অনন্য সাওয়াবের আশুরার রোজা | মতামত নিউজ

অনন্য সাওয়াবের আশুরার রোজা

রোজা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত।‌ এর মাধ্যমে আত্মসংযম, তাকওয়া ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জন হয়।

#রোজা #আশুরা #ইসলাম

হিজরি সনের প্রথম মাস মুহাররম। মর্যাদাপূর্ণ চারটি মাসের অন্যতম মাস। পবিত্র কোরআনের পাশাপাশি হাদিসেও এ মাসের গুরুত্ব বর্ণিত হয়েছে। আবু বাকরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ যেদিন আসমান জমিন সৃষ্টি করেছেন, সে দিন থেকে সময় যেরূপে আবর্তিত হচ্ছিল আজও তা সেরূপে আবর্তিত হচ্ছে। বারো মাসে এক বছর। এর মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। জিলকদ, জিলহজ ও মুহাররম তিনটি মাস পরপর রয়েছে। আর এক মাস হল রজব-ই-মুজারা, যা জুমাদা ও শাবান মাসের মধ্যে অবস্থিত। (বুখারি শরিফ : ৩১৯৭) মুহাররম মাসে বিশেষ একটি আমল হলো রোজা রাখা। এ সম্পর্কে অনেক হাদিস পাওয়া যায়।

আশুরার গুরুত্ব ও তাৎপর্য

রোজা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত।‌ এর মাধ্যমে আত্মসংযম, তাকওয়া ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জন হয়। কিন্তু আশুরার রোজার বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্ন। যুগে যুগে এই রোজার আমল প্রচলিত ছিল। তাই রাসুলুল্লাহ (সা.) গুরুত্ব দিয়ে আশুরার রোজা রাখতেন। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় আগমন করে দেখতে পেলেন যে, ইহুদিরা আশুরার দিনে রোজা রাখে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কি ব্যাপার? (তোমরা এ দিনে রোজা রাখ কেন?) তারা বলল, এ অতি উত্তম দিন। এ দিনে আল্লাহ তায়ালা বনি ইসরাইলকে তাদের শত্রুর কবল থেকে মুক্তি দেন, ফলে এ দিনে মুসা (আ.) রোজা পালন করতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, আমি তোমাদের অপেক্ষা মুসার অধিক নিকটবর্তী। এরপর তিনি এ দিনে রোজা পালন করেন এবং রোজা পালনের নির্দেশ দেন। (বুখারি শরিফ : ২০০৪)

আশুরার রোজা

মুহাররমের প্রথম ১০ দিন সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে বেশি বেশি রোজা রাখতে হয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে জিজ্ঞাসা করা হল, ফরজ নামাজসমূহের পর কোন নামাজ এবং রমজান মাসের রোজার পর কোন রোজা সর্বোত্তম? তিনি বললেন, ফরজ নামাজসমূহের পর গভীর রাতের নামাজ সর্বোত্তম এবং রমজান মাসের রোজার পর আল্লাহর মাস মুহাররমের রোজা সর্বোত্তম। (মুসলিম শরিফ : ১১৬৩) মুহাররমের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিন হলো ১০ তারিখ। এটা আশুরা হিসেবে পরিচিত। এ দিনের রোজার ফজিলত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আশুরার রোজা রাখলে পূর্ববর্তী এক বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যায় আমি এ ব্যাপারে আল্লাহর কাছে আশা করি। (মুসলিম শরিফ : ১১৬২)

আশুরার রোজা কয়টি?

ইহুদি ও খ্রিস্টানদের সাথে যেন সাদৃশ্য না হয় এ জন্য আশুরার রোজা দুটি রাখতে হয়। ৯ এবং ১০ তারিখের রোজা উত্তম। ১০ এবং ১১ তারিখেও রাখা যায়। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন আশুরার দিন রোজা রাখলেন এবং লোকদেরকে রোজা পালনের নির্দেশ দিলেন, তখন সাহাবিরা বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! ইহুদি ও খ্রিস্টানরা এ দিনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে থাকে। এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ইনশাআল্লাহ আগামী বছর আমরা নবম তারিখেও রোজা রাখব। বর্ণনাকারী বলেন, এখনো আগামী বছর আসেনি, এমতাবস্থায় রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ইন্তেকাল হয়ে যায়। (মুসলিম শরিফ : ১১৩৪)

আশুরার রোজার বিধান

আশুরার রোজা ইসলামি ঐতিহ্যের অংশ। এই রোজা রাখলে সওয়াব পাওয়া যায়। না রাখলে কোন গুনাহ নেই। প্রত্যেক মুমিনের উচিত অতীতের নবীদের স্মৃতি ও ইতিহাসকে সম্মান জানানো এবং নিজেদের গুনাহ থেকে মুক্তির জন্য রোজা রাখা। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আশুরার দিনে রোজা রাখার আদেশ করেছিলেন। এরপর যখন রমজানের রোজা ফরজ করা হল তখন যার ইচ্ছা সে আশুরার রোজা পালন করত আর যার ইচ্ছা সে তা ছেড়ে দিত। (বুখারি শরিফ : ২০০১)

লেখক : খতীব, বায়তুল আমান জামে মসজিদ, রায়পুর, লক্ষ্মীপুর

#রোজা #আশুরা #ইসলাম