পুত্রসন্তানের বদলে কন্যার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে বিশ্বজুড়ে: গবেষণা | বিবিধ নিউজ

পুত্রসন্তানের বদলে কন্যার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে বিশ্বজুড়ে: গবেষণা

বিশ্বজুড়ে বাবা-মায়েদের মানসিকতায় এক উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে।

#শিক্ষক #শিশু #ছাত্রী

বিশ্বজুড়ে বাবা-মায়েদের মানসিকতায় এক উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। বলছে, ঐতিহ্যগতভাবে পুত্রসন্তানকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার প্রবণতা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে, আর তার জায়গা দখল করছে কন্যাসন্তানের প্রতি আগ্রহ।

বিশেষ করে, জনসংখ্যায় বৃহৎ দুই দেশ চীন ও ভারতের প্রেক্ষাপটে এই পরিবর্তনটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এক সময় এই দুই দেশে খুব সহজেই মানুষ আলট্রাসাউন্ড প্রযুক্তির সাহায্যে গর্ভে থাকা সন্তানের লিঙ্গ জেনে যেত এবং বিপুলসংখ্যক কন্যাভ্রূণ গর্ভপাতের শিকার হতো।

বুধবার (১১ মে) যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক দ্য টাইমস জানিয়েছে, ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এভাবে আনুমানিক ২ কোটির বেশি কন্যাশিশু জন্মানোর আগেই হারিয়ে গেছে। তবে ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বাভাস বলছে, সারা বিশ্বে এবার কন্যাভ্রূণ গর্ভপাতের সংখ্যাটি নেমে আসবে মাত্র ১ লাখ ৭ হাজারে—যা ২০০০ খ্রিষ্টাব্দের তুলনায় সাত গুণ কম। ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্বজুড়ে ৮ লাখ ৬ হাজার কন্যাভ্রূণ গর্ভপাতের শিকার হয়েছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ কোরিয়া এই রূপান্তরের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। ১৯৯০-এর দশকে প্রতি ১০০ কন্যার বিপরীতে ১১৭টি ছেলে জন্মালেও বর্তমানে এই হার স্বাভাবিক ১০৫: ১০০-তে নেমে এসেছে। অর্থাৎ দেশটিতে বর্তমানে ১০৫ জন কন্যার বিপরীতে ১০০ ছেলের জন্ম হচ্ছে।

চীন ও ভারতে এখনো প্রতি ১০০ কন্যার বিপরীতে ১১১ এবং ১০৭ জন ছেলে জন্ম নিচ্ছে। তারপরও এই দুটি দেশে ধীরে ধীরে ভারসাম্য ফিরছে।

পশ্চিমা দেশগুলোতেও মনোভাবের এই পরিবর্তন লক্ষণীয়। ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে ‘ডেমোগ্রাফিক রিসার্চ’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়—বেলজিয়াম, জার্মানি, ফ্রান্সসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে প্রথম সন্তান মেয়ে হলে দ্বিতীয় সন্তান নেওয়ার প্রবণতা কম, অর্থাৎ অনেক বাবা-মা মেয়ে সন্তানই চাচ্ছেন।

ফিনল্যান্ডে ১৯৮০-এর দশকে প্রথম সন্তান কন্যা হলে মায়েরা তুলনামূলকভাবে দ্রুত সন্তানের বাবার কাছ থেকে আলাদা হয়ে যেতেন। তবে ১৯৯০-এর পর থেকে এই প্রবণতা মিলিয়ে গেছে।

বাংলাদেশ ও সাব-সাহারান আফ্রিকার অনেক অংশেও পরিবারে ছেলে-মেয়ে সংখ্যার ভারসাম্যকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

জাপানে একটি সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, এক সন্তান নিতে ইচ্ছুক দম্পতিদের ৭৫ শতাংশই কন্যাসন্তানকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন—যেখানে ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে এই হার ছিল মাত্র ৫০ শতাংশের নিচে।

যুক্তরাষ্ট্রে কন্যাসন্তানের চাহিদা এতটাই বেড়েছে যে, আইভিএফ-এর মাধ্যমে সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে কন্যা ভ্রূণ বেছে নেওয়ার হার বেড়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কন্যাসন্তানকে এখন অনেকেই যত্নশীল ও সহজে বড় করা যায়—এমন ধারণা থেকে বেশি পছন্দ করছেন। চীনে অতিরিক্ত ছেলে সন্তান থাকায় অনেক ছেলের বিয়ে হচ্ছে না, তাই ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক অভিভাবক উদ্বিগ্ন।

ব্রিটেনে ছেলেদের মধ্যে বেকারত্ব ও শিক্ষা বিচ্যুতি বেড়েছে। এর ফলে অনেক পরিবার এখন মেয়েকেই ‘নিরাপদ বাজি’ হিসেবে দেখছে। সব মিলিয়ে, শত শত বছর ধরে পুত্রসন্তান পছন্দের ধারা বদলাচ্ছে এবং কন্যাসন্তান হয়ে উঠছে ভবিষ্যতের আশ্বাস।

#শিক্ষক #শিশু #ছাত্রী