পাকিস্তান ও মরক্কোয় কোরবানিতে বাধা | বিবিধ নিউজ

পাকিস্তান ও মরক্কোয় কোরবানিতে বাধা

সম্প্রতি পাকিস্তান ও মরক্কো থেকে আসা খবরে কোরবানির এই ঐতিহ্য পালনে কিছু বাধার চিত্র উঠে এসেছে। যা মুসলিম বিশ্বের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রতি বছর মুসলিম বিশ্বে পালিত হয় পবিত্র ঈদুল আজহা। যা ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত। এই দিনে পশু কোরবানির মাধ্যমে মুসলমানরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করেন।

তবে, সম্প্রতি পাকিস্তান মরক্কো থেকে আসা খবরে কোরবানির এই ঐতিহ্য পালনে কিছু বাধার চিত্র উঠে এসেছে। যা মুসলিম বিশ্বের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই দুটি ঘটনার পাশাপাশি বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে পাকিস্তানে আহমদিয়াদের ঈদ পালনে বাধা দেয়া হয়েছে রাষ্ট্রীয় ভাবে। দেশটির আহমদিয়া মুসলিম সম্প্রদায় দীর্ঘকাল ধরে বৈষম্য নিপীড়নের শিকার।পাকিস্তানের সংবিধান তাদের অমুসলিম ঘোষণা করেছে এবং বিভিন্ন আইন তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা খর্ব করেছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বছরও ঈদ পালনে আহমদিয়াদের ওপর বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

বিশেষ করে পশু কোরবানির ক্ষেত্রে তাদের বাধা দেওয়া হয়েছে। অনেক জায়গায় আহমদিয়াদের প্রকাশ্যে কোরবানি করতে নিষেধ করা হয়েছে এবং কোরবানির পশুর ছবি তোলা বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করা থেকেও বিরত থাকতে বলা হয়েছে। এই ধরনের বিধিনিষেধ আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মৌলিক ধর্মীয় অধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

পাকিস্তানের ধর্মীয় উগ্রপন্থী গোষ্ঠীগুলো প্রায়শই আহমদিয়াদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বিদ্বেষমূলক প্রচারণা চালিয়ে থাকে।  যা তাদের ঈদ পালনে বাধার একটি অন্যতম কারণ। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বারবার পাকিস্তানের এই বৈষম্যমূলক আচরণের নিন্দা জানালেও পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি হয়নি।

অপর দিকে মরক্কোয়  এবছর পশু কোরবানি না দিতে রাষ্ট্রীয় ভাবে ফরমান জারি করেছেন দেশটির বাদশা।  উত্তর আফ্রিকার দেশ মরক্কো থেকে এসেছে এমন সম্পূর্ণ ভিন্ন এক খবর। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মরক্কোর বাদশা ষষ্ঠ মোহাম্মদ বছর দেশের নাগরিকদের পশু কোরবানি না দেওয়ার নির্দেশ জারি করেছেন।

এই ফরমানের পেছনে প্রধানত অর্থনৈতিক কারণকে দায়ী করা হয়েছে। মরক্কো বর্তমানে তীব্র খরার সম্মুখীন এবং এর ফলে কৃষি পশুপালন খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পশুসম্পদের ওপর চাপ কমাতে এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যদিও এই ফরমান দেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। অনেকেই বাদশার এই সিদ্ধান্তকে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে প্রয়োজনীয় বলে মনে করলেও, কেউ কেউ এটিকে ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।

মরক্কোর ইসলামিক স্কলার এবং ধর্মীয় নেতারা এই বিষয়ে সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং কোরবানির বিকল্প হিসেবে দরিদ্রদের সাহায্য করার ওপর জোর দিয়েছেন।

এটি একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা, কারণ সাধারণত মুসলিম দেশগুলোতে ঈদ কোরবানির ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় না।

উপরে উল্লিখিত দুটি ঘটনা ছাড়াও, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ঈদ কোরবানির ওপর ভিন্ন ভিন্ন ধরনের বাধা বা বিধিনিষেধ দেখা যায়। কিছু পশ্চিমা দেশে পশু অধিকার কর্মীদের আন্দোলনের কারণে উন্মুক্ত স্থানে কোরবানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেখানে নির্দিষ্ট কসাইখানা বা স্লটারহাউসে কোরবানি করার নিয়ম চালু আছে।

আবার, কিছু দেশে পরিবেশগত উদ্বেগের কারণে কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ওপর কঠোর নিয়ম আরোপ করা হয়েছে। মুসলিম দেশগুলোতে অবশ্য সাধারণত কোরবানির ওপর কোনো বড় ধরনের বিধিনিষেধ থাকে না।

তবে অর্থনৈতিক সংকট, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ক্ষেত্রবিশেষে কিছু ব্যতিক্রম দেখা যেতে পারে।

পাকিস্তান মরক্কোর ঘটনা দুটি ঈদ কোরবানির ঐতিহ্য পালনে ভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত দেয়। পাকিস্তানে আহমদিয়াদের ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ ধর্মীয় স্বাধীনতার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং এটি দেশটির সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্যের একটি চলমান চিত্র।

অন্যদিকে, মরক্কোর বাদশার ফরমান প্রাকৃতিক দুর্যোগ অর্থনৈতিক সংকটের মুখে একটি দেশের বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ হিসেবে দেখা যেতে পারে।

যদিও এটি একটি ধর্মীয় প্রথার ওপর বিরল হস্তক্ষেপ। এই ঘটনাগুলো মুসলিম বিশ্বে ধর্মীয় স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং পরিবেশগত বিবেচনার মধ্যে একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্যের প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরে।