প্রাথমিক-মাধ্যমিকের বিনামূল্যে পাঠ্যবই ছাপা ঘিরে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের ঢাকা ক্লাবে গোপন বৈঠকের চেষ্টা নস্যাৎ করে দিয়েছে প্রশাসন। ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই ছাপানোর টেন্ডার শুরু করেছে। জানা গেছে, এবারও ফাঁস হয়েছে টেন্ডারের প্রাক্কলিত দর। সেই দর জেনে কোন প্রেস কত বই ছাপার কাজ পাবে, কে কোন লটে কত দর দেবে, তা আগেই ভাগবাটোয়ারা করতে গত শুক্রবার ঢাকা ক্লাবে ‘নেগোসিয়েশন বৈঠক’ ডাকা হয়েছিল।
জনতা প্রেসের স্বত্বাধিকারী নজরুল ইসলাম কাজল ও ডিজিটাল প্রেসের মালিক ওসমান গনি বৈঠকে অংশ নিতে ১১৬ ছাপাখানার মালিককে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আজ ২২ জুন দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক সংবাদে এসব তথ্য জানা যায়।ইত্তেফাকের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, অনেকের মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে এই আমন্ত্রণ জানানো হয়। বিষয়টি গোয়েন্দা নেটওয়ার্কে ধরা পড়ে। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সিন্ডিকেটের বৈঠকটি বানচাল হয়ে যায়। আনন্দ প্রিন্টার্স লিমিটেডের মালিক এবং বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সভাপতি রাব্বানী জব্বারের এই গোপন বৈঠকে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল। সংশ্লিষ্ট সূত্র ইত্তেফাককে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
আগামী শিক্ষাবর্ষে প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে এবার ৩০ কোটি বই ছাপানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে ৪০ কোটি বই ছাপানো হয়েছিল, কিন্তু ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে ১০ম শ্রেণির জন্য ৫ কোটি ছাপানোর প্রয়োজন হবে না। কারণ নবম ও দশম শ্রেণির একই পাঠ্যবই। এছাড়া কঠোর নজরদারির কারণে এবার সারা দেশ থেকে চাহিদা কমেছে প্রায় সাড়ে ৪ কোটির বেশি বই।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের সব সেক্টর থেকে ফ্যাসিস্টদের সরানোর দাবি উঠেছে। অনেক জায়গায় রদবদলও এনেছে অন্তর্বর্তী সরকার। দীর্ঘদিন একচ্ছত্র টেন্ডারবাজি করা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ব্যতিক্রম শুধু এনসিটিবি। অভিযোগ উঠেছে, প্রতিষ্ঠানটির পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ এখনো আওয়ামী লীগের সরকারের আমলে সুবিধাভোগীদের দখলে। সিন্ডিকেট করে বই ছাপার কাজ এখনো নিজেদের কবজায় রেখেছেন তারা। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক একজন মন্ত্রীর ভাই রাব্বানী জব্বার ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে একাই পান ১ কোটি ৩৩ লাখের বেশি পাঠ্যবই ছাপার কাজ। গত ৫ আগস্টের পর সাবেক মন্ত্রীর ভাইয়ের এত সংখ্যক বই ছাপার কাজ পাওয়া নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সরকারি এ কাজের সঙ্গে যুক্তরা। রাব্বানী জব্বারের এখানো বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সভাপতি পদে থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
সম্প্রতি মতিঝিল সিটি সেন্টারে নজরুল ইসলাম কাজলের অফিসে কয়েক দফা ছাপাখানা মালিকদের ছোট/খাট গোপন বৈঠক হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।এ ব্যাপারে জনতা প্রেসের স্বত্বাধিকারী নজরুল ইসলাম কাজল ইত্তেফাককে বলেন, এই ধরনের কোনো বৈঠক হওয়ার বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। তিনি বলেন, ‘আমি কোনো সিন্ডিকেটে জড়িত না। গত ১০ বছর যারা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ব্যবসা করেছেন, তাদের ব্যাপারে আপনারা খোঁজ নেন।
তাহলে সব কিছু বেরিয়ে যাবে।’ ডিজিটাল প্রেসের মালিক ওসমান গনি অনেক ছাপাখানার মালিকের হোয়াটসঅ্যাপে গোপন বৈঠকের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে ওসমান গনির মোবাইলে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির চেয়ারম্যান রাব্বানী জব্বারের মোবাইলে তিন বার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।এদিকে পাঠ্যপুস্তক ছাপার মতো বিশাল কর্মযজ্ঞের প্রধান দায়িত্বে এখনও রয়েছেন গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের পাবলিক পরীক্ষা ধবংসের প্রধান হিসেবে শিক্ষাখাতে পরিচিত অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী। দ্বিতীয় প্রধান দায়িত্বে রয়েছেন রিয়াদ চৌধুরী। এনসিটিবিতে চেয়ারম্যান ও সদস্য পদে যোগ্য ও অভিজ্ঞদের পদায়ন চান অনেকেই। সরকারের উদাসীনতায় ক্ষতি হতে পারে কোটি শিক্ষার্থীর।
শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিয়োগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।