দুপুর ১টা নাগাদ সর্দার বল্লভভাই পটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে লন্ডনের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলো এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান। উড্ডয়নের পরই বিমানবন্দরের অদূরে ভেঙে পড়ে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটি। ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়েন ২৪২ জন যাত্রী। বিমানটি লোকালয়ে ভেঙে পড়ার কারণে হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
এআই১৭১ নম্বরের এই বিমানটি দুপুর ১টা ১০ মিনিটে অহমদাবাদ বিমানবন্দর থেকে ওড়ে। ওড়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই মেঘানি নগরের লোকালয়ের মধ্যে বিমানটি ভেঙে পড়ে। দুর্ঘটনার পর একাধিক ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল বিমানবন্দর থেকে ওড়ার কিছুক্ষণ পরেই বিমানের লেজের অংশটি নীচের দিকে নামতে নামতে হঠাৎ মাটিতে ভেঙে পড়ে।
বিমানটি বোয়িংয়ের বি৭৮৭ ড্রিমলাইনার ছিলো। দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানটি অহমদাবাদের টার্মিনাল ২ থেকে ছেড়েছিলো। ৯ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের উড়ান শেষে সেটির নামার কথা ছিলো লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরে। এই ধরনের একটি বিমানে সর্বোচ্চ ২৯০ থেকে ৩০০ জন যাত্রী থাকতে পারে।
লোকালয়ের মধ্যে বিমানে ভেঙে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে যায়। মাটিতে আছড়ে পড়ার পর দাউ দাউ করে জ্বলতে শুরু করে বিমানটি। বিস্তীর্ণ অংশ ঢেকে যায় কালো ধোঁয়ায়। আতঙ্কে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। যানজট সৃষ্টি হয় রাস্তায়। গলগল করে বেরিয়ে আসতে দেখা যায় কালো ধোঁয়া।
ভয়াবহ এই দুর্ঘটনার পর অকুস্থলের যে ছবি প্রকাশ্যে এসেছে তাতে ধরা পড়েছে বিমানটি আছড়ে পড়ার পর তা একটি বহুতলের ওপর আটকে গিয়েছে। বিমানের সামনের অংশটি আটকে গিয়েছে বহুতলে। বহুতলটি সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে। পুড়ে কালো হয়ে গিয়েছে দেয়ালগুলো।
সূত্রের খবর, বিমানবন্দরের কাছে চিকিৎসকদের একটি হস্টেলের ওপর বিমানটি ভেঙে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, বিমানটি মাটি ছাড়ার পর সামান্য কিছুটা এগিয়েছিলো। তাই খুব বেশি উচ্চতায় উঠতে পারেনি।
উড়তে শুরু করার পর হঠাৎই বিমানটি বাঁ দিকে বাঁকতে শুরু করে। ওপরে ওঠার পরিবর্তে তা নীচের দিকে নামতে শুরু করে। পরমুহূর্তেই তা ভেঙে পড়ে যায়। আগুনের গোলা ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। এর পরেই সেটির পিছনের দিকটি নীচের দিকে নেমে গিয়ে বিমানবন্দর চত্বরের ভিতরে ‘জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেন্টার’ নামক একটি বহুতল ভবনের ওপর ভেঙে পড়ে।
দুর্ঘটনায় বিমানটি প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। দুর্ঘটনাস্থলের চতুর্দিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বিমানের চাকা ও বিভিন্ন অংশ। লোকালয়ে ভেঙে পড়ায় বহু প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঘটনাস্থলে পৌঁছোয় দমকলের একাধিক ইঞ্জিন। একযোগে উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছে আহমেদাবাদের পুলিশ, দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর।
দেশের বেসামরিক বিমান পরিবহণ নিয়ন্ত্রক সংস্থার (ডিজিসিএ) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিমানটিতে মোট ২৪২ জন যাত্রী ছিলেন। তাদের মধ্যে ২৩২ জন যাত্রী এবং ১০ জন ক্রু। বিমানের দুই পাইলটের নাম ক্যাপ্টেন সুমিত সবরওয়াল এবং ফার্স্ট অফিসার ক্লাইভ কুন্দর।
বোয়িং সংস্থার ৭৮৭-৮ বিমানটিতে যাত্রী এবং বিমানকর্মী মিলিয়ে ১৬৯ জন ভারতীয় নাগরিক ছিলেন। এ ছাড়া ৫৩ জন ব্রিটিশ, এক জন কানাডিয়ান এবং সাত জন পর্তুগিজ নাগরিক দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানটিতে ছিলেন। মনে করা হচ্ছে, এয়ার ইন্ডিয়ার দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানটিতে ছিলেন গুজরাটের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা বিজয় রূপাণী। তিনি লন্ডনে যাচ্ছিলেন। তার কোনও খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি।
দুর্ঘটনার পর আশপাশের সমস্ত রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়। স্থানীয় সূত্রে খবর, বিমানটি ওড়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই সেটি ভেঙে পড়ে। ফলে সেটি বেশি উচ্চতায় পৌঁছাতে পারেনি। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ঘটনা প্রসঙ্গে আহমেদাবাদের পুলিশ কমিশনার জিএস মালিক বলেন, ‘একটি বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে সেটি কোন ধরনের বিমান, তা এখনও স্পষ্ট নয়।’ ইতোমধ্যেই গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র পটেলকে ফোন করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। গুজরাট সরকারকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় সিভিল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই সংক্রান্ত আরো তথ্য জানার জন্য একটি নম্বর খুলেছে এয়ার ইন্ডিয়া।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্দেশে আহমেদাবাদের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ। বিমান দুর্ঘটনার খবর পেয়েই কেন্দ্রীয় বেসামরিক বিমান পরিবহণমন্ত্রী রামমোহন নায়ডুর সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র পটেলকে ফোন করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। গুজরাট সরকারকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, গ্রিন করিডর করে আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি লেখেন, ‘আহমেদাবাদের বিমান দুর্ঘটনায় আমি গভীর ভাবে শোকহত।’
আহমেদাবাদে জনবসতি অঞ্চলে বিমানটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ার আগে এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-কে বিপদবার্তা পাঠিয়েছিলো (মে ডে কল)। ফ্লাইটরাডার২৪-এর তথ্য অনুযায়ী, ভেঙে পড়ার আগে বিমানটি মাটি থেকে ৬২৫ ফুট উচ্চতায় ছিলো। সেটি দ্রুতগতিতে নীচের দিকে নেমে আসতে শুরু করে।
পাইলটের কাছ থেকে বিপদবার্তা পেয়ে এটিসি যোগাযোগের চেষ্টা করে। কিন্তু বিমানের সঙ্গে আর যোগাযোগ করা যায়নি। আপাতত দুর্ঘটনাস্থলের আশপাশের সমস্ত রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আহমেদাবাদ বিমানবন্দরেও বিমান পরিষেবা বন্ধ রয়েছে।
মেঘানি এলাকার যে বহুতল ভবনে বিমানটি ভেঙে পড়েছে, সেখানে থাকেন সিভিল হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা। তার পাশের একটি বহুতলে থাকেন রেসিডেন্ট চিকিৎসকেরা। তারা সবাই আহমেদাবাদের সিভিল হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। কত জন হতাহত হয়েছেন, তা এখন পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। অসমর্থিত একটি সূত্র অনুসারে ১৫ জন চিকিৎসক আহত হয়েছেন।
ওই বাড়িটির কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা জানা যায়নি। স্থানীয়দের দাবি, ওই হোস্টেলে প্রায় ৫০ জন ইন্টার্ন থাকতেন। দুর্ঘটনার সময়ে যারা সেখানে ছিলেন, সবারই মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে।
যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধার কাজ চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল। প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের দ্রুত উদ্ধারকাজ শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। গ্রিন করিডর করে আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত দুর্ঘটনাস্থল থেকে অন্তত ৩০টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিয়োগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।