দাবি আদায়ে সরকারি কর্মচারীরা একসঙ্গে আন্দোলনে | বিবিধ নিউজ

দাবি আদায়ে সরকারি কর্মচারীরা একসঙ্গে আন্দোলনে

সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আজ সচিবালয়ে গণজমায়েত করবেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এরপর তিনজন উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দেওয়ার নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন তারা।

#সচিবালয় #সরকারি কর্মচারী

সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আজ সচিবালয়ে গণজমায়েত করবেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এরপর তিনজন উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দেওয়ার নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন তারা।

সচিবালয় সূত্র জানায়, দাবি আদায়ে এবার কর্মচারীদের সঙ্গে মাঠে নামছেন প্রশাসন ক্যাডারসহ নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের ভাষায় নিবর্তনমূলক ও কালো আইন বাতিল না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন ধারাবাহিকভাবে অব্যাহত থাকবে। প্রয়োজনে তারা এ আন্দোলন মাঠ প্রশাসনে ছড়িয়ে দেবেন। তবে আন্দোলনের কর্মসূচি হবে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ এবং শৃঙ্খলিত।

উল্লেখ্য, ঈদুল আজহার আগে একই দাবিতে মিছিল ও সমাবেশ শেষে আইনসহ বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা এবং মন্ত্রিপরিষদ ও জনপ্রশাসন সচিবকে স্মারকলিপি দিয়েছিল কর্মচারী সংগঠনগুলো।

এদিকে আজ সোমবার চার দফা দাবি আদায়ে একই সময়ে জনপ্রশাসন ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের দপ্তরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম। দাবিগুলো হলো-ফ্যাসিবাদের দোসর আমলাদের অপসারণ, চুক্তিভিত্তিক কর্মে নিয়োজিত বিতর্কিত কর্মকর্তাদের চুক্তি বাতিল, পদোন্নতি ও পদায়নসংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি বাতিল এবং নিবর্তনমূলক ও কালো আইন বাতিল। এই ফোরাম ঈদুল আজহার ঠিক আগের দিনও একই দাবিতে কর্মসূচি পালন করেছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সংগঠনটি প্রতিদিন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে।

প্রসঙ্গত, সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ পর্যালোচনা ও কর্মচারী সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দিতে ৪ জুন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে তিন সদস্যের উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু এই কমিটি এখনো কোনো বৈঠক করতে পারেনি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কমিটির সদস্য সচিব (ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব) এএসএম সালেহ আহমেদ রোববার যুগান্তরকে বলেন, ঈদুল আজহার বন্ধের আগের দিন অর্থাৎ সর্বশেষ কর্মদিবসে সন্ধ্যার পর এ কমিটির প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সংগত কারণেই কমিটি কোনো মিটিং করতে পারেনি। ঈদের পর অফিস আজ (রোববার) খুলেছে। নিশ্চই দ্রুততম সময়ের মধ্যে কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কার্যকরী সভাপতি ও সাবেক সচিব মো. আব্দুল খালেক বলেন, দীর্ঘকাল প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে সরকারি দায়িত্ব পালন শেষে স্বৈরাচারের রোষানলে পড়ে অবসরে যেতে হয়েছে। ফ্যাসিস্ট আমলে প্রশাসন পরিবারের সদস্য হয়েও আমরা সচিবালয়ে প্রবেশ করতে পারিনি। আমাদের গতিবিধি লক্ষ্য করা হতো। সিনিয়র কিংবা জুনিয়র কারও রুমে গিয়ে বসলে তার ক্ষতি হবে-এমনটি ভেবে নিজেদের চলাফেরায় সংযত করেছি।

তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্টের পর এখনো যদি বঞ্চিতরা আবার অবমূল্যায়িত হয়, তাহলে দুঃখ কোথায় রাখব। চোখের সামনে প্রশাসনে স্বৈরাচারের দোসররা ছড়ি ঘোরাচ্ছেন। পক্ষান্তরে স্বৈরাচার আমলে বঞ্চিতরা এখনো রাস্তায় ঘুরছেন-এটা হতেই পারে না। বিবেকের তাড়নায় আমরা বলেছি-স্বৈরাচারের দোসর সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম-সচিবদের অপসারণ করতে হবে। আমরা মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এবং জনপ্রশাসন সচিবকে দোসরদের একটি তালিকাও দিয়েছি। কিন্তু অত্যন্ত বেদনাদায়ক বিষয় হচ্ছে-আমাদের দাবিগুলো আমলেই নেওয়া হয়নি।

সাবেক সচিব মো. আব্দুল খালেক বলেন, সরকার পরিচালনার সহায়তার জন্য অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের চুক্তিতে নিয়োগ দিয়েছে। এর মধ্যে কিছু দুষ্ট লোক কৌশলে চুক্তিতে নিয়োগ পেয়েছেন। আমরা বিতর্কিত ওই সব আমলাদের চুক্তি বাতিলের জন্য তালিকা দিয়েছি। কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে দায়িত্বশীল কর্তাব্যক্তিরা দাবিটা আমলে নেয়নি। সরকারকে আমলে নিতে বলেনি এবং অনেক ক্ষেত্রে বিষয়গুলো সরকারের কাছে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এসব বিষয়ের তীব্র নিন্দা জানাই। যে কোনো মূল্যে কর্মরত বিতর্কিত কর্মকর্তাদের চুক্তি বাতিল করতে হবে।

সাবেক এই সচিব বলেন, উপ-সচিব, যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিব এবং সচিব পদে পদোন্নতি ও পদায়নের ফাইল প্রধান উপদেষ্টা পর্যন্ত গিয়ে চূড়ান্ত হওয়ার কথা। হঠাৎ করে গত বছর ডিসেম্বর মাসে জনপ্রশাসন, পুলিশ ও পররাষ্ট্র ক্যাডারের পদোন্নতি ও পদায়নে উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়। অর্থাৎ বেআইনিভাবে একটি টায়ার বাড়ানো হয়েছে। এই কমিটির আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। সরকারের রুলস অব বিজনেস উপেক্ষা করে ওই কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা বেআইনি ভাবে গঠিত ওই কমিটি বাতিলের দাবি করেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বাস্তবতা হচ্ছে-আমাদের দাবি থোড়াই কেয়ার করা হয়েছে।

আব্দুল খালেক বলেন, আমরা পরিষ্কার করে বলেছি নিবর্তনমূলক ও কালো আইন মেনে নেওয়া হবে না। এসব আইন করে কর্মচারীদের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া চলবে না। সেই ক্ষেত্রে বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম আন্দোলনরত ক্যাডার ও নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে।

এদিকে ঈদের বন্ধের পর রোববার ছিল সচিবালয়ের প্রথম কর্মদিবস। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পরস্পরের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। এর এক ফাঁকে সব সংগঠনের নেতাদের সচিবালয়ের বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি অফিসে বসে মিটিং করতে দেখা গেছে। বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের সভাপতি মো. বাদিউল কবীর, কো-চেয়ারম্যান মো. নূরুল ইসলাম, মহাসচিব মো. নজরুল ইসলাম এবং কো-মহাসচিব মো. মুজাহেদুল ইসলাম সেলিমসহ শীর্ষ নেতারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

#সচিবালয় #সরকারি কর্মচারী