বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই ঢাবিতে চতুর্থ শ্রেণির নিয়োগ | বিশ্ববিদ্যালয় নিউজ

বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই ঢাবিতে চতুর্থ শ্রেণির নিয়োগ

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালের আগে চতুর্থ শ্রেণির যে কোনো পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হতো।

#বিজ্ঞপ্তি #নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি

প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) চতুর্থ শ্রেণির নিয়োগ হয় অফিসপ্রধানের ইচ্ছামতো।

যদিও দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দেখভালের দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) তাদের সব নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জাতীয় দৈনিকে দেয়। অভিযোগ উঠেছে, বাইরে খবর চাউর না হওয়ায় এই পদে নিয়োগে স্বচ্ছতা থাকে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দের আগে চতুর্থ শ্রেণির যে কোনো পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হতো। এই সময়ের পর থেকে জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে দপ্তরের বোর্ডে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।

চতুর্থ শ্রেণির দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন-৯ শাখা। এই শাখার দায়িত্বে থাকা ডেপুটি রেজিস্ট্রার আনজুয়ারা পারভীন জানান, কোথাও কোন পদ শূন্য হলে তখন ওই দপ্তর থেকে নোট বা অবগতিবাচক নোটিশ পাই। সেটা ভিসি এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ যারা আছেন তাদের মাধ্যম হয়ে আবার সংশ্লিষ্ট সেকশনে যায়।

এরপর ওই সেকশনের সর্বোচ্চ পদধারী (অফিসপ্রধান) অভ্যন্তরীণভাবে সার্কুলার জারি করেন এবং নিয়োগ দেন। এরপর তারা কেবল আমাদের অবগতিসূচক আরেকটি নোটিশ পাঠান যে ‘নিয়োগ সম্পন্ন’ হয়েছে। এ পুরো প্রক্রিয়ায় কোনো পত্রিকায় সার্কুলার জারি করা হয় না। সংশ্লিষ্ট ওই অফিসে এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাকি অফিসগুলোর নোটিশ বোর্ডে নিয়োগ সংক্রান্ত শর্ত ও যোগ্যতা সংবলিত নোটিশ টাঙিয়ে দেওয়া হয়।

তবে এ বিষয়ে ইউজিসির নীতিমালা উল্টো। যদিও চতুর্থ শ্রেণির নিয়োগ নীতিমালার ক্ষেত্রে বিজ্ঞপ্তি জারি করার বিষয়ে পরিষ্কারভাবে কিছু বলা নেই, তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে অভিন্ন নীতিমালা অনুসরণের কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ প্রথম শ্রেণির চাকরির ক্ষেত্রে যেভাবে বিজ্ঞপ্তি জারি এবং যেসব নিয়মনীতি মেনে নিয়োগ দেওয়া হয়, চতুর্থ শ্রেণির ক্ষেত্রেও একই ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। ইউজিসি চতুর্থ শ্রেণির নিয়োগের ক্ষেত্রে জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে থাকে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চতুর্থ শ্রেণির নিয়োগে লঙ্ঘিত হচ্ছে তথ্য অধিকার আইন ২০০৯। এই আইনের ধারা ৪ অনুযায়ী, সব নাগরিক রাষ্ট্রের সরকারি, আধা সরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে তথ্য প্রাপ্তির অধিকার রাখেন।

কিন্তু ঢাবিতে অভ্যন্তরীণ সার্কুলারের ফলে চতুর্থ শ্রেণির চাকরির খবর একটি নির্দিষ্ট অংশ বাদে বাকিরা জানতেই পারছে না। এ সুযোগটি নিচ্ছে একটি গোষ্ঠী। ফলে নিজেদের পরিচিত আত্মীয়-স্বজন ও রাজনৈতিক পরিচয় ইত্যাদির ভিত্তিতে নিয়োগ হচ্ছে বলে চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ।

এ বিষয়ে ঢাবির রেজিস্ট্রার মুন্সি শামস উদ্দীন আহম্মদ বলেন, এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের একটি চর্চা যে, চতুর্থ শ্রেণির নিয়োগগুলো অভ্যন্তরীণভাবেই হবে।

এ বিষয়ে আমাদের আরও চিন্তাভাবনা করতে হবে যে, বাকিদের মতো চতুর্থ শ্রেণির ক্ষেত্রেও পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া যায় কি না। ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত হয় যে, চতুর্থ শ্রেণির শূন্য পদগুলো অভ্যন্তরীণ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পূর্ণ করা হবে। সেই থেকে এখন পর্যন্ত এভাবেই নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।

নিয়োগের এমন নিয়মে অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী চাকরিপ্রার্থী প্লাবন ইসলাম বলেন, চতুর্থ শ্রেণির নিয়োগে গোপনে পছন্দের লোক নিয়োগ দেওয়া দুর্নীতি ও বৈষম্যের স্পষ্ট উদাহরণ। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি না দেওয়া সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘনের শামিল। একজন চাকরিপ্রার্থী হিসেবে আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং দাবি করছি, নিয়োগ প্রক্রিয়া হোক স্বচ্ছ, উন্মুক্ত ও প্রতিযোগিতামূলক। জনগণের টাকায় চলা প্রতিষ্ঠানে গোপন নিয়োগ চলতে পারে না।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, তথ্য জানার অধিকার সবার রয়েছে। যে নিয়ম এখন আছে এটি সম্পর্কে আমার পুরোপুরি জানা ছিল না। আমরা নিয়োগের নীতিমালায় কী কী পরিবর্তন, সংযোজন অথবা বিয়োজন করা দরকার তা নিয়ে কাজ করছি। এই নিয়মের

বিষয়ে আমি ভিসি স্যারের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।

#বিজ্ঞপ্তি #নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি