দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ
দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ এর মৃত্যুবার্ষিকী আজ। সি.আর দাশ নামে তিনি বেশি পরিচিত এবং সাধারণ্যে দেশবন্ধু বলে আখ্যায়িত। তিনি বিশ শতকের বাংলার সবচেয়ে প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের অন্যতম। চিত্তরঞ্জন দাশ ১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দের ৫ নভেম্বর কলকাতায় এক উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাদের আদি বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলার বিক্রমপুরে। তার পিতা ভূবনমোহন দাশ কলকাতা হাইকোর্টে ‘সলিসিটা’র ছিলেন।
প্রথম জীবনে সি আর দাস ভবানীপুরের (কলকাতা) লন্ডন মিশনারি সোসাইটির ইনস্টিটিউশনে শিক্ষা লাভ করেন। ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি এন্ট্রান্স পরীক্ষা পাস করেন এবং কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর ইংল্যান্ডে গিয়ে ইনার টেম্পলে যোগদান করেন এবং ১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দে ব্যারিস্টার হন। ঐ একই বছর তিনি ভারতে ফিরে আসেন এবং কলকাতা হাইকোর্টে ব্যারিস্টার হিসেবে নিজের নাম তালিকাভুক্ত করেন। ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে অরবিন্দ ঘোষের বিচার সি.আর দাশকে পেশাগত মঞ্চের সম্মুখ সারিতে নিয়ে আসে। তিনি এমন চমৎকারভাবে কেসটির পক্ষসমর্থন করেন যে অরবিন্দকে শেষ পর্যন্ত বেকসুর খালাস দেয়া হয়।বিশ শতকের প্রথম দিকে সি.আর দাশ রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। অনুশীলন সমিতির মতো বিপ্লবী সংগঠনের সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন। এস.এন ব্যানার্জী, বি.সি পাল ও অরবিন্দ ঘোষের সহকর্মী হিসেবে তিনি বঙ্গভঙ্গ (১৯০৫)-কে বাংলায় বিপ্লবী কর্মকাণ্ড বিস্তৃত করতে সদ্ব্যবহার করেন। ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে ভবানীপুরে অনুষ্ঠিত বাংলার প্রাদেশিক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন তিনি। অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে এম. কে গান্ধীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে আইনজীবীর পেশা পরিত্যাগ করেন এবং ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে প্রিন্স অব ওয়েলসের কলকাতা সফর বর্জনে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেন। সরকার তাকে অনেকবার কারাগারে অন্তরীণ করে।
গান্ধী যখন অসহযোগ আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করেন তখন সি.আর দাশ তার তীব্র সমালোচনা করেন এবং বিষয়টিকে গুরুতর ভুল বলে নিন্দা করেন। তার মতে, গান্ধীর এ কাজ রাজনৈতিক কর্মীদের মনোবল বহুল পরিমাণে কমিয়ে দেয়। ঐ চরম সংকটপূর্ণ সময়ে তিনি পরিষদে প্রবেশ কর্মসূচি অর্থাৎ পরিষদের অভ্যন্তরে অবস্থান নিয়ে অসহযোগ চালিয়ে যাবার সূত্র নিয়ে এগিয়ে আসেন। কংগ্রেসের আইন পরিষদ বর্জনের নীতিকে তিনি দৃঢ়ভাবে বিরোধিতা করেন। তিনি মনে করতেন যে, সরকারকে অবিচল, অবিচ্ছিন্ন ও দৃঢ়ভাবে বাধাদানের উদ্দেশ্যে আইন পরিষদে প্রবেশাধিকার অর্জন করা অবশ্যই প্রয়োজন। ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে গয়ায় অনুষ্ঠিত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশনে পরিষদে প্রবেশ সংক্রান্ত তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হয়। অতঃপর তিনি কংগ্রেসের সভাপতির পদে ইস্তফা দেন এবং পণ্ডিত মতিলাল নেহরু, হাকিম আজমল খান, আলী ভ্রাতৃদ্বয় ও অন্যান্যদের সহযোগিতায় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে স্বরাজ্য দলের ভিত্তি স্থাপন করেন। ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় বিধান পরিষদের নির্বাচনে স্বরাজ দল উল্লেখযোগ্য বিজয় অর্জন করে।১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা কর্পোরেশন এর নির্বাচনে স্বরাজবাদী বিজয় অর্জন করে এবং সি.আর দাশ প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন। পরবর্তী মেয়াদের জন্যও তিনি পুনর্নিবাচিত হন। ১৯২৩ ও ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে যথাক্রমে লাহোর ও কলকাতায় অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত শ্রমিক ইউনিয়নের কংগ্রেসে তিনি সভাপতিত্ব করেন। ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে ফরিদপুরে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় প্রাদেশিক সম্মেলনে তিনি সভাপতিত্ব করেন। ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি স্বরাজ্য দলের মুখপত্র হিসেবে সাপ্তাহিকী দ্য ফরওয়ার্ড প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কলকাতা কর্পোরেশনের মুখপত্র মিউনিসিপ্যাল গেজেটও প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি জাত-বৈষম্য ও অস্পৃশ্যতার ঊর্ধ্বে ছিলেন। তিনি নারী মুক্তি সমর্থন করতেন এবং নারী-শিক্ষা ও বিধবাদের পুনর্বিবাহকে উৎসাহিত করতেন। তিনি যে অসবর্ণ বিবাহের পক্ষে ছিলেন তার প্রমাণ মিলে তার নিজ কন্যাদের ব্রাহ্মণ ও কায়স্থ পরিবারে বিবাহ দানের ঘটনায়। ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ পরলোকগমন করেন।
শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিয়োগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।