জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শহীদ সালাম-বরকত হলে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
সম্প্রতি ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ককটেল বিস্ফোরণ ও জাবিতে এ ঘটনার পর নিরাপত্তার স্বার্থে আবাসিক হলগুলো তল্লাশি চান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, জাকসু নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্যাম্পাসে যেন কোন ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে তাই যৌথবাহিনী বা রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সহায়তায় হলগুলোতে তল্লাশি চান তারা।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন বাবর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো স্থান থেকে অস্ত্র উদ্ধার খুবই ন্যাক্কারজনক। সামনে জাকসু সঠিক সময়ে না হওয়ার জন্য একটি মহল এরূপ ঘটনা ঘটাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের ভয় দেখানোও এর উদ্দেশ্য হতে পারে। আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানাবো শিগগিরই সব হল তল্লাশি করে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
শাখা শিবিরের সভাপতি মহিবুর রহমান মুহিব বলেন, ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দাসত্বের চিত্র তুলে ধরেছে সালাম বরকত হলের অস্ত্র পাওয়া। সামনের জাকসু নির্বাচন পিছানোর টালবাহানাও হতে পারে এটি। আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি দ্রুত এর তদন্ত করে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি অমর্ত্য রায় বলেন, সালাম বরকত হলের উদ্ধারকৃত অস্ত্রটি ১০/১৫ বছর আগের মনে হচ্ছে, যা তৎকালীন সময়ের রাজনৈতিক নিপীড়নের ও সহিংসতার চিহ্ন। সর্বশেষ গত বছরের ১৫ জুলাই আমরা এমন অস্ত্র ব্যবহার করতে দেখেছি ছাত্রলীগ কর্তৃক। পুরোনো সব হলেই খুঁজলে এমন আরো অস্ত্র পাওয়া যেতে পারে। আমরা চাই সব আবাসিক হলগুলোতে প্রশাসন যেন তল্লাশি করে।
গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, জাকসু নির্বাচনের আগ মুহূর্তে সালাম-বরকত হলে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং গুরুতর নিরাপত্তা শঙ্কার ইঙ্গিত বহন করে। কে বা কারা এই অস্ত্র সেখানে রেখেছে, তা দ্রুততম সময়ে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। প্রশাসনের উচিত ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে জড়িতদের শনাক্ত করা এবং আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা। জাকসুর মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নির্বিঘ্নভাবে সম্পন্ন করতে হলে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। এ অবস্থায় প্রতিটি হলে নিয়মিত তল্লাশি চালানো এবং সার্বিক নিরাপত্তা জোরদার করা প্রশাসনের দায়িত্ব।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের জাবি শাখার আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পূর্ববর্তী সময়ে হলগুলোতে যে ধরনের সংস্কৃতি প্রচলিত ছিল, শহীদ সালাম-বরকত হলে প্রাপ্ত দেশীয় অস্ত্র নতুন করে সেই বিষয়গুলোর বার্তা বহন করে। সেই জায়গা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে হলে হলে তল্লাশি করা। জাকসু নির্বাচনকে বানচাল করতে একটা কুচক্রী মহল কাজ করছে। তারা ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চান। এই ব্যাপারে প্রশাসনের আরো কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক রাশিদুল আলম বলেন, আজকের অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়টি শিগগিরই সুষ্ঠু তদন্ত করা হবে। এছাড়া সামনে সিন্ডিকেট মিটিংয়ে বসে হলগুলোতে তল্লাশি চালানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি তাকে।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ ৩৩ বছর পর গত ৩০ এপ্রিল রাতে জাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। তফসিল অনুযায়ী আগামী ৩১ জুলাই জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। জাকসু নির্বাচন যাতে নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হয় তাই দ্রুত হলগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।