এইচএসসির প্রশ্ন: উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে নয় তো! | শিক্ষাবিদের কলাম নিউজ

এইচএসসির প্রশ্ন: উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে নয় তো!

এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( শিক্ষা ও আইসিটি) সাদিয়া আফরিনকে প্রধান করে ১৯জুন তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল।

#এইচএসসি #প্রশ্ন

আমরা জানি দেশের ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হবে আগামী ২৬ জুন। কিন্তু প্রশ্ন নিয়ে যা হয় প্রতিবছর তারচেয়েও ভিন্নমাত্রার একটি ঘটনা ঘটেছে এবার। নওগাঁর ধামইরহাট থানা হেফাজতে ট্রাংক ভেঙ্গে গত ১৭ জুন দিবাগত রাতে আসন্ন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে পত্রিকায় খবর এসেছে। এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সাদিয়া আফরিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল।

গত শুক্রবার উপজেলাজুড়ে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়। তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক। অপর দুই কর্মকর্তা হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সার্কেল ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শাহাদৎ হোসেন। কিন্তু এই কমিটিতে কোনো শিক্ষক নেই। শিক্ষা বিভাগের এই হচ্ছে আরেক দুর্গতি। শিক্ষা, বই পুস্তক, প্রশ্নপত্র সংক্রান্ত কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে পুলিশ আর প্রশাসনের লোক থাকেন, কোনো শিক্ষকের স্থান বা ভূমিকা কোনটিই দেখা যায়না।

কয়েকটি ছবি থেকে দেখা যায়, ধামইরহাট থানা হেফাজতে প্রশ্নপত্র রাখা হয়েছে একটি সিলগালা করা ট্রাংকের মধ্যে। যার দুটি তালা উধাও। এতে রাখা ইসলামের ইতিহাসের এক সেট প্রশ্নপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। এ বিষয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল মালেক দেশের শিক্ষাবিষয়ক একমাত্র প্রিন্ট জাতীয় পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’কে বলেন, গত ২৪ এপ্রিল রাতে উপজেলার বড়থা বাজারে দুর্বৃত্তের হামলায় উজ্জল হোসেন নামে একজন ছাগল ব্যবসায়ী নিহত হন। এই মামলার আসামি বংশিবাটি এলাকার সাগর হোসেনকে আটক করে গত ১৭ জুন রাতে থানায় আনা হয়। পরে তাকে থানা হেফাজতে রাখলে হাতে হাতকড়া থাকাকালীন তিনি ট্রাংকে থাকা প্রশ্নপত্রগুলো বের করেন।

যেহেতু ইসলামের ইতিহাসের প্রশ্নপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। তার মানে হচ্ছে- যেগুলো গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়, যেমন ইংরেজি, বিজ্ঞান বিষয়ের প্রশ্নপত্র আউট করা হয়েছে, আর যেগুলো বেশি গরুত্বপূর্ণ নয় অর্থাৎ বাজারমূল্য বেশি হবে না সেগুলো গায়েব করা হয়েছে- বিষয়টি কি তাই?

এখন প্রশ্ন হলো, থানায় যেখানে চোর ডাকাত বা আসামিদের রাখা হয় পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নও কি সেখানে রাখা হয়? এ কেমন নিয়ম আর কেমন দায়িত্ববোধ? অবাক করা সব বিষয়! আসামিদের মধ্যে সবাই না হলেও অধিকাংশই তো অপরাধে জড়িত থাকেন, তাদের রাখার জায়গায় প্রশ্ন রাখা হবে কেনো? এটির দায়িত্বে কে থাকেন সেটি দেখতে হবে। তথাকথিত তদন্ত কমিটি দিয়ে কি হবে? আর প্রশ্ন চুরির তো কোনো কথা নয়। কারণ সেটি কেজি দরে বিক্রি করা হবে না। আবার স্বর্ণালঙ্কারও নয় যে, বাজারে এর প্রচুর দাম। এখানে অর্থের বিনিময়ে হওয়া কোনো লেনদেনের ঘটনা চুরি বলে চালিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা নয়তো? প্রশ্নপত্র রাখার কথা থানার ভল্ট বা মালখানায়। সেটি কেনো হাজতে রাখা হলো?

এদিকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে রিপোর্ট জমার নির্দিষ্ট কোনো তারিখ দেয়া হয়নি- এটিই বা কেমন কথা? যদিও যত দ্রুত সম্ভব তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া যায় সেলক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে বলে কমিটি প্রধান সাংবাদিকদের বলেছেন। আর ঘটনার পরপরই থানা-হাজতের দায়িত্বে থাকা উপপরিদর্শক ও এক কনস্টেবলকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। এতে কি প্রশ্নফাঁস বন্ধ হবে? এতে কি শিক্ষাবোর্ডের, শিক্ষার্থীদের এবং শিক্ষার যে দুর্নাম ও ক্ষতি হলো তা পুষিয়ে নেয়া যাবে?

পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় যে, ট্রাংক সিলগালা ও তালাবন্ধ অবস্থায় ছিল। আসামির এক হাতে হাতকড়া থাকলেও অন্যহাত খোলা ছিল। তিনি নখ দিয়ে সিলগালা খুলে ফেলেন এবং তালা খোলেন। অবাক করা সব তথ্য! আসামি এমনিতেই ভয়ে থাকেন। তিনি কেনো খুলতে যাবেন তালা? আর তার প্রশ্নেরইবা কি দরকার ছিল? আসামি যখন থানার হাজতে থাকেন, রাতেও তাকে হাতকড়া পরে থাকতে হয়? এটিইবা কেমন নিয়ম?

সবশেষ জানা গেলো, প্যাকেটের ৫০টি প্রশ্নপত্রই উদ্ধার করা হয়েছে, কোনো প্রশ্নপত্র হারায়নি। ১৯ জুলাই অনুষ্ঠেয় ইতিহাস দ্বিতীয়পত্রের পরীক্ষাটি বিভাগের আট জেলায় বিকল্প প্রশ্নপত্রে নেয়া হবে। রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের একটি তদন্ত দল ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। জেলা প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকেও দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আসামির বিরুদ্ধে নতুন আর একটি মামলা হয়েছে এবং অভিযুক্তকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এসব পদক্ষেপে কি প্রশ্নপত্র নিয়ে যে ঘটনা ঘটলো তাতে সাধারণ মানুষের, শিক্ষার্থীদের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা যাবে? প্রশ্নপত্র নিরাপদে রাখার দায়িত্বে যারা থাকেন তারা কেনো এসব বিষয় আগে থেকে চিন্তা করেন না এবং ব্যবস্থা নিতে পারেন না? ঘটনা ঘটার পরে তদন্ত কমিটি, পরিদর্শন, লাইনে ক্লোজ ইত্যাদি সব শব্দ পত্রিকায় দেখতে পাই। তাতে কাজের কাজ কিছু কি হয়?

লেখক: ক্যাডেট কলেজের সাবেক শিক্ষক

#এইচএসসি #প্রশ্ন