ছবি : দৈনিক শিক্ষাডটকম
বেলজিয়ামে ইউরোপীয় মুসলিম আমব্রেলা সংগঠনগুলো ‘গাজা ঘোষণাপত্র’ পেশ করেছে। স্থানীয় সময় গত বুধবার (৯ জুলাই) রাজধানী ব্রাসেলস প্রেস ক্লাবে আয়োজিত একটি সংবাদ সম্মেলনে এটি পেশ করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন এক্সেকিউটিভ বডি অফ মুসলিমস ইন বেলজিয়ামের প্রেসিডেন্ট মেহমেত উস্তুন।
এ সময় ইংলিশ, জার্মান ও ফ্রেঞ্চ ভাষায় পশ্চিম ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মুসলিম আমব্রেলা সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেন, ইউরোপের ১৫ হাজারের বেশি মসজিদ ও ইসলামিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্বকারী মুসলিম সংগঠনগুলো গাজায় চলমান মানবিক সঙ্কট ও যুদ্ধাপরাধ বন্ধে অভিন্ন কণ্ঠে প্রতিবাদ জানিয়েছে।
যৌথ এক বিবৃতিতে তারা যুদ্ধবিরতি, মানবিক সহায়তা, আন্তর্জাতিক আইন রক্ষা এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্বীকৃতির আহ্বান জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, গাজায় ইসরাইলি সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত ৫৮ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। নিখোঁজ রয়েছেন বহু মানুষ। ধ্বংস হয়ে গেছে সম্পূর্ণ পাড়া-মহল্লা, খাদ্য ও পানির জন্য সংগ্রামে প্রাণ হারাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। মানবিক সহায়তা ইচ্ছাকৃতভাবে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে, যা দুঃখজনকভাবে দুর্ভিক্ষের রূপ নিচ্ছে।
আরো বলা হয়, হতাহত বেসামরিক মানুষ হোক হামাস কিংবা অন্য কারো হাতে—নির্দোষ প্রাণহানি কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। তারা যুদ্ধবিরতি, বন্দি মুক্তি, মানবিক সহায়তার প্রবেশাধিকার এবং দুই রাষ্ট্রভিত্তিক শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানায়।
বিবৃতিতে আরো উল্লেখ করা হয়, গাজায় কেবল যুদ্ধ নয়; বরং সংগঠিতভাবে অবকাঠামো ও জীবিকা ধ্বংস করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ ও জাতিসঙ্ঘ এটি ‘গণহত্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করছে। এই মানবাধিকার লঙ্ঘন অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
তারা জানায়, মানবিক সহায়তা এখন ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ নামক এক কাঠামোর মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে, যা সহায়তার প্রবাহ কমিয়ে এবং উত্তর গাজা থেকে মানুষ সরাতে চাপ সৃষ্টি করছে। এমন সহায়তা কাঠামো সঙ্কটকে আরো গভীর করছে।
পশ্চিম তীরে দখল, ভূমি কেড়ে নেয়া ও অবৈধ বসতি গড়ে তোলা—এসবই আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। অথচ এসবের বিপরীতে ইউরোপের বহু দেশের প্রতিক্রিয়া কেবল প্রতীকী, কার্যত কোনো কঠোর পদক্ষেপ দেখা যায় না। এই অবস্থায় প্রশ্ন ওঠে—মানবাধিকারের প্রতি যারা অঙ্গীকারবদ্ধ, তারা কিভাবে এমন চুপচাপ অবস্থান নিতে পারে?
ইসরাইলের শীর্ষ পর্যায়ের রাজনীতিবিদদের গাজা স্থায়ীভাবে দখলের বা ফিলিস্তিনিদের বিতাড়নের বক্তব্য নিয়েও উদ্বেগ জানানো হয়। এর লক্ষ্য যেন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনা ধ্বংস করা হয়।
এই পরিস্থিতিতে তারা বেশ কিছু দাবির কথা উল্লেখ করেন। সেগুলো হলো- অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং গণহত্যা বন্ধ। সব বন্দি ও আটক ব্যক্তির মুক্তি। মানবিক সহায়তার বাধাহীন প্রবেশ। আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘনে ব্যবহৃত সম্ভাব্য অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত। গাজায় সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার এবং নিরাপত্তা। ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি ও দুই রাষ্ট্রভিত্তিক টেকসই শান্তির ভিত্তি।
গাজায় গণহত্যা বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ এই প্রেস কনফারেন্সে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোর সকল মুসলিম কমিউনিটির নেতৃত্বাধীন সর্ববৃহৎ আমব্রেলা সংগঠন ইসলামিক রিলিজিয়াস অথরিটি ইন অস্ট্রিয়ার (আইজিজিও) পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন রিলিজিয়াস অথরিটির সুপ্রিম কাউন্সিল মেম্বার ও এশিয়ান ইসলামিক কমিউনিটির চেয়ারম্যান বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত প্রকৌশলী হাসিম মোহাম্মেদ, এক্সেকিউটিভ বডি অফ মুসলিমস ইন বেলজিয়ামের (ইএমবি) প্রেসিডেন্ট মেহমেত উস্তুন, ডেনিশ মুসলিম ইউনিয়নের (ডিএমইউ) পক্ষে আহমেদ ডেনিজ, ফ্রেঞ্চ কাউন্সিল ফর ইসলামের (সিএফসিএম) ইব্রাহিম আলসি , কোঅর্ডিনেশন কাউন্সিল অফ মুসলিমস ইন জার্মানির (কেআরএম) পক্ষে জেকেরিয়া আলতুগ, ইউনিয়ন অফ ইসলামিক কমুনিটিজ অ্যান্ড অর্গানিজশন্স অফ ইতালির (ইউসিওআইআই) পক্ষে ইয়াসিন বাড়াদাই, ইসলামিক কাউন্সিল অফ নরওয়ের (আইআরএম) পক্ষে মাসুম জুবাইরসহ অন্যান্য ইউরোপিয়ান মুসলিম নেতৃবৃন্দ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অসংখ্য সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিয়োগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।