যোগ্যতাহীনদের যতই গবেষণার জন্য টাকা দেন না কেন কোন লাভ নাই বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন।
মঙ্গলবার (৩ জুন) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ কথা বলেন।
অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুনের পোস্টটি নিচে হুবহু তুলে ধরা হলো—
যাদের গবেষণার যোগ্যতা নাই তাদেরকে আপনি যতই গবেষণার জন্য টাকা দেন না কেন কোন লাভ নাই। বরং তাকে তার যোগ্যতার চেয়ে বেশি টাকা দিয়ে তাকে অসৎ বানানোর রিস্ক তৈরি হয়। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের মাধ্যমে heqep প্রজেক্ট দিয়ে কি কোন লাভ হয়েছে? গবেষণা দুই প্রকার যথা disruptive এবং incremental! এই প্রজেক্ট দিয়ে শত শত কোটি টাকা খরচ করে দেশে কি একটাও disruptive রিসার্চ হয়েছে? অল্প যা কিছু হয়েছে তার প্রায় সবগুলোই incremental research যেইগুলোর অধিকাংশই দেশি জার্নাল বা গার্বেজ জার্নালে প্রকাশ করে বিশাল অংকের টাকা শেষ করে ফেলা হয়েছে। এখন আবার একই ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের টাকায় হিট প্রজেক্ট চলছে। এখানেও আমি বিন্দুমাত্র লাভ দেখি না। এর চেয়ে ভালোভাবে অর্থ অপচয় আর হতে পারে না। আমাদের নীতিনির্ধারকরা যে কতটা অযোগ্য এইসব প্রজেক্ট নেওয়া তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ।
বাংলাদেশেতো গবেষণার ইকোসিস্টেমই তৈরি করা হয়নি। এইসব রিসার্চ প্রজেক্ট হাতে নেওয়ার আগে আমাদের উচিত ছিল বিশ্বমানের গবেষক হান্ট বা চীনের মত সহস্র না হউক শতাধিক ট্যালেন্ট হান্ট প্রজেক্ট নেওয়া উচিত ছিল। আগে বিশ্বমানের গবেষক নিয়োগ দিয়ে সেই যোগ্যদের যথেষ্ট অর্থ দিলে তবেই না সত্যিকারের গবেষণা হবে। বাংলাদেশে যেইটুকু গবেষণা হয় সেটাকে ইনক্রিমেন্টাল রিসার্চ বলে। মানে কিছু করে খাওয়া আরকি। ইন ফ্যাক্ট সারা পৃথিবীতেই মোট গবেষণার একটি বড় অংশ ইনক্রিমেন্টাল গবেষণাই হয়। সব প্রজেক্টই disruptive গবেষণা হবে তা অসম্ভব। কিন্তু মোট গবেষণার একটা ভালো অংশতো ভালো মানের গবেষণা হতে হবে। যেই গবেষণার মাধ্যমে পিএইচডি হবে। ভালো গবেষণার লিটমাস টেস্ট হলো দুটি। প্রথমত, সেই গবেষণা বিশ্বসেরা জার্নালে প্রকাশিত হবে এবং দ্বিতীয়ত সেই গবেষণার মাধ্যমে যারা পিএইচডি করবে তারা ইউরোপ বা আমেরিকায় পোস্ট-ডক ফেলোশিপ পাবে। গত ৫৪ বছরে বাংলাদেশে পিএইচডি করে আমেরিকা বা ইউরোপে কেউ পোস্ট-ডক ফেলোশিপ পেয়েছে? আমরা জানামতে একটিও না। কারণ ফেলোশিপ পাওয়ার মত পিএইচডি মোটা দাগে বলা যায় হয়ইনি। হওয়ার পরিবেশই আমরা তৈরি করিনি।
গবেষণার পরিবেশ তৈরি করার ড্রাইভটা আসতে হবে সরকার থেকে। আমাদের সরকারের নীতি নির্ধারণীতে গত ৩০ বছরে এমন একজনকেও দেখিনি যারা দেশের উন্নয়নের সঙ্গে গবেষণা যে নিবিড়ভাবে জড়িত সেটাই বোঝে না। যদি বুঝতো তাহলে পরমাণু শক্তি কমিশনের মত গবেষণা সেন্ট্রিক প্রতিষ্ঠানকে মন্ত্রণালয়ের অধীনে দিত না। যেই মন্ত্রণালয়ের আমলারা মনে করে পোস্ট-ডক কোন ডিগ্রি না, কারণ এর জন্য কোন সার্টিফিকেট নাই তাই পোস্ট-ডকের জন্য ছুটি দেওয়া যাবে না। বলদামি আর কাকে বলে। একজন আমেরিকার ফুল ব্রাইট স্কলারশিপ পেয়েছে তাকে ছুটি দেয়নি। ফলে সে আদালতে গিয়েছে। আদালত তার পক্ষে রায় দিয়েছে। লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে সেই রায়ের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয় আপিল করেছে। তাহলে এই দেশে কিভাবে গবেষণা হবে। অথচ আমলারা দেশের মানুষের ট্যাক্সের টাকায় পিএইচডি করতে যায়, কনফারেন্সের নামে আনন্দ ভ্রমণে যায়।