‘লিওনেল মেসি, তাকে নিয়ে লিখ না। তাকে বর্ণনা করার চেষ্টা করো না। শুধু দেখে যাও’—মেসিকে নিয়ে এমনটিই বলেছিলেন, সাবেক বার্সেলোনা কোচ পেপ গার্দিওলা। আর ফুটবল যদি হয় কোনো এক কবিতা, তবে মেসি সেই কবিতার ছন্দ। রোজারিও থেকে বার্সেলোনা হয়ে প্যারিস, এরপর মায়ামি; টিস্যু পেপারে সাইন করা থেকে বিশ্ব মাতানো। মেসি যে ‘আধুনিক ফুটবলের জাদুকর’। অনেকের কাছে তিনি গোট, মানে সর্বকালের সেরা। আজ জীবনের ৩৮তম বসন্তে পা রাখছেন এই জাদুকর।
মেসির বাঁ-পায়ের জাদুতে মন্ত্রমুগ্ধ তার কোটি ভক্ত। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সর্বকালের অন্যতম সেরাদের একজন হিসেবে। বিশ্ব ফুটবলে সব ক্ষেত্রেই সাফল্য পেয়েছেন আর্জেন্টাইন এ ফুটবলার। স্বভাবগত দিক থেকে শান্ত হলেও বল পায়ে তার ক্ষিপ্র গতিতে ছুটে চলা উত্তেজনার রেণু ছড়ায় গ্যালারিতে।
১৯৮৭ সালের ২৪ জুন রোজারিওতে জন্ম মেসির। জর্জ মেসি ও সেলিয়া কুচিত্তিনির তৃতীয় সন্তান মেসি পরিবারের থেকে উদ্বুদ্ধ হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি আলাদা নেশা ছিল। বড় দুই ভাই রদ্রিগো ও মাতিয়াস আর তার কাজিন ইমানুয়েন বিয়াঙ্কুকি, ম্যাক্সিমিলিয়ানো ছিলেন মেসির ফুটবল খেলার সঙ্গী।
ফুটবলের সঙ্গে ছোটবেলা থেকেই সখ্যতা গড়ে ওঠা মেসি মাত্র ৪ বছর বয়সেই স্থানীয় এক ক্লাবে যোগ দেন। ৬ বছর বয়সে নিউওয়েলস অল্ড বয়েজ ক্লাবে যোগ দেন মেসি। সেখানে ৬ বছর খেলেন তিনি। এই ৬ বছরে তার পা থেকে গোল আসে প্রায় ৫০০। আর সেই সুবাদে তখন তার নাম হয় ‘৮৭ এর গোল মেশিন।’
১০ বছর বয়সে গ্রোথ হরমোন ডেফিসিয়েন্সি নামক এক রোগ বাসা বাধে তার দেহে। যে কারণে থমকে যায় তার দেহের বৃদ্ধি। প্রতিমাসে তার এই রোগের চিকিৎসার জন্য খরচ হতো প্রায় ১ হাজার ডলার। প্রথমে তার ক্লাব নিউওয়েলস সেই খরচে অংশীদার হতে চাইলেও পরে হাত গুটিয়ে নেয়।
পরে রিভারপ্লেট ক্লাব তাকে দলে ভিড়িয়ে চিকিৎসা খরচ বহন করতে চাইলেও শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে যায় তারাও। যে কারণে শঙ্কা দেখা দেয় মেসির বেড়ে ওঠা নিয়ে। ২০০০ সালের সেপ্টেম্বরে বার্সেলোনা তার জুনিয়র দলের জন্য মেসির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। এরপর শুরু হয় চিকিৎসা। ১৪ বছর বয়সে এসে শেষ হয় তার চিকিৎসা।২০০৫ সালে নিজের ১৮তম জন্মদিনের দিন মেসি যোগ দেন বার্সেলোনার মূল দলে। সেই থেকে শুরু। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকানো লাগেনি। ২০০৬ সালে বিশ্বকাপে অভিষেক হয় তার। ২০০৮-০৯ মৌসুমে প্রথম ট্রেবলের স্বাদ পান মেসি। ২০০৯-১০ মৌসুমে জেতেন প্রথম ব্যালন ডি’অর।
২০১২ সালটা ছিল মেসির রেকর্ড গড়ার বছর। এ বছরই প্রথম এক ম্যাচে পাঁচ গোল দেওয়ার রেকর্ড গড়েন তিনি। সে আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতাও ছিলেন তিনি। সে বছরই মেসি বনে যান বার্সেলোনার সর্বোচ্চ গোলদাতা।২০১৪-১৫ মৌসুমে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ট্রেবল জয় করেন মেসি। ২০১৯-২০ মৌসুমে রেকর্ড ষষ্ঠ ব্যালন ডি’অর নিজের ঝুলিতে পুরেন মেসি। ২০২১ সালে তিনি বার্সেলোনার সঙ্গে দুই দশকের সম্পর্ক ছিন্ন করে পাড়ি জমান ফ্রান্সের প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ে।
২০১৮ বিশ্বকাপে ফ্রান্সের কাছে স্বপ্নভঙ্গের পর সেখান থেকে শিক্ষা নিয়েই যেন ঘুরে দাঁড়িয়েছেন মেসি। ফিনালিশিমা, ফিনালিশিয়া, কোপা আমেরিকা জয়ের পর ২০২২ সালের বিশ্বকাপে এসে ক্যারিয়ারের একমাত্র অপূর্ণতাটা পূর্ণ হয় ক্ষুদে এই জাদুকরের। লুসাইল স্টেডিয়ামে সেই ফ্রান্সকেই হারিয়ে স্বাদ নেন বিশ্বকাপের।এরপর ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে পিএসজির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান মেসি। মেজর লিগের ক্লাব ইন্টার মায়ামিতে নতুন ঘর বাঁধেন। ফ্লোরিডার এই ক্লাবটি থেকেই ফুটবলকে বিদায় জানাতে চান আর্জেন্টাইন এই কিংবদন্তি।
বিশ্বকাপজয়ী এই অধিনায়ক ৩৭ বছর শেষ করে আজ পা রাখলেন ৩৮ বছরে। শুভ জন্মদিন লিও।