মধ্যে আফ্রিকানও ছিলেন অনেকে— সেনেগালের পরাজয়ে তাদের একদমই বিচলিত মনে হয়নি। কারণ যতই দিন এগোচ্ছে— বিশ্বকাপের আসর সমাপ্তির পর্ব ততই ঘনিয়ে আসছে এবং যে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের কারণে এই শ্রমিকরা কাতারে এসেছিলেন, নিজ দেশে ফিরে ফের একই সংকটের মধ্যে তারা পড়তে চান না কেউই।

পূর্ব আফ্রিাকার উগান্ডা থেকে আসা অভিবাসী শ্রমিক ওয়ামবাকা আইজাক রয়টার্সকে বলেন, ‘যারা কাতারে কেবল বিশ্বকাপের জন্য এসেছে, তারা এই আসর শেষ হওয়ার পর চলে যাবে; কিন্তু আমার ভবিষ্যত এখানেই ।এখনও অনেক কাজ বাকি আছে আমার।’

‘বিভিন্ন অফিস-দোকানপাট, সড়কে পরিচ্ছন্নতার কাজসহ চারদিকে প্রচুর কাজ আছে এখানে। এছাড়া কাতারে এখন নির্মাণকাজ পুরোদমে চলছে,’ রয়টার্সকে বলেন আইজাক।
রাজধানি দোহা থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে আল বাইত স্টেডিয়ামের ফ্যান জোনে নিজ দেশের দল উগান্ডা ফুটবল টিমের জার্সি পরে রোববারের ম্যাচ উপভোগ করেছেন আইজাক। তার মতো কয়েক হাজার শ্রমিকও সেদিন ফ্যান জোনে বসে ম্যাচ উপভোগ করেছেন।

মধ্যপ্রাচ্যের উপসাগরীয় অঞ্চলের ছোট দেশ কাতারের আয়তন মাত্র ১১ হাজার ৫৮১ বর্গকিলোমিটার এবং  জনসংখ্যা ২৭ লাখ ৯৫ হাজার ৪৮৪। এই জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি অভিবাসী; অর্থাৎ মূল কাতারিদের চেয়ে বর্তমানে দেশটিতে অভিবাসী লোকজনের সংখ্যা বেশি।

বিশ্বকাপ আসরের অবকাঠামোগত নির্মাণকাজসহ অন্যান্য কাজে ২০১৯ সালে দরিদ্র বিভিন্ন দেশ থেকে নতুন আরও কয়েক হাজার শ্রমিক নিয়েছে কাতার। তবে মধ্যপ্রাচ্যের এই ধনী জ্বালানিসমৃদ্ধ দেশটির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ— স্টেডিয়াম ও বিশ্বকাপের আসর সংক্রান্ত বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে শ্রমিকদের যথাযথ নিরাপত্তার ব্যাবস্থা নেওয়া হয়নি।

তবে অভিবাসী শ্রমিকরা বলেছেন, নির্মাণ কাজের সময় তাদের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল দেশটির আবহাওয়া পরিস্থিতি। কেনিয়া থেকে আগত এক অভিবাসী শ্রমিক এ সম্পর্কে রয়টার্সকে বলেন, ‘আমি নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে লুসাইল স্টেডিয়ামে কাজ করেছি। গ্রীষ্মকালে আমাদের কাজ করতে হয়েছে এবং তখন দিন ছিল বড় এবং আবহাওয়া ছিল খুব খুব গরম। কেবল আবহাওয়াগত কারণে আমি অল্প সময়ের মধ্যেই ক্লান্ত হয়ে পড়তাম।’

‘আর এখানে কাজের পরিবেশ ও শর্তও ভিন্ন। আমি একজন ঠিকাদারের অধীনে কাজ করি। তার নির্দেশে এখন ট্রাফিক মার্শাল হিসেবে কাজ করছি, যদি আগামিকাল আমাকে নির্মাণ কাজে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়— আমাকে সেখানেই যেতে হবে।’

বাড়িতে কাজ নেই

বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অভিবাসী শ্রমিক রহিম গত সাড়ে তিন বছর ধরে কাতারে আছেন। বর্তমানে দেশটিতে রাইড শেয়ার ড্রাইভারের পেশায় থাকা রহিম রয়টার্সকে বলেন, বাংলাদেশের যে গ্রাম থেকে তিনি এসেছেন— সেখানে কোনো কাজ নেই, তাই তার এখানে থাকা ব্যতীত আর কোনো উপায়ও নেই।

‘সপ্তাহের সাত দিনের প্রতিদিনই আমি কাজ করি। সারা দিনে যা উপার্জন করি, তার একটি অংশ কোম্পানিকে দিতে হয়— কারণ এই গাড়িটি আমার নয়। তারপর যা বাকি থাকে— তা থেকে নিজের থাকা-খাওয়ার খরচ মেটানোর পর বাড়িতেও কিছু অর্থ পাঠাতে হয়।’

‘মহামারির সময়ে কোনো কাজ ছিল না... তখন টিকে থাকতে খুব কষ্ট হয়েছে। আমি বাড়ি যাওয়ার জন্য অর্থসঞ্চয়ের চেষ্টা করছি। গত সাড়ে তিন বছর পরিবারের সঙ্গে দেখা নেই; কিন্তু যদি বাড়িতে যাই— সেখানেও কোনো কাজ নেই। তাই আমাকে এখানে থাকতে হবে এবং আরও অর্থ সঞ্চয় করতে হবে।’

রহিম বলেন, তিনি তার স্ত্রী ও শিশুকন্যাকে কাতারে নিয়ে আসতে চান; কিন্তু তাদের এখানে আনতে যে অর্থের প্রয়োজন— তা এখনও সঞ্চয় করতে পারেননি। এ কারণে তাদের বাংলাদেশেই থাকতে হচ্ছে।

সবার অবস্থা অবশ্য রহিমের মতো নয়। জোনাথন নামের আরেক উগান্ডান অভিবাসী শ্রমিক জানিয়েছেন— তিনি দ্রুত নিজ দেশে ফিরে যেতে চান। ‘চুক্তিপত্রে যতদিন আমার থাকার কথা, ঠিক ততদিন এখানে থাকব আমি,’ রয়টার্সকে বলেন জোনাথন।
 

জনপ্রিয়