কওমি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে পর্যটকদের বের করে দেয়ার অভিযোগ
সিলেটের কোম্পানিগঞ্জের জনপ্রিয় ‘উৎমাছড়া’ পর্যটন স্পটে গিয়ে পর্যটকদের বের করে দেয়ার ঘটনার ভিডিয়ো ভাইরাল হওয়ার পর ঘটনার সাথে জড়িতরা বলছেন, 'তারা শুধু ধর্মের দাওয়াত' দিতে গিয়েছিলেন।
ভিডিয়োতে একজনকে পর্যটন স্পটটি বন্ধ করে দেয়ার কথা বলতে শোনা গেলেও প্রশাসনের সাথে বৈঠকের পর তারা এখন বলছেন, 'পর্যটক আসা নিয়ে তাদের কোন আপত্তি নেই'।
যুব জমিয়ত নামে একটি ধর্মভিত্তিক সংগঠনের কোম্পানিগঞ্জ উপজেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুফতি রুহুল আমীন সিরাজি বলেছেন, 'ঘটনাটির সমাধান হয়েছে। পর্যটক আসুক। তবে স্থানীয়দের জন্য বিরক্তিকর কিছু যেনো না হয় সেটি তদারকির অনুরোধ করেছি প্রশাসনকে'।
আরো পড়ুন: কওমি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে পর্যটকদের বের করে দেয়ার অভিযোগ, যা বললেন রাবি অধ্যাপক
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুন্নাহার বলছেন, পর্যটন স্পটটিতে আজ মঙ্গলবার বিকেলে গিয়েও তিনি বিপুল সংখ্যক পর্যটক দেখতে পেয়েছেন। স্থানীয় সব পক্ষের সাথে আমরা বসেছি। যারা বন্ধ করার কথা বলেছেন তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছেন। পাশাপাশি সুন্দর ব্যবস্থাপনার জন্য আমরাও প্রশাসনের তরফ থেকে কিছু ব্যবস্থা নিবো, বলছিলেন তিনি।
তার মতে, ঘটনাটি একেবারেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা এবং এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ মুরবব্বিদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই ওই ব্যক্তিরা এটি করেছেন, তবে তারা তাদের ভুল স্বীকার করেছেন।
যদিও স্থানীয় এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটের কিছু পর্যটন স্পটে সেখানকার মাদরাসা ভিত্তিক কিছু লোকের তৎপরতা চোখে পড়ছে। তবে উৎমাছড়াতেই প্রথম প্রকাশ্যে তাদের কিছু বলতে শোনা গেছে। প্রশাসন অবশ্য জানিয়েছে, জেলার সবগুলো পর্যটন স্পটেই পর্যটকদের নিরাপত্তা ও স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয়দের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে নিয়মিত পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
এবার ঈদের পরদিন পর্যটকদের অনেকে উৎমাছড়ায় গিয়ে বাধার মুখে পড়েছেন। একটি ধর্মভিত্তিক সংগঠনের একদল ব্যক্তি সেখানে গিয়ে পর্যটকদের এলাকা ছাড়ার অনুরোধ করছেন এমন ভিডিয়ো সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে।
ওই ভিডিয়োতে একজনকে বলতে শোনা যায় যে, ‘এই এলাকার আলেম-ওলামা ও স্থানীয়রা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন উৎমাছড়াকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে চলতে দেওয়া হবে না’।
তিনি পর্যটকদের উদ্দেশ্য বলছিলেন ‘এখানে মদ্যপান ও অশ্লীল কার্যকলাপের কারণে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। তাই দয়া করে আপনারা এখান থেকে চলে যান’। ভিডিয়ে ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। কারণ ওই এলাকাটিতে অনেকে পর্যটনের ওপরেও নির্ভরশীল।
এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে খবর আসার পর জেলা প্রশাসন থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দ্রুত তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলা হয়। উপজেলা প্রশাসন ঘটনার সাথে জড়িত সংগঠনটির নেতাদের ছাড়াও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে নিয়ে মঙ্গলবার একটি বৈঠকে বসে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুন্নাহার বলছেন, যারা পর্যটন কেন্দ্র চলবে না বলেছিলো বা পর্যটকদের চলে যেতে বলেছিলো, তারা তাদের ভুল স্বীকার করেছে। তারা প্রশাসনকে জানিয়েছে যে তারা 'ধর্মের দাওয়াত দিতে গিয়েছিলেন'।
"তারা আমাদের বলেছে যে তারা শালীনতার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কিছু কথা বলেছে। কিন্তু সেটি এমন হয়ে যাবে তা তারা ভাবেননি। আমরা তাদের বলেছি কেউ কোন কিছু জোর করে চাপিয়ে দিতে পারবে না। কোনো বিষয়ে সমস্যা হলে প্রশাসনকে জানাবে। প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান বিকেলে তিনি নিজেও ঘটনাস্থল থেকে ঘুরে এসেছেন ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, তারা এলাকার মুরব্বি থেকে শুরু করে কারও সাথে আলাপ না করেই এসব করেছিলো। কিন্তু পরে আমাদের বলেছে যে পর্যটক আসায় কোন সমস্যা নেই। সবাই সহযোগিতা করবে। তবে তারা কিছু বিষয় তুলে ধরেছে। সেগুলো নিয়ে আমরা পর্যটকদের সচেতন করবো।
ওদিকে রোববার যারা পর্যটন স্পটে গিয়ে পর্যটকদের চলে আসতে বলেছিলেন, তাদের একজন হলেন ধর্মভিত্তিক সংগঠন যুব জমিয়ের স্থানীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রুহুল আমিন সিরাজী। তিনি জানিয়েছেন যে, প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধান হয়েছে ও ভুল বুঝাবুঝির অবসান হয়েছে। আমাদের একটি টিম গিয়েছিলাম সেখানে ধর্মের দাওয়াত দেয়ার জন্য। আমাদের এক ভাই ভুলে পর্যটন কেন্দ্র বন্ধের কথা বলেছে। পর্যটক আসবে, আমাদের আপত্তি নেই, বলছিলেন তিনি।
কিন্তু দাওয়াত দিতে গিয়ে কেন তারা নিজেরা পর্যটকদের চলে যেতে বলেছিলেন- এমন প্রশ্নের জবাবে সিরাজী বলেন, অনেক সময় পর্যটকরা আসা যাওয়ার সময় উচ্চ শব্দে গানবাজনা করেন যেটি এলাকার মানুষের কাছে বিরক্তিকর। অনেক দিন ধরেই স্থানীয় লোকজন বলছিলো আমাদের কাছে। আমরা গিয়েছিলাম যাতে কোনো অসামাজিক কার্যক্রম না হয় বা অশালীন পোশাক কিংবা মাদক সেবন এগুলো না হয়, সে জন্য দাওয়াত দেয়ার জন্য।
শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিয়োগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।