বিশিষ্ট সমাজ সংস্কারক ও শিক্ষাবিদ উমেশচন্দ্র দত্তের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। উমেশচন্দ্র দত্তের জন্ম পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার মজিলপুরে । পিতার নাম হরমোহন দত্ত । ১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে ভবানীপুর লণ্ডন মিশনারি সোসাইটি ইনস্টিটিউশন থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন।
ওই বছরেই তিনি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কেশবচন্দ্র সেনের সান্নিধ্যে এসে ব্রাহ্ম ধর্ম গ্রহণ করেন। পরে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন, কিন্তু অর্থাভাবে পড়াশোনা বন্ধ রাখেন। ১৮৬২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে রাজপুর, হরিনাভিসহ বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন ।
১৮৬৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রাইভেটে বিএ পাস করেন। এই বছরেই ব্রাহ্মমতে বিয়ে হয় এবং সপরিবারে কেশবচন্দ্র সেনের ‘ভারত আশ্রম’ ভুক্ত হন। সেই সঙ্গে শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক বিভিন্ন কাজে যোগদান করেন ।
১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতায় সিটি স্কুল প্রতিষ্ঠিত হলে উমেশচন্দ্র তার প্রধান শিক্ষক এবং ১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দে সিটি কলেজ প্রতিষ্ঠার সময় থেকে আমৃত্যু তার অধ্যক্ষ ছিলেন।
তিনি মজিলপুরে দক্ষিণ ২৪ পরগণার প্রথম এবং সম্ভবত পশ্চিমবঙ্গের তৃতীয় বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন। এই বিদ্যালয় স্থাপন করবার জন্য তাকে জমিদারের প্রবল অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছিলো। ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি তার তিন বন্ধু যামিনীনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রীনাথ সিংহ ও মোহিনীমোহন মজুমদারের সহায়তায় কলকাতার মানিকতলায় মূকবধির বিদ্যালয় স্থাপন করেন ও তার সম্পাদক নিযুক্ত হন ।
১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে কেশববিরোধী সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজ প্রতিষ্ঠায় উমেশচন্দ্রের অগ্রগণ্য ভূমিকা ছিলো। শিবনাথ শাস্ত্রীর কথা অনুযায়ী সেসময় সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজে যে তিনজন আদর্শবাদী মানুষ ছিলেন তারা হলেন আনন্দমোহন বসু, শিবচন্দ্র দেব ও উমেশচন্দ্র দত্ত । উমেশচন্দ্র সেসময় সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজের সম্পাদক ও সভাপতি ছিলেন ।
সেসময় বাংলায় নারীশিক্ষা খুবই অবহেলিত ছিলো। উমেশচন্দ্র দত্ত ১৮৬৩ খ্রিষ্টাব্দে বাংলার নারীদের মধ্যে শিক্ষার আলো এবং সচেতনতা আনার জন্য এবং তাদের মনের কথা তুলে ধরার জন্য একটি মহিলা মাসিক পত্রিকা বামাবোধিনী প্রকাশ করেন ।
এই পত্রিকাটি তিনি আমৃত্যু সম্পাদনা করেন। এছাড়া ১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দে দুটি গ্রন্থও প্রকাশ করেন –‘বামারচনাবলী’ ‘স্ত্রীলোকদিগের বিদ্যার আবশ্যকতা’।
উমেশচন্দ্র কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ছিলেন । শিলাইদহে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের সমাধিতে ‘দাঁড়াও পথিকবর, জন্ম যদি তব ....’ খোদিত ফলকটি তার উদ্যোগেই স্থাপিত হয়েছিলো। ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে তিনি পরলোকগমন করেন।