৫৩ বছর বয়সে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছেন রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার সালেহা বিবি। উপজেলার ভবানীগঞ্জ কারিগরি অ্যান্ড ব্যবস্থাপনা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন তিনি। বাল্যবিয়ের শিকার হয়েও পড়াশোনা করার দুর্বার ইচ্ছে এতটুকু মলিন হয়নি সালেহার। বাংলার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য নারীর অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছেন তিনি।
সালেহা বিবির বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তক্তপাড়া গ্রামে। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার জন্ম ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ৫ মার্চ। তার স্বামী শাহার আলী তক্তপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক।
গত সোমবার রাতে তক্তপাড়া গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পড়ার টেবিলে বসে আছেন সালেহা। বড় ছেলে চাকরির প্রস্তুতির জন্য যে টেবিলে পড়তেন, এখন সেখানে ছেলের বইয়ের পাশে নিজের বই খুলে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।
সালেহা বিবি বলেন, লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ থেকেই আবার পড়া শুরু করেন। স্বামী ও ছেলেরা সহযোগিতা করায় ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে নতুন করে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন উপজেলার শ্রীপুর রামনগর টেকনিক্যাল বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের ভোকেশনাল শাখায়। সেখান থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর ভর্তি হন ভবানীগঞ্জ কারিগরি অ্যান্ড ব্যবস্থাপনা কলেজে। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন গত ২৬ জুন শুরু হওয়া এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন তিনি। তার ভাষ্য, পরীক্ষা ভালো হচ্ছে।
জীবনের গল্প শোনাতে গিয়ে সালেহা বলেন, তার বাবার বাড়ি উপজেলার অর্জুনপাড়া গ্রামে। বাবা আবদুস সাত্তার ছিলেন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় তার বিয়ে হয়। সালেহা বলেন, বিয়েতে আমি রাজি ছিলাম না। কিন্তু পরিবারের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার উপায় ছিল না।
স্বামী ও দুই ছেলেকে নিয়ে সালেহার পরিবার। বড় ছেলে শামীম হোসেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। ছোট ছেলে সাগর হোসেন রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজে স্নাতক শ্রেণিতে পড়ছেন।
লেখাপড়া শুরু করার বিষয়ে সালেহা বলেন, আমরা ছয় ভাইবোনের মধ্যে চারজনই শিক্ষিত। তারা সবাই শিক্ষকতা পেশায় রয়েছেন। আমি কেন পিছিয়ে থাকব? সুযোগ থাকলে স্নাতক শেষ করে এলএলবি পড়ে আইন পেশায় নিয়োজিত হওয়ার ইচ্ছা আছে।
তক্তপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহার আলী বলেন, স্ত্রী সালেহা বিবির মধ্যে অদম্য ইচ্ছাশক্তি দেখেছি। লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ আছে। ছেলেদের সুশিক্ষিত করার পর এখন নিজে শিক্ষিত হওয়ার চেষ্টা করছে। সংসার সামলেই সে লেখাপড়া করছে।
সালেহার বড় ছেলে শামীম হোসেন বলেন, আমাদের লেখাপড়া শেখানোর জন্য মায়ের অবদান বেশি। এই বয়সে মায়ের লেখাপড়ার টান ও ধৈর্য দেখে আমি অবাক। মায়ের জন্য গর্ব হয়।
ভবানীগঞ্জ কারিগরি অ্যান্ড ব্যবস্থাপনা কলেজের সহকারী অধ্যাপক আশরাফুল ইসলাম বলেন, সালেহা বিবি তার প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত শিক্ষার্থী।
তিনি অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসেই পরীক্ষা দিচ্ছেন। এই বয়সেও তাঁর আগ্রহ প্রশংসনীয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।