পরকালে আমলনামা যেভাবে দেওয়া হবে | মতামত নিউজ

পরকালে আমলনামা যেভাবে দেওয়া হবে

নেককার লোকজন ডান হাতে আমলনামা পাবে। আর বদকার লোকদের আমলনামা পিছন দিক থেকে বাম হাতে ধরিয়ে দেয়া হবে।

#ইসলাম #আমলনামা

হাশরের মাঠে আল্লাহ তায়ালা বান্দার আমলনামা হাতে দিবেন। দুনিয়াতে যে যা আমল করে তার সবকিছু সেই আমলনামায় লিপিবদ্ধ থাকবে। ছোট বড় ভালো মন্দ প্রকাশ্য গোপন মানুষ যত কাজ দুনিয়াতে করেছে সবকিছু আমলনামায় দেখতে পবে। দুনিয়ায় যারা আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখেনি, হিসাব-নিকাস ও জান্নাত জাহান্নাম বিশ্বাস করেনি আলমনামায় জীবনের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব দেখে তারা বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা তাদের সেই অবস্থার বিবরণ দিয়েছেন এভাবে : আর আমলনামা সামনে রাখা হবে। তাতে যা আছে তার কারণে আপনি অপরাধীদেরকে ভীত সন্ত্রস্ত দেখবেন। তারা বলবে : হায় আফসোস, এ কেমন আমলনামা! এ যে ছোট-বড় কোনো কিছুই বাদ দেয়নি। সবই এতে রয়েছে। তারা তাদের কৃতকর্মকে সামনে উপস্থিত পাবে। আপনার পালনকর্তা কারো প্রতি জুলুম করবেন না। (সুরা কাহাফ : ৪৯)

নেককার লোকজন ডান হাতে আমলনামা পাবে। আর বদকার লোকদের আমলনামা পিছন দিক থেকে বাম হাতে ধরিয়ে দেয়া হবে। ডান হাতে আমলনামা পেয়ে ঈমানদাররা উচ্ছ্বসিত হবেন। আনন্দের আতিশয্যে অন্যদের ডেকে ডেকে আমলনামা দেখাবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন : সুতরাং যাকে আমলনামা দেওয়া হবে তার ডান হাতে, সে বলবে, হে লোকজন! এই যে আমার আমলনামা তোমরা পড়ে দেখ। আমি আগেই বিশ্বাস করেছিলাম যে আমাকে অবশ্যই হিসাবের সম্মুখীন হতে হবে। (সুরা হাক্কাহ : ১৯-২০)

বদকাররা বাম হাতে আমলনামা পেয়ে মৃত্যু কামনা করবে। জীবন বিনাশ করে ফেলতে চাইবে। দুনিয়ার রাজত্ব ধন সম্পদ আর বিশাল প্রভাব প্রতিপত্তির কথা স্মরণ করে বিলাপ করবে। কিন্তু সেদিন না জীবন নাশের সুযোগ থাকবে, না কারো মৃত্যু হবে। সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন : আর সেই ব্যক্তি, যার আমলনামা দেওয়া হবে বাম হাতে সে বলবে, আহা! আমাকে যদি আমলনামা দেওয়াই না হত! আমি যদি জানতেই না পারতাম আমার হিসাব কি? আহা! মৃত্যুতেই যদি আমার সব শেষ হয়ে যেত। আমার অর্থ সম্পদ আমার কোনো কাজে এলো না। আমার থেকে আমার সব ক্ষমতা লুপ্ত হয়ে গেছে। (সুরা হাক্কাহ : ২৫-২৯)

এই আফসোসের সময়েই আল্লাহ তায়ালার কঠিন হুংকার ভেসে আসবে- ‘পাপাচারীদের জাহান্নামে নিক্ষেপ কর’। আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজিদে ইরশাদ করেন : ধর ওকে এবং গলায় বেড়ি পরিয়ে দাও। তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ কর। তারপর তাকে এমন শিকলে গেঁথে দাও যার পরিমাণ হবে সত্তর হাত। সে মহান আল্লাহর উপর ঈমান রাখত না। (সুরা হাক্কাহ : ৩০-৩৩)

অপরদিকে জান্নাতিদের জন্য থাকবে আনন্দের জীবন। তারা পরিতৃপ্তির জীবন লাভ করবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন : সুতরাং সে থাকবে মনঃপুত জীবনে। সেই সমুন্নত জান্নাতে যার ফল ঝুঁকে থাকবে। (জান্নাতিদের বলা হবে) তোমরা বিগত দিনগুলোতে যে কাজ করেছিলে তার বিনিময়ে খাও ও পান কর স্বাচ্ছন্দ্যে। (সুরা হাক্কাহ : ২১-২৪)

সুতরাং সেদিনের কথা স্মরণ করে আমাদের এখন থেকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আমরা কি সৎকর্মশীলদের দলভুক্ত হবো না অপরাধীদের। আমরা যেন এখন থেকেই সৎকর্ম সম্পাদন করে চিরস্থায়ী সুখের স্থান জান্নাত লাভ করতে পারি। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুন, আমীন।

জাহান্নামে পাপিষ্ঠদের সব থেকে বড় যে কষ্ট হবে তা হলো, তাদের সামনেই জান্নাত বিদ্যমান থাকবে যেখানে তাদের অনেক পরিচিত আত্মীয়স্বজন থাকবে। এমনও হবে যে মা-বাবা জান্নাতে যাবে, ছেলেমেয়ে থাকবে জাহান্নামে। কারো বাবা-মা জাহান্নামে যাবে, সন্তানরা জান্নাতে যাবে। স্ত্রী জান্নাতে যাবে, স্বামী যাবে জাহান্নামে। স্বামী যাবে জান্নাতে, স্ত্রী যাবে জাহান্নামে। কর্মচারী যাবে জান্নাতে, বস যাবে জাহান্নামে। জাহান্নামের ভয়াবহ যন্ত্রণা ও শাস্তির অবস্থান থেকে তারা যখন নিজ স্বজনকে জান্নাতের অপরিসীম আনন্দ ও ভোগবিলাসে মত্ত দেখবে তখন তাদের পরিতাপের অন্ত থাকবে না। এমন কি জাহান্নামিরা জান্নাতিদের ডেকে সামান্য পানি চাইবে। একফোঁটা পানি কামনা করেও পানি পাবে না। সেই দৃশ্যের বিবরণ দিয়ে কোরআন মাজিদে আল্লাহ তায়ালা বলেন : জাহান্নামিরা জান্নাতিদের ডেকে বলবে, আমাদের উপর সামান্য পানি নিক্ষেপ কর অথবা আল্লাহ তায়ালা তোমাদের যে রিজিক দিয়েছেন, তা থেকেই কিছু দাও। তারা উত্তরে বলবে, আল্লাহ এই উভয় বস্তু কাফেরদের জন্য হারাম করেছেন। (সুরা আরাফ : ৫০)

আহ! কতইনা দুঃখজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে তখন। যাদের সুখের জন্য দুনিয়াতে ন্যায় অন্যায় বাছ-বিচার করেনি এই কঠিন মুহূর্তে তাদের থেকে এমন প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর কষ্টের পারদ কতটা বাড়বে তা বলাই বাহুল্য। এজন্য একটি কথা খুব ভালভাবে জেনে রাখা দরকার, দুনিয়াতে যে যতই প্রিয় হোক, যে যতই ভালবাসার পাত্র হোক- আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করে আল্লাহর বিধান লংঘন করে তাদের খুশি করা চূড়ান্ত বোকামির কাজ। তাই ভেবে দেখুন, আপনি কার সন্তুষ্টির জন্য অবৈধ উপার্জন করছেন! কার সুখের জন্য আল্লাহর নাফরমানিতে লিপ্ত হচ্ছেন!

সুতরাং আমাদের কর্তব্য হল, যে কোনো কাজের ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি আছে কিনা দেখা। আল্লাহর সন্তুষ্টি থাকলে সে কাজ করা, আল্লাহর অসন্তুষ্টি থাকলে পরিত্যাগ করা।

দুনিয়াতে যারা মুসলমানদের নিয়ে উপহাস করেছিল, কাঠমোল্লা সেকেলে বলে বিদ্রুপ করেছিল পরকালে তারা যখন জাহান্নামের আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে তখন তাদেরকে ডেকে মুসলমানরাও বিদ্রুপ করবে। জান্নাতিরা জাহান্নামিদের ডেকে বলবে : আমাদের সাথে আমাদের প্রতিপালক যে ওয়াদা করেছিলেন তা আমরা সত্য পেয়েছি। অতএব তোমরা কি তোমাদের প্রতিপালকের ওয়াদা সত্য পেয়েছ? তারা বলবে, হ্যাঁ। অতঃপর একজন ঘোষক উভয়ের মাঝখানে ঘোষণা করবে : আল্লাহর অভিশাপ জালেমদের ওপর। (সুরা আরাফ : ৪৪)

#ইসলাম #আমলনামা