ছবি : সংগৃহীত
দেশের ঐতিহ্যবাহী ঈদগাহ কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ১৯৮তম পবিত্র ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে এবারের ঈদের জামাতে মুসল্লির সংখ্যা তুলনামূলক কম ছিল। আজ শনিবার (৭ জুন) সকাল ৯টায় শুরু হওয়া জামাতে ইমামতি করেন মুফতি আবুল খায়ের মুহাম্মদ ছাইফুল্লাহ। প্রতিবারের মতো এবারও মাঠের রেওয়াজ অনুযায়ী বন্ধুকের ফাঁকা গুলির মাধ্যমে পবিত্র ঈদুল আজহার জামাত শুরু হয়।
মোনাজাতে তিনি দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি এবং সমৃদ্ধি কামনা করেন। এ সময় মুসল্লিদের আল্লাহ আকবরের ধ্বনিতে মুখরিত হয় নরসুন্দাপাড়ের ঐতিহাসিক প্রাচীন এ ঈদগাহ ময়দান।
জানা গেছে, কোরবানির ব্যস্ততার কারণে ঈদুল ফিতরের তুলনায় মুসল্লির সংখ্যা কম হলেও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এই ঈদেও নামাজ আদায় করতে এসেছেন অনেক মুসল্লি। এখানে ঈদের নামাজ পড়ার জন্য অনেকেই এক দিন আগে এখানে এসে পৌঁছান। ঈদগাহ পরিচালনা কমিটি এসব মুসল্লিদের থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত করেছে।
নাসির ও মকবুল নামের দুজন এসেছেন চট্টগ্রাম থেকে। তাঁরা বলেন, ‘প্রাচীন এই ঈদগাহের ঐতিহ্যের কথা শুনে বাড়িতে কোরবানির আনুষ্ঠানিকতা থাকা সত্ত্বেও এই মাঠে লাখো মুসল্লির সঙ্গে এক কাতারে শামিল হওয়ার জন্য ছুটে এসেছি। জামাতটি অনেক বড় হয়। খুব কষ্ট করে এসেছি। চার-পাঁচটা গাড়ি বদলে এসেছি। আল্লাহ যেন আমার নামাজ কবুল করেন।’
নিরাপত্তার স্বার্থে সকাল ৭টার আগে মুসল্লিদের ঈদগাহে প্রবেশ করতে দেয়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সকাল ৭টার দিকে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে প্রত্যেক মুসল্লিকে তল্লাশি করে ঈদগাহে ঢুকতে দেয়।
এদিকে শোলাকিয়া ঈদ জামাতকে ঘিরে চার স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থায় ঢাকা ছিল ঈদগাহ ময়দান। র্যাব, পুলিশের পাশাপাশি মুসল্লিদের নিরাপত্তায় ছিল দুই প্লাটুন বিজিবি। ছিলেন সেনাসদস্যরাও। অ্যাম্বুলেন্সসহ মেডিক্যাল টিম ও ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট সার্বক্ষণিক মোতায়েন ছিল। বোম ডিসপোজাল ইউনিটসহ পুলিশের কুইক রেসপন্স টিমও প্রস্তুত রাখা হয়। স্কাউটস সদস্যরা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া আনসার সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করছেন। দায়িত্ব পালন করেছেন ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। গোয়েন্দা নজরদারি ছিল। দূরের মুসল্লিদের সুবিধার্থে ঈদের দিন ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ ও ভৈরব-কিশোরগঞ্জ রুটে শোলাকিয়া এক্সপ্রেস নামে দুটি স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়। ঈদগাহ ময়দানে জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ বিশিষ্টজনেরা ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেন।
জামাত শুরুর আগে ঢাকা রেঞ্জের পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) কাজেম উদ্দিন ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজাবে রহমত দেশ-বিদেশ থেকে আগত মুসল্লিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। গত এক মাস আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ত্যাগের জন্য কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। দেশবাসীর জন্য দোয়া করার আহ্বান জানানো হয়। সমাগত মুসল্লিদের উদ্দেশে শান্তিপূর্ণ ঈদ জামাত আয়োজনে সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান। সেই সঙ্গে সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান।
ঢাকা রেঞ্জের পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) কাজেম উদ্দিন বলেন, ঈদ জামাতকে কেন্দ্র করে শোলাকিয়ায় ঈদগাহসহ আশপাশের এলাকাকে সাতটি সেক্টরে বিভক্ত করে চারটি নিরাপত্তা বলয় করা হয়েছিল। সার্বিক নিরাপত্তার জন্য পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী ও জেলা প্রশাসন মিলে একসঙ্গে কাজ করেছি। নিরাপত্তার জন্য ৫০টি মেটাল ডিটেক্টর, ৮টি আর্চওয়ে গেট, ৬৪টি সিসি ক্যামেরা, ৮টি ড্রোন ক্যামেরা, ৪টি লাইভ ক্যামেরাসহ সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজাবে রহমত বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করেছে। সমাগত মুসল্লিদের উদ্দেশে শান্তিপূর্ণ ঈদ জামাত আয়োজনে সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান। সেই সঙ্গে সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান।
স্থানীয়ভাবে প্রচলিত আছে, শাহ সুফি সৈয়দ আহমদ ঈদের জামাতের মোনাজাতে প্রাচুর্য প্রকাশে ‘সোয়া লাখ’ কথাটি ব্যবহার করতেন। অন্য একটি মতে, সেই দিনের জামাতে ১ লাখ ২৫ হাজার অর্থাৎ, সোয়া লাখ লোক জমায়েত হয়। ফলে ‘সোয়া লাখ’ থেকেই ‘শোলাকিয়া’ নামটি চালু হয়ে যায়। পরে ১৯৫০ সালে স্থানীয় দেওয়ান মান্নান দাদ খাঁ (মসনদ-ই-আলা ঈশা খাঁর ষষ্ঠ বংশধর) ঈদগাহের জন্য ৪ দশমিক ৩৫ একর জমি শোলাকিয়া ঈদগাহে ওয়াকফ করেন। প্রায় সাত একর আয়তনের মাঠটিতে ২৬৫টি কাতার রয়েছে। রেওয়াজ অনুযায়ী, শোলাকিয়ায় ঈদ জামাত শুরুর পাঁচ মিনিট আগে শটগানে তিনটি, তিন মিনিট আগে দুটি ও এক মিনিট আগে একটি গুলির আওয়াজ করা হয়। এটি নামাজ শুরু করার সংকেত বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিয়োগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।