ফাইল ছবি
বিগত দুই দশক যদি এনসিটিবির দিকে তাকানো যায়, এমন উল্লেখযোগ্য কোনো বিষয় পাওয়া যাবেনা যার জন্য প্রশংসা করা যায়। বরং প্রতি বছরই অভিযোগ, সমস্যা ও দুর্নীতির খতিয়ানই স্ফীত হয়েছে। আমরা যখন স্কুলে পড়াশোনা করতাম আমার মনে আছে সমস্ত পাঠ্যবই সাদা ঝকঝকে পৃষ্ঠায় লেখা হতো। তখন পদার্থ, রসায়ন ও বায়োলজি বই ছিলো নবম শ্রেণি থেকে আলাদা। প্রতিটি বইয়ের কাভার, পৃষ্ঠা ও ছবিগুলো এখনো চোখের সামনে ভাসে। কত পরিষ্কার, কত সুন্দর, কত আকর্ষণীয় ছিলো! বইয়ের দাম দেখা যেতো এক টাকা পঁচিশ পয়সা, কিংবা এক টাকা পঞ্চাশ পয়সা। তখন তো এতো জটিল বিষয় বুঝতাম না, তবে এটুকু বুঝতাম যে, এতো অল্প অর্থে এতো সুন্দর বই ছাপানো সম্ভব নয়, সম্ভবত সরকার তখন সাবসিডি দিতো। বইগুলো ছাপাতো প্রাইভেট পাবলিশার্সরা, তত্ত্বাবধান করতো এনসটিবি। ফলে, বই হতো চমৎকার, দাম ছিলো কম।
আশির দশকে আমরা যখন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শুরু করি তখন থেকেই এনসিটিবির ক্রমাবনতি শুরু হয়েছে অর্থাৎ বহু বছর আগেই। বিগত সরকার এসে সবক্ষেত্রেই ক্রমাবতিকে পূর্ণমাত্রা দিয়ে গেছে। শুরু হয়েছে অত্যন্ত নিম্নমানের বই ছাপা, সাদা কাগজের পরিবর্তে নিউজপ্রিন্ট, রঙিন ছবির পরিবর্তে কালো ছবি, বই ক্রয়ের পরিবর্তে বিনামূল্যে বই, বিদেশে বই ছাপানো ইত্যাদি তথাকথিত নতুনত্ব। বুঝতে পারলাম---পুরোটাই ব্যবসা, অর্থনীতি আর রাজনীতি। আর কলুষিত রাজনীতির ধারা যেখানে পরে সেই জায়গাটি ধ্বংস হতে বাধ্য। এনসিটিবির মূল যে কাজ সেসব বাদ দিয়ে সবাই দৌঁড়াচ্ছে ঠিকাদারদের পেছনে, প্রেসে, দেন-দরবার, মন্ত্রণালয়ে ছুটাছুটি করা। বিষয়টি যখন অর্থনীতি আর ব্যবসা তখন মন্ত্রণালয় ছাড় দেবে কেনো? তারাও এনসিটিবির মতো স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানকে নিজেদের করতলগত করতে শুরু করলো।
লেখক নির্বাচন, কাগজ ক্রয়, পেজ নির্বাচন ইত্যাদি প্রতিটি বিষয়েই তারা হস্তক্ষেপ শুরু করে দিলো। এনসিটিবি ও মন্ত্রণালয়ের এসব কর্মযজ্ঞের মধ্যে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হলো শিক্ষা, শিক্ষাব্যবস্থা আর আমাদের ভবিষ্যত বংশধররা। সেদিকে কারুর কোনো ভ্রক্ষেপ ছিলো না, বলা যায় এখনও নেই। সবাই ব্যস্ত প্রেস, কাগজ, ঠিকাদার, বাই ছাপা আর বই বিতরণ নিয়ে। ২০২২ ও ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ তো তথাকথিত নতুন কারিকুলাম নিয়ে মহাখেলায় মেতেছিলো পুরো এনসিটিবি। এই খেলা অবশ্য শুরু হয়েছিলো ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে। ঐ কারিকুলাম না বুঝে শিক্ষার্থী না বুঝেন শিক্ষক। কিন্তু তারা তা চালু করবেনই কারণ পেছনে যে, অর্থ আর রাজনীতি! বই ছাপাতে আছে অর্থ, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের নামে বিরাট অঙ্কের অর্থ! এতোবড় লাভ বাদ দিয়ে তারা শিক্ষার্থী, শিক্ষক আর অভিভাবকদের কথা শুনবে যাবেন কেনো?মাছুম বিল্লাহ
এসবের একটি বাই প্রোডাক্ট হচ্ছে অত্যন্ত নিম্নমানের বই। রেশনে বই! অর্থাৎ বই সবার জন্য নয়, বই উন্মুক্ত নয়, বই থাকবে নির্দিষ্ট বাণিজ্যিক ডিলারদের কাছে। এনসিটিবির চেয়ারম্যান যিনি গোটা জাতির শিক্ষা ব্যবস্থার একজন বড় কর্ণধার অথচ তাদেরকে নিয়োগ দেয়া হয় শুধুমাত্র পার্টি সংশ্লিষ্টতা বিবেচনায়। তার শিক্ষা বিষয়ে কোনো অভিজ্ঞতা আছে কিনা, শিক্ষা সমাজে তার গ্রহণযোগ্যতা কতোটা আছে এসব কোনকিছুই বিবেচনায় নেয়া হয়নি।
এই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারীরা জাতিকে বৃহত্তর সেবা দেয়ার জন্য বছরে পাঁচটি বোনাস পান। আর প্রেস ও ঠিকাদারদের থেকে কি পান সেটা তো বুঝাই যাচ্ছে। তা না হলে ওনারা কেনো বলেন না যে, এসব এনসিটিবির কাজ নয়। তারা মহা উৎসাহে উপরোক্ত লোকদের সঙ্গে মিটিং, সিটিং, দেন-দরবার ও ছোটছুটি করে থাকেন। এনসিটিবির মূল যে কাজ, যুগোপযোগী কারিকুলাম তৈরি, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে দেখা শিক্ষর্থীদের জন্য পাঠক্রম কতটা কার্যকরী হয়েছে, কোথায় সমস্যা সেসব সমস্যা নিয়ে আলোচান করা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এসবের ধারে কাছেও তারা নেই। তারা ছোটেন মন্ত্রণালয়ে, বাংলাবাজার আর ঠিকাদারদের পেছনে আর পার্শ্ববর্তী দেশের প্রেসে। কি আনন্দ!আওয়ামী সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পরে এনসিটিবির এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি রোধ করার জন্য শিক্ষাসচিব সিদ্দিক জোবায়ের সরাসরি তত্ত্বাবধানে ছিলেন অথচ ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে কমপক্ষে ৩৩ শতাংশ শিক্ষার্থীকে নিম্নমানের পাঠ্যবই পড়তে হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে তিনি ৪জু ন প্রথমবারের মতো সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেছেন যে, আগামী শিক্ষাবর্ষে অর্থাৎ ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে আর নিম্নমানের কোনো বই থাকবেনা। এ সময় শিক্ষা উপদেষ্টাও উপস্থিত ছিলেন।
আমরা জানি ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব পদে দুই বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান। এর আগে তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের বিদ্যুৎমন্ত্রী নসরুল হামিদের পিএস ছিলেন প্রায় ছয় বছর। সচিব অত্যন্ত আশা দিয়েছেন যে, আগামী শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীরা নিম্নমানের বই পাবেননা, ভাল বই পাবেন। কিন্তু আমরা দেখছি যে, আগামী শিক্ষাবর্ষে দেশে রাজনৈতিক সরকার আসবে। তার মানে হচ্ছে উপরোল্লিখিত ব্যবসার ক্ষেত্রগুলো আরো প্রসারিত হবে কারণ পার্টি সরকারে যারা থাকবেন তাদের সাঙ্গ-পাঙ্গদের তো কাজ দিতে হবে। তারা আবার ঐসব জায়গাগুলো ও ব্যবসার ক্ষেত্রগুলোকে পুনর্জীবিত করবেন।প্রতিবছরই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে গছিয়ে দেয়া হয় নিম্নমানের পাঠ্যবই কারণ এতে সবারই লাভ থাকে, ধ্বংস হয় শিক্ষা। তাতে তাদের আরো লাভ! নতুন শিক্ষা সচিব গত ডিসেম্বরে নিজের অফিস ছেড়ে বেশিরভাগ সময় মতিঝিলের এনসিটিবি অফিসে কাজের তদারকি করেছেন। তবে এসব পুস্তক ও কাগজ ব্যবসায়ীদর অধিকাংশই আওয়ামীপন্থি। শিক্ষামন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত এনসিটিবির দরপত্রে বইয়ের উজ্জলতার জন্য নির্দিষ্ট মান থাকলেও অনেক মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান সেটি অনুসরণ করেনি। এসব বই বাধাঁইয়ের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের গাম। পাঠ্যবইয়ের প্রচ্ছদ ও পৃষ্ঠা সংখ্যার ক্ষেত্রেও করা হয়েছে নয়ছয়।
এমন অনিয়ম, অসংগতিতে ভরা অন্তত ৩৩ শতাংশ নিম্নমানের বই প্রাথমিক ও মাধ্যমিরক স্তরের শিক্ষার্থীদের দেয়া হয়েছে। প্রাপ্ত হিসেবে দেখা যায়, ৪০ কোটি বইয়ের মধ্যে ১৩ কোটি বইয়ের মানই খারাপ। এসব বই ছাপিয়ে সরকারের কোটি কোটি টাকা বিলের নামে তুলে নেয়া হয়েছে। আবার অনেক মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান যথাসময়ে বই সরবারহ করেনি। এতে শিক্ষার্থীরা বেশ ভালোই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সূত্র জানায় কিছু মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান, এনসিটিবি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে বই নিয়ে এমন অনিয়ম করা হয়েছে। ৩০টির বেশি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।এনসিটিবি জানায় এবার খারাপ বই ছাপানোর কারণে ২০টি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেয়া হয়েছে। তারা দরপত্রের মান ঠিক রেখে আবার শিক্ষার্থীদের বই রিপ্লেস করবে। যদি সেটি সম্ভব না হয়, তাদের অর্থদণ্ড করা হবে। এরপরও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে কালো তালিকাভূক্ত করা হবে। ২০১৮ থেকে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ৬ বছর বিনামূল্যে বই ছাপাতে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। এনসিটিবি বাধ্য হয়ে বিভিন্ন পর্যাযের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ৩২টি টিম ৬৪ জেলার মাঠ পর্যায়ে পাঠায়। টিমগুলো প্রতিট জেলার একটি উপজেলা থেকে দৈবচয়ন পদ্ধতিতে বই সংগ্রহ করে। ৪৭টি জেলার বই সংগ্রহ থেকে দেখা যায় ৩৩ শতাংশ বই নিম্নমানের প্রাপ্ত হিসেবে ৪০ কোটি বইয়ের মধ্যে ১৩ কোটি বই নিম্নমানের।
এছাড়া বইয়ের মান যাচাই করতে ‘হাই-টেক সার্ভে অ্যান্ড ইনস্পেকশন সার্ভিস’ নামে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানকে বই ছাপার পরের মান যাচাইয়ের জন্য নিয়োগ দেয় এনসিটিবি। ওই প্রতিষ্ঠানটিও মাঠ পর্যায় থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পরীক্ষা করেছে। তাদের প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, সারা দেশে দৈবভাবে সংগ্রহ করা ৩ লাখ ১৯ হাজার নিম্নমানের বইয়ের মধ্যে ২০ শতাংশ নিম্নমানের। ‘অক্সফোর্ড প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন’ এর ইবতেদায়ি তৃতীয় শ্রেণির বিজ্ঞান বইটি নিম্নমানের। দরপত্রের নির্ধারিত মান অনুযায়ী কাগজের মান ৮০ জিএসএমর( গ্রাম পার স্কয়ার মিটার) পরিবর্তে এতে ৭৩ জিএসএম ব্যবহার করা হয়েছে। ‘রেদওয়ানিয়া প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন’ এর ভোকেশনাল নবম শ্রেণির জেনারেল মোকানিক্স বইয়ে ৭০ জিএসএমের পরিবর্তে ৬৫ জিএসএম কাগজ ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, অনুপম প্রিন্টার্স মাধ্যমিকের নবম শ্রেণির রসায়ন বইয়ে ৭০ জিএসএমের পরিবর্তে ৬১ জিএসএম, শাফিন প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন মাধ্যমিক ভোকেশনাল ৭ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বইয়ে মান ৭০ জিএসএমর পরিবর্তে ৫৯ জিএসএম, সুবর্ণা প্রিন্টার্স মাধ্যমিকের নবম শ্রেণির গণিত বইয়ের নির্ধারিত মান ৭০ জিএসএমের পরিবর্তে ৫৫ জিএসএম, অ্যারিস্টোক্র্যাসটস সিকিউরিটি প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকের্জি দাখিল ৬ষ্ঠ শ্রেণির আকাইত বইয়ের নির্ধারিত মান ৭০ জিএসএমের পরিবর্তে ৫৬ জিএসএম, লেটার এন কালার লি. ইবতেদায়ি প্রথম, দ্বিতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির বইয়ের নির্ধারিত মান ৮০জিএসএমের পরিবর্তে ৭০ জিএসএম, বর্ণমালা প্রেস মাধ্যমিকের নবম শ্রেণির ব্যবসায় উদ্যোগ বইয়ের নির্ধারিত ৭০জিএসএমের পরিবর্তে ৫৮ জিএসএম,
ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস দাখিল নবম শ্রেণির গণিত বইয়ের নির্ধারিত মান ৭০ জিএসএম পরিবর্তে ৬৩ জিএসএস ব্যবহার করা হয়েছে। বর্ণমালা নবম শ্রেণির জীববিজ্ঞান বইয়ের নির্ধারিত মান ৭০জিএসএমএর পরিবর্তে ৬০ জিএসএম, দোয়েল প্রিন্টার্স দাখিল দশম শ্রেণির উচ্চতর গণিত বইয়ের নির্ধারিত মান ৭০ জিএসএমের পরিবর্তে সাড়ে ৬৫ জিএসএম, দ্য গুডলাক ইবতেদায়ি চতুর্থ শ্রেণির কুরআন মজিদ ও তাজভিদ শিক্ষা বইয়ের নির্ধারিত মান ৮০জিএসএমের পরিবর্তে ৭১ জিএসএম ব্যবহার করা হয়েছে। এসব নিম্নমান বই ছাপানোর নেপথ্যে উৎপাদন ও বিতরণ শাখার কিছু কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলেও জানা গেছে।দৈনিক শিক্ষাডটকমের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে দেখা যায়, রাঙামাটির বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা বেশিরভাগ বই নিম্নমানের কাগজের। এতে দেখা যায, ‘কাশে অ্যান্ড রহমান প্রিন্টিং প্রেসে’র নবম-দশম শ্রেণির গণিত বইয়ে নিম্নামানের কাগজ ব্যবহার করা হয়েছে। অন্যদিকে লক্ষীপুরের কমলনগরে ৬৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ২২টি মাধ্যমকি বিদ্যালয় থেকে সরেজমিন তথ্য সরবরাহ করা হয়। দেখা যায়, প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সবকটি পাঠ্যবই মুদ্রণে ৮০ জিএসএমের কাগজের পরিবর্তে ৬০ জিএসএমে ছাপানো হয়েছে। প্রথামিকের শিক্ষার্থীদের জন্য আমরা বাংলা বই, ইংলিশ ফর টুডে, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, প্রাথমিক গণিত বইগুলো ৬০ গ্রামের (ড্যাম) কাগজে ছাপানো হয়। মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান এসএস প্রিন্টার্স বইগুলো ছাপিয়েছে।
অন্যদিকে প্রথম শ্রেণির আমার বাংলা বই, দ্বিতীয় শ্রেণির ইংলিশ ফর টুডে, গণিত, তৃতীয় শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় পাঠ্যবইগুলো শাপলা প্রিন্টার্স এবং পঞ্চম শ্রেণির বইগুলো অগ্রণী প্রিন্টার্স নামক একটি প্রতিষ্ঠান ছাপিয়েছে। এ ছাড়া মাধ্যমিকের জন্য যথাক্রমে চারুপাঠ, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, বিজ্ঞান, শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য, ইংলিশ ফর টুডে, কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা, গণিত, কৃষি শিক্ষা, আনন্দপাঠ, চারু ও কারুকলা, বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ও ইসলাম শিক্ষাসহ সৃষ্ট ১৪টি পদেও বই ছাপিয়েছে মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান অনন্য প্রিন্টার্স। সব বইতেই নিম্নমানের ৬০ গ্রামের ড্যাম কাগজ ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির জন্য ছাপানো বইগুলোতেও ৬০ গ্রামের নিম্নামানের ড্যাম কাগজ ব্যবহার করা হয়েছে।
এতো এতো দুর্নীতি, সিন্ডিকেট, অসততা এবং ব্যবসা যেখানে জড়িত সেখানে আমরা সচিব মহোদয়ের আশ্বাসের ওপর কতটা নির্ভর করতে পারি? তারপর রাষ্ট্র ক্ষমতায় পার্টি সরকার আসার অপেক্ষায়। সবকিছু বিবেচনায় এনসিটিবি কি আসলেই রাহুর গ্রাস থেকে মুক্তি পাবে? আর আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা তাদের হাতে সময়মতো মানসম্পন্ন বই পাবেন? সময়ই বলে দেবে সবকিছু।
লেখক: ক্যাডেট কলেজের সাবেক শিক্ষক