সর্বজনীন মানবতাবাদ নিয়ে আওয়াজ তোলে, প্রতিবাদ করে এবং রাস্তায় নামে কিংবা অনাচারকে অন্তত ঘৃণা করে- দেশে এমন লোক ক'জন পাবেন? মুসলমানদের স্বার্থ ব্যাহত হচ্ছে, ভারতে মুসলিমরা নির্যাতিত হচ্ছে, মসজিদ ভাঙছে, গাজায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে কিংবা মুসলিমদের নবীকে অবমাননা করা হয়েছে- প্রতিবাদে কারা? নির্দিষ্ট একটি রঙের মানুষ, নির্দিষ্ট একটি বিশ্বাসের মানুষ। অন্যরা রাস্তায় নাই, মিডিয়াতে নাই। বরং সেই খবরে হাহা রিঅ্যাক্ট আছে। আপত্তিকর মন্তব্য করছে।
সংখ্যালঘুর বাড়ি ভাঙছে, মন্দিরে তাণ্ডব চলছে, গালি খাচ্ছে, ঘর-জমি দখল হচ্ছে- একই চিত্র। রঙ খুব একটা বদলাচ্ছে না। খুব কম মানুষ অন্যায়কে কালো আর ভালোকে আলো বলার প্রয়োজন মনে করছে। ফেসবুকের যত প্রচার, মিডিয়ার যত খবর তাতে একপেশে দলিল।
যার দুঃখ তারে ছোঁয়। সবাইকে পেয়ে বসে না। সবাইকে সমানভাবে কাঁদায় না। যদি কাঁদাতো তবে একই দেশে ভারত প্রেম আর পাকিস্তান প্রীতি স্বদেশ প্রেমের চেয়ে দামি হতো না!
দুনিয়া বিভাজিত হয়ে আছে। ইসরায়েলের নিউক্লিয়ার বোমা আছে, ইরানের নাই এবং থাকতেও পারবে না, ইরান এনপিটির শর্ত মানছে, ইসরাইল মানছে না তবুও ইসরায়েল যা বলবে তাই হবে- মোড়লদের দৃষ্টিভঙ্গি এমনই। বিশ্ব একচোখা। সে নিজের স্বার্থের বাইরে কিছুই দেখে না। নিজের স্বার্থের বিরুদ্ধে কিছুই করে না।
এদেশের হিন্দু-মুসলিম পাশাপাশি দাঁড় করান- কথা শুনুন মনে হবে এক। কাজ দেখুন- দু'জনের দুই বিশ্বাস। এখানে ধর্মে ধর্মে দূরত্ব, জেলায়-জেলায় সংঘর্ষ, প্রতিবেশীতে-প্রতিবেশীতে কোন্দল- যাবেন কোথায়? তোমাকে যে আঘাত-ব্যথা কাঁদায়, সে আঘাত তো আমাকে পোড়ায় না। মনুষ্যত্ব অর্জনের পথে বাঁধা হিসেবে দাঁড় করিয়াছি ধর্মকে। অথচ ধর্ম সবচেয়ে বেশি মানুষ হতে বলে। সত্য ধর্ম বলে মানবতাবাদী হতে। ধর্মীয় সাধকরা বলেন অসাম্প্রদায়িক হতে। কিন্তু কারা যেনো আমাদের মস্তিষ্ক বিগড়ে দিয়েছে। এখন সবকিছু সন্দেহের চোখে দেখি। অথচ সত্য জানা ও মানার কোনো ইচ্ছাই আমাদের নাই।
অন্যের ঘর পুড়ে যাচ্ছে আর আমি হাসছি। আমার ঘর তো অক্ষত আছে। আমার শত্রুপক্ষের আঘাত লেগেছে বলে আমি অন্যায়কে বাহবা দিচ্ছি। নির্যাতিতের পাশে থাকছি না। সহমর্মিতা জানাচ্ছি না। একদিন আমিও আক্রান্ত হবো। আমার পাশেও কোনো ছায়া থাকবে না। দু'দিন অপেক্ষা করুন। ছাড়খার হয়ে যাবে সব। কারো আশ্রয় আর সুরক্ষিত থাকবে না যদি অনৈক্য জোরদার থাকে।
মানুষ হিসেবে মানবতার কথা বলা দরকার। যেখানে অন্যায় হয়, যিনি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তার ধর্ম বর্ণ পরিচয় বিচার না করে মানুষ হিসেবে পাশে দাঁড়ানো উচিত। মানবিক মানুষের মূল্য আছে। সম্মান আছে চারদিকে। বিশ্বাসের পরিধিকে বিস্তৃত করতে হবে। উম্মুক্ত দৃষ্টিতে দেখতে হবে চারপাশ।
কারো হাত ছেড়ে দেয়ার আগে বুঝতে হবে, যে হাত অন্যের হাত ছেড়ে দিচ্ছে সে হাতও একা হয়ে যাচ্ছে। এক হাতের শক্তি কম। ঐক্যবদ্ধ হলে শত্রুপক্ষ সে দেয়াল ভাঙতে পারে না। তখন ক্ষতিও কম হয়। সত্য ধর্ম, সত্য মানবতা ও ঐক্যই পারে বিভাজনের এই অন্ধকারে আলো জ্বালাতে। একা একা নয়—মানুষের পাশে মানুষ থাকলেই সমাজ সভ্য হয়।
লেখক: প্রাবন্ধিক
(মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন)