ঢাকা শনিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৪ , ২৪ কার্তিক ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

নান মাদল সভ্যতার এক ঝলক 

আন্তর্জাতিক

আমাদের বার্তা ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:১৪, ২ অক্টোবর ২০২৩

সর্বশেষ

নান মাদল সভ্যতার এক ঝলক 

কয়েকশো বছর আগে সেখানে গড়ে উঠেছিল এক সভ্যতা। আজ শুধুই পড়ে রয়েছে ভাঙা প্রাসাদের প্রাচীর, সমাধিস্থল। দেখে চমকে ওঠেন পর্যটকেরা। ভাবেন এই জনবিরল দ্বীপে কী ভাবে গড়া হয়েছিল এই বিশাল পাথরের ইমারত?

টেমওয়েন দ্বীপে গড়ে উঠেছিল সেই নান মাদল সভ্যতা। প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিমে রয়েছে ফেডারেল স্টেটস অফ মাইক্রোনেশিয়া, যা চারটি দ্বীপরাষ্ট্র নিয়ে তৈরি হয়। চারটি দ্বীপরাষ্ট্রের মধ্যে একটি হল পহ‌্নপেই। পহ‌্নপেই দেশের মধ্যেই রয়েছে টেমওয়েন দ্বীপ, যাতে এককালে গড়ে উঠেছিল নান মাদল সভ্যতা।

টেমওয়েন দ্বীপে আজও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে কয়েকটি আয়তাকার প্রাচীর। সেই প্রাচীর এত বিশাল পাথর দিয়ে তৈরি, যা দেখে হতবাক হন পর্যটকেরা। এখনও যে ভগ্নাবশেষ পড়ে রয়েছে, সেই প্রাচীরের উচ্চতা ৩৭ ফুট। আর সেগুলো চওড়ায় প্রায় ১০ ফুট। কয়েকটি পাথরের ওজন ৬০ টনের কাছাকাছি।

প্রায়ই প্রশ্ন ওঠে, কয়েকশো বছর আগে নান মাদল সভ্যতা গড়ে তোলার সময় যন্ত্র ছাড়া এসব বিশাল পাথর নড়ানো বা তোলা কী ভাবে সম্ভব হল? এখানেই জন্ম নেয় বেশ কিছু অলৌকিক গল্প।

সে দেশের অনেকেই বলেন, টেমওয়েন দ্বীপে দুই ভাই মিলে এই সভ্যতার পত্তন করেছিলেন। তা প্রায় ১১৮০ খ্রিষ্টাব্দে।
দুই ভাইয়ের নাম ছিল ওলোসিহফা এবং ওলোসোহফা। পহ‌্নপেইয়ের পশ্চিমে কোথাও থাকতেন তাঁরা। মনে করা হয়, পহ‌্নপেইয়ে এসেছিলেন নিজেদের আরাধ্য দেবতার জন্য একটা প্রার্থনাস্থল তৈরির জন্য।

অনেক খুঁজেও প্রার্থনাস্থল তৈরির জায়গা পাননি দুই ভাই। শেষে পহ‌্নপেইয়ের এক পাহাড়ের মাথায় উঠে টেমওয়েন দ্বীপ দেখতে পান তাঁরা। তখন সেখানেই প্রার্থনাস্থল তৈরি শুরু করেন।

জনশ্রুতি রয়েছে, ওই দুই ভাই জাদুবিদ্যা জানতেন। পহ‌্নপেইয়ের অন্য এক প্রান্ত থেকে ভারী ব্যাসল্ট পাথর উড়িয়ে এনে বিশাল নান মাদল সভ্যতা গড়ে তুলেছিলেন তাঁরা।

স্থানীয়েরা আরও বলেন, নান মাদল সভ্যতার ইমারত গড়ে তোলার সময় এক ভাইয়ের মৃত্যু হয়। তখন অন্য এক ভাই সদেলিউর সাম্রাজ্য গঠন করেন।

নান মাদল সভ্যতা গড়ে উঠেছিল একেবারে সমুদ্রের ধারে। সেখানে পানীয় জল বা খাবার কিছুই ছিলো না। মনে করা হয়, দ্বীপের একেবারে ভেতরে গিয়ে পানীয় জল, খাবার সংগ্রহ করে আনতেন সাধারণ মানুষ। আর সেগুলো ভোগ করতেন সদেলিউর সম্রাটেরা।

এর পর সদেলিউর সাম্রাজ্যের পতন হয়। নাহ‌্নমওয়ার্কিস শাসন শুরু হয়। ওই শাসকেরা নিজেদের জল, খাবার নিজেরাই দ্বীপের  ভেতরে গিয়ে সংগ্রহ করে আনতেন। রোজ সেই কাজটা করা বেশ সমস্যাজনক। সে কারণে তারা নান মাদল ছেড়ে চলে যান।
মনে করা হয়, প্রাচীনকালে প্ল্যাটিনামের কফিনে নান মাদল সভ্যতার সম্রাটদের সমাধি দেওয়া হতো। সে সব কফিন সমাধিস্থ করা হতো পানির নীচে।

জনশ্রুতি, পানির নীচে সেই কফিনের হদিস পান কয়েক জন। তাঁরা ডুব দিয়ে কফিন ভেঙে সংগ্রহ করে আনতেন প্ল্যাটিনাম। সেই প্ল্যাটিনাম বিক্রি করতেন জাপানিদের কাছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে এই দ্বীপ ছিলো জাপানের অধীনে।

মূলত যে দু’জন এই জলে ডুব দিয়ে প্লাটিনাম তুলে আনতেন, তাঁদের নাকি অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। এর পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। জাপান সেই প্লাটিনামের কফিনের কথা বিস্মৃত হয়। 

নান মাদলের এই সমাধি নিয়ে আরও অনেক জনশ্রুতি রয়েছে। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে নান মাদলে ছিলো জার্মানির শাসন। সে সময় দ্বীপের গভর্নর ভিক্টর বার্গ একটি বন্ধ সমাধির ভেতর প্রবেশ করেছিলেন। তিনি নাকি বিশাল এক দৈত্যের কঙ্কাল দেখতে পেয়েছিলেন।

সেই কঙ্কালের উচ্চতা নাকি ছিলো প্রায় তিন মিটার। পরের দিন, ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ এপ্রিল রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয় বার্গের। চিকিৎসকেরা বুঝতে পারেননি, কী ভাবে তাঁর মৃত্যু হয়েছিল।

স্থানীয়দের দাবি, কোনো অতিপ্রাকৃত শক্তি ওই সভ্যতা ঘেরাও করে রেখেছে। তাঁরা তাঁদের এলাকায় হস্তক্ষেপ মেনে নেয় না। সে কারণেই নান মাদলে আর কেউ কখনও বাস করতে পারেননি। তা পরিত্যক্ত হয়েই পড়ে রয়েছে।

সূত্র: আনন্দবাজার 

জনপ্রিয়