ছড়াচ্ছে করোনা, সক্রিয় মাস্ক সিন্ডিকেট | করোনা নিউজ

ছড়াচ্ছে করোনা, সক্রিয় মাস্ক সিন্ডিকেট

দেশে নতুন করে আবারও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে না বাড়তেই পাইকারি পর্যায়ে মাস্কের দাম বাড়িয়ে দ্বিগুণ করেছেন এক দল ব্যবসায়ী।

#করোনা ভাইরাস #মাস্ক #স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

দেশে নতুন করে আবারও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে না বাড়তেই পাইকারি পর্যায়ে মাস্কের দাম বাড়িয়ে দ্বিগুণ করেছেন এক দল ব্যবসায়ী। এতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। অতিরিক্ত দামে মাস্ক কিনে পরতে হচ্ছে তাদের।

গত শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে শনাক্ত হয়েছেন আরও ১৫ জন।

বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় মোট ১৭৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। সেই হিসাবে শনাক্তের হার ৮ দশমিক ৬২ শতাংশ। একই সময়ে সুস্থ হয়েছেন তিনজন। ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া দুজনই নারী। তাদের মধ্যে একজনের বয়স ২১ থেকে ৩০ ও অন্যজনের বয়স ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে। দুজনের একজন ঢাকা বিভাগ, অন্যজন চট্টগ্রাম বিভাগের। একজন সরকারি হাসপাতালে ও অন্যজন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার বর্তমান ধরনটি আগের চেয়ে কিছুটা মৃদু হলেও বয়স্ক ও অসুস্থদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। তাই সবাইকে সতর্ক হয়ে চলাফেরা করতে হবে। এ ছাড়া আগের মতো যেন সিন্ডিকেট সক্রিয় হতে না পারে, সেদিকে সরকারের খেয়াল রাখতে হবে।

মাস্ক বাজারে কৃত্রিম সংকট করোনার সংক্রমণ বাড়ার খবরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাস্কের চাহিদা বেড়েছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কিছু ব্যবসায়ী ও মাস্ক প্রস্তুতকারক কোম্পানি মাস্ক মজুত করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।

ঢাকার মিটফোর্ড, চকবাজার, সূত্রাপুর ও গেন্ডারিয়া এলাকার পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাত্র কয়েকদিন আগেও যে মাস্কের ৫০ পিসের একটি বক্স পাওয়া যেত ১০০ টাকায়, সেটি এখন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়। খুচরা পর্যায়ে এক বক্স মাস্কের দাম ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। সার্জিক্যাল মাস্কের পাশাপাশি দাম বেড়েছে এন-৯৫ মাস্কেরও। এতদিন ১০ টাকা দরে এই মাস্ক বিক্রি হলেও হঠাৎ করে প্রতি পিস মাস্কের দাম হয়েছে ২০ টাকা। হঠাৎ করে মাস্কের দাম বাড়ায় ক্রেতাদের মধ্যে চাপা আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলছেন, এখনই মাস্কের দাম নাগালে আনতে না পারলে সামনে দাম বেড়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ হবে।

সূত্রাপুরের চৈতি ফার্মেসির রাহুল পাল বলেন, কোনো কোম্পানির সার্জিক্যাল মাস্ক পাওয়া যাচ্ছে না। স্কয়ার কোম্পানির সেপনিল সার্জিক্যাল মাস্ক অর্ডার করেছি চার থেকে পাঁচ দিন হলো। এখনো পাইনি। মাস্কের চাহিদা আগের থেকে অনেক বেড়েছে। কিন্তু দাম বাড়িয়ে দিয়েও চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করছে না কোম্পানিগুলো। আগে যে মাস্ক ১০০ টাকা দিয়ে ৫০ পিসের বক্স কিনতাম, সেটা এখন ১৫০ টাকা। তবুও পাচ্ছি না।

করোনার প্রথম ঢেউয়ে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও গ্লাভসের বাজারেও একই ধরনের সিন্ডিকেট দেখা গিয়েছিল। অতিরিক্ত দাম, নিম্নমানের পণ্য, ভুয়া সনদ লেখা মাস্ক তখন বাজার ভরে দিয়েছিল।

এবারও একই কৌশলে বাজারে ছড়িয়ে পড়েছে সন্দেহজনক কোম্পানির মাস্ক। অধিকাংশ মাস্কের গায়ে লেখা রয়েছে ‘আইএসও’ বা ‘সিই’ সনদ; কিন্তু বাস্তবে তা যাচাই করার কোনো ব্যবস্থা নেই।

বাংলাদেশে প্রথম কভিড-১৯ শনাক্ত হয় ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ৮ মার্চ। এরপর জুন-জুলাইয়ে সংক্রমণ দ্রুত বাড়ে। সেই বছরের শেষদিক পর্যন্ত চলতে থাকে কঠোর লকডাউন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর প্রচণ্ড চাপ।

২০২১ খ্রিষ্টাব্দের মাঝামাঝি ‘ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট’-এর কারণে দেশে প্রতিদিন শতাধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করতে থাকে। এরপর ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট কিছুটা স্বস্তি এনে দিলেও নতুন উপধরনগুলো মাঝেমধ্যেই উঁকি দিচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে করোনাকে বৈশ্বিক জরুরি স্বাস্থ্য সংকট হিসেবে ঘোষণা প্রত্যাহার করলেও বিশেষজ্ঞরা বারবার সতর্ক করে দিচ্ছেন—ভাইরাসটি রয়ে গেছে, কেবল রূপ পরিবর্তন করে ফিরে আসছে।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এখনো মাস্ক বাজারে কোনো তদারকি বা অভিযান পরিচালনার খবর পাওয়া যায়নি। ফলে সিন্ডিকেট গোষ্ঠী কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

এ দিকে, সরকারি কোনো ওয়েবসাইটেও মাস্কের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করা হয়নি, ফলে ভোক্তারা নিরুপায় হয়েই চড়া দাম দিয়ে মাস্ক কিনছেন। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী মাস্ক না পাওয়ায় অনেকে ক্ষোভ ঝাড়ছেন।

ফার্মেসিতে মাস্ক কিনতে আসা তৌহিদুল ইসলাম নামে একজন ক্রেতা বলেন, খবরে দেখছি করোনার প্রকোপ আবার বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞরা মাস্ক পরাসহ বিভিন্ন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। কিন্তু ফার্মেসিতে এলাম মাস্ক কিনতে, এসে দেখি মাস্ক নেই। দামও নাকি বেড়েছে। বাড়তি দাম দিয়েও মাস্ক পাচ্ছি না।

স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশ্লেষকরা বলছেন, মাস্ক হলো একটি প্রাথমিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা। সরকারকে এখনই বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে, না হলে স্বাস্থ্য সংকটের পাশাপাশি অর্থনৈতিক শোষণ বাড়বে। শুধু মাস্ক নয়, হাসপাতাল প্রস্তুতি, জনসচেতনতা ও গণমাধ্যমে নিয়মিত আপডেট থাকা জরুরি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে ২৯ হাজার ৫০২ জন মারা গেছেন। এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ২০ লাখ ৫১ হাজার ৮০০ জন।

#করোনা ভাইরাস #মাস্ক #স্বাস্থ্য অধিদপ্তর