এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি নীতিমালায় বৈষম্য | মতামত নিউজ

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি নীতিমালায় বৈষম্য

তাহলে আবার কেন নারী-পুরুষের আলাদা আলাদা সুযোগ রাখা হলো? বদলি নীতিমালা সমন্বয় করে নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য পুরো চাকরিজীবনে তিনবার বদলির সুযোগ রাখা উচিত বলে মনে করি।

#এমপিওভুক্ত #শিক্ষক #বদলি

বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলির দাবি দীর্ঘদিনের। বদলি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সাধারণ স্কুল-কলেজ, কারিগরি ও মাদরাসার শিক্ষকদের জন্য সম্প্রতি বদলি নীতিমালা প্রকাশ করা হয়েছে।

সবশেষ কারিগরি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ। এর আগে প্রকাশ করা হয় সাধারণ স্কুল-কলেজ ও মাদরাসার বদলি নীতিমালা।

পুরো বদলি প্রক্রিয়া অনলাইনে সেপ্টেম্বর-জানুয়ারি এই সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে নীতিমালায় বলা হয়েছে। কারিগরি, সাধারণ স্কুল-কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে তিন ক্যাটাগরির বদলি নীতিমালায় কিছু কিছু ধারায় সমন্বয়হীনতা স্পষ্ট।

এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে অসামঞ্জস্য ও অযৌক্তিক বিধান রয়েছে বলে মনে হয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন বদলি নীতিমালায় যেসব সমন্বয়হীনতা ও অযৌক্তিক বিধান রয়েছে তা অবশ্যই আলোচনার দাবি রাখে।

বদলির সুযোগ কতবার: কারিগরি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালায় নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে পুরো চাকরিজীবনে সব শিক্ষকের জন্য তিনবার বদলির সুযোগ রাখা হয়েছে।

অপরদিকে সাধারণ স্কুল-কলেজ ও মাদরাসায় নারী শিক্ষকদের জন্য তিনবার ও পুরুষদের জন্য দুইবার বদলির সুযোগ রাখা হয়েছে। এটা রীতিমতো বৈষম্য ও অসামঞ্জস্য। সম্প্রতি নিয়োগের ক্ষেত্রে নারী কোটা উঠিয়ে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারী-পুরুষ বৈষম্য দূর করা হয়েছে।

তাহলে আবার কেন নারী-পুরুষের আলাদা আলাদা সুযোগ রাখা হলো? বদলি নীতিমালা সমন্বয় করে নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য পুরো চাকরিজীবনে তিনবার বদলির সুযোগ রাখা উচিত বলে মনে করি।

নিজ জেলা বা বিভাগ সমস্যা: কারিগরি শিক্ষকদের বদলির নীতিমালায় নিজ জেলা বা বিভাগের কথা উল্লেখ নেই। সহজ করে বললে, কারিগরি শিক্ষকরা সারাদেশের যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বদলি হতে পারবেন।

অন্যদিকে সাধারণ স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা বদলি নীতিমালায় নিজ জেলা বা বিভাগে বদলির কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিচার-বিশ্লেষণ করে কারিগরি শিক্ষক নীতিমালা তুলনামূলক অধিক যৌক্তিক মনে হয়েছে।

যেখানে পুরো চাকরিজীবনে বদলির সুযোগ (তিনবার বা দুইবার) নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে সেখানে নিজ জেলা বা বিভাগ রাখা উচিত নয়।

তাছাড়া কোনো শিক্ষক নিজ জেলায় বা বিভাগে যেতে চাই তাহলে তিনি স্বাভাবিকভাবে সেখানেই বদলির আবেদন করবেন। বরং নিজ জেলা বা বিভাগের মতো শর্ত বদলির সুযোগকে আরো জটিল ও বাধাগ্রস্ত করে তুলবে।

কেননা স্বামী-স্ত্রীর উভয়ের চাকরির সুযোগে নিজ জেলা বা বিভাগের বাইরে স্বামী বা স্ত্রীর কর্মস্থলে যেকারো বদলির প্রয়োজন হতে পারে। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সঙ্গে সাধারণ স্কুল-কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষকদের এ ধরনের বদলি বৈষম্য কাম্য নয়।

একটি প্রতিষ্ঠান থেকে কতজন বদলি: কারিগরি শিক্ষকদের বদলির নীতিমালায় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বছরে দুইজন শিক্ষকদের বদলির সুযোগ রাখা হয়েছে।

অন্যদিকে সাধারণ স্কুল-কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষকদের জন্য একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে একজন শিক্ষক বদলি হতে পারবেন বলে নীতিমালায় বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে কারিগরি শিক্ষক নীতিমালার দুইজন বদলির সুযোগ অধিক যৌক্তিক ও সামঞ্জস্য মনে হয়েছে।

যেহেতু প্রতিবছর নিয়োগ ও বদলি স্বাভাবিকভাবে চলবে সেহেতু একটি প্রতিষ্ঠান থেকে দুইজন বদলির সুযোগে প্রতিষ্ঠানে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে বলে মনে হয় না।

বদলির আবেদনে অগ্রাধিকার: কারিগরি বদলি নীতিমালায় একটি শূন্য পদে একাধিক আবেদনে পাওয়া গেলে প্রথমে নারী, স্বামী/স্ত্রীর কর্মস্থল, জ্যেষ্ঠতা ও দূরত্ব অনুসারে বদলি আবেদন বিবেচনার কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে সাধারণ স্কুল-কলেজ বদলি নীতিমালায় প্রথমে জ্যেষ্ঠতা, নারী ও দূরত্ব বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।

যেখানে চাকরির নিয়োগের (নারী কোটা বাদ) ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ বৈষম্য উঠিয়ে দেয়া হয়েছে সেখানে নারী-পুরুষ বিবেচনায় আলাদা সুযোগ রাখা কতোটা যৌক্তিক? নারী-পুরুষ বৈষম্য না রেখে সমন্বয় করে বদলিতে প্রথমে জ্যেষ্ঠতাকে প্রাধান্য দেয়া উচিত। জ্যেষ্ঠতাকে প্রাধান্য দিলে নারী-পুরুষ সবাই সমান সুযোগ পাবে বলে মনে করি।

বদলিকৃত শিক্ষকের জ্যেষ্ঠতাক্রম: কারিগরি নীতিমালায় বদলি হওয়া শিক্ষকের জ্যেষ্ঠতায় বলা হয়েছে, তিনি বদলিকৃত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকার জ্যেষ্ঠতাক্রমের নিচে অবস্থান করবেন।

অপরদিকে সাধারণ স্কুল-কলেজ বদলি নীতিমালায় জ্যেষ্ঠতার ধারাবাহিকতা পূর্ববৎ বজায় থাকবে বলে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে সাধারণ স্কুল-কলেজের বদলি নীতিমালার ধারা যৌক্তিক বলে মনে হয়েছে।

বদলি হলেও স্বাভাবিকভাবে জ্যেষ্ঠতার ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে- এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কারিগরি শিক্ষকদের বেলায় কেন বদলিকৃত প্রতিষ্ঠানে জ্যেষ্ঠতাক্রমের নিচে (বদলিকৃত প্রতিষ্ঠানের) অবস্থান করতে হবে?

একজন সিনিয়র শিক্ষক বদলি হয়ে কী বদলিকৃত প্রতিষ্ঠানের জুনিয়র শিক্ষকের নিচে অবস্থান করবেন? এক্ষেত্রে বদলিকৃত প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের জ্যেষ্ঠতা বজায় রাখাটাই যৌক্তিক সমাধান।

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের (সাধারণ স্কুল কলেজ, মাদরাসা, কারিগরি) ভিন্ন ভিন্ন নীতিমালায় বদলির ক্ষেত্রে কোনো প্রকার বৈষম্য কাম্য নয়।

নীতিমালায় যে ধারাটি যৌক্তিক ও সামঞ্জস্যপূর্ণ সেটিই সবার ক্ষেত্রে গ্রহণ করা উচিত। উল্লেখিত যে পাঁচটি ধারায় বৈষম্য লক্ষ করা যাচ্ছে তা যৌক্তিকভাবে সমন্বয় করে আসন্ন বদলির পূর্বেই সমাধান কাম্য।

লেখক: শিক্ষক

#এমপিওভুক্ত #শিক্ষক #বদলি