ছবি : সংগৃহীত
এবার ৪৪ আমলার পদত্যাগের দাবিতে রাজধানীতে পোস্টারিং হয়েছে। ঢাকা শহরের তোপখানা রোড, সচিবালয়ের আশপাশ, সেগুনবাগিচা এবং মেট্রোরেলের পিলারগুলোতে সরকারের ৪৪ জন উচ্চপদস্থ আমলার অপসারণের দাবিতে ‘জুলাই মঞ্চ’-এর ব্যানারে পোস্টারিং করা হয়েছে।
এর আগে একইভাবে চলতি বছরের মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে এসব স্থানগুলোতে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী শিক্ষার্থীদের’ ব্যানারে সরকারের পাঁচ সচিব ও তিনটি অধিদফতরের তিন শীর্ষ কর্মকর্তার ছবি সম্বলিত পোস্টারিং করা হয়েছিল।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এসব পোস্টার দেখা গেছে, ‘গণহত্যা ও ফ্যাসিবাদ কায়েমের সহযোগী আমলাদের অপসারণ চাই’ শিরোনামে এই পোস্টারিং করা হয়েছে।
এবার প্রশাসনের যাদের বিরুদ্ধে পোস্টারিং করা হয়েছে, তারা হলেন- অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান।
ভুমি আপীল বোর্ডের চেয়ারম্যান মুহম্মদ ইব্রাহিম। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মুসফিকুর রহমান। অর্থ বিভাগের সচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার। পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য রুহুল আমিন। দুদকের সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন। পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের সচিব আমিন উল আহসান।
বিপিএটিসির রেক্টর সাঈদ মাহবুব খান। বিজ্ঞান প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোকাব্বির হোসেন। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব সাঈদুর রহমান।
জাতীয় উন্নয়ন প্রশাসন একাডেমির রেক্টর ড. মুহম্মদ সহিদ উল্লাহ। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস একাডেমির রেক্টর ড. মো. ওমর ফারুক। শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষর নির্বাহী চেয়ারম্যান নাসরীন আফরোজ। বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. জয়নুল বারি। সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মুসলিম চৌধরী। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আশরাফ উদ্দিন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইশরাত চৌধুরী। বিশ্ব ব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক শরিফা খান। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের।
স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারী। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার বিভাগের সচিব জাহেদা পারভীন। ইআরডি সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী। পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য এ এম আকমল হোসেন আজাদ ও ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন।
জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমির মহাপরিচালক সুকেশ কুমার সরকার। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সংযুক্ত সচিব মোহাম্মদ মাহমুদুল হোসাাইন খান। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান। ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতররের মহাপরিচালক মোহাম্মদ সাইদুর রহমান।
যুব উন্নয়ন অধিদফতরের মহাপরিচালক গাজী মহম্মদ সাইফুজ্জামান। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান ড. লিপিকা ভদ্র।
জাতীয় স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মো. আব্দুল কাইয়ুম। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক সালেহ আহমেদ মোজাফফর। মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের মহাপরিচালক কেয়া খান।
জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. মোহাম্মদ বশিরুল আলম। ওয়াশিংটন ডিসির ইকোনমিক মিনিস্টার মেহেদী হাসান।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুর রউফ। সরকারি কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক কাজী এনামুল হাসান এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুর রহমান।
‘জুলাই মঞ্চ’র ব্যানারে এসব পোস্টার রাতের অন্ধকারে রাজধানীর বিভিন্ন দেওয়াল বিশেষ করে সচিবালয়ের আশেপাশের দেওয়ালে সাঁটানো হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
মেট্রোরেলের বাংলাদেশ সচিবালয় স্টেশনের আশেপাশে এবং এর পিলারে লাগানো ব্যাপক পরিমাণের পোস্টার চোখে পড়েছে। ‘জুলাই মঞ্চ’-এর ব্যানারে পোস্টার লাগানো হলেও এর সঙ্গে যুক্ত কাউকেই এখন পর্যন্ত শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
গত ২৭ জুলাই সন্ধ্যার পরে রাজধানীর সেগুন বাগিচা এলাকায় পোস্টার লাগানোর সময় একজনকে তার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি জানান, তার নাম কায়কোবাদ হোসেন।
তিনি রাজধানীর রায়েরবাগ এলাকায় বসবাস করেন। তিনি পারিশ্রমিকের বিনিময়ে পোস্টারগুলো লাগাচ্ছেন। কায়কোবাদ হোসেন জানিয়েছেন, ৫০০ পোস্টার লাগাতে পারলে ১ হাজার টাকা পাবেন।
কায়কোবাদ জানিয়েছেন, রাজধানীর পল্টন এলাকায় বসবাসকারী মো. আলম নামে একজন এসব পোস্টার লাগানোর জন্য তাকে বলেছেন। তার সঙ্গে আরও চার জন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পোস্টার লাগানোর কাজ নিয়েছেন। প্রত্যককেই একই হারে পারিশ্রমিক দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কায়কোবাদ।
যেসব কর্মকর্তার অপসারণের দাবিতে পোস্টার লাগানো হয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম মো. আবদুর রহমান খান। তিনি ২০২৪ সালের ১৫ আগস্ট অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করেন। এরআগে তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিসিএস ১৩তম ব্যাচের এই কর্মকর্তা ১৯৯৪ সালের ২৫ এপ্রিল বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (কর) ক্যাডারে যোগদান করেন।
একজন পেশাদার অ্যাকাউন্ট্যান্ট হিসেবে মো. আবদুর রহমান খান ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ-এর কাউন্সিল সদস্য, কোষাধ্যক্ষ, সচিব ও প্রেসিডেন্ট হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন।
বর্তমানে তিনি সাউথ এশিয়ান ফেডারেশন অব অ্যাকাউন্ট্যান্টসের নন-প্রফিট অর্গানাইজেশন অ্যান্ড কো-অপারেটিভ কমিটির চেয়ারম্যান এবং কনফেডারেশন অব এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক অ্যাকাউন্ট্যান্টসের পাবলিক সেক্টর অ্যাডভাইজরি গ্রুপের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।
পোস্টারে নাম থাকা আরেক আমলা ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান। তিনি পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে চলতি বছরের ১৪ আগস্ট নিয়োগ পান। সেদিনই তিনি কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে যোগদান করেন। এরআগে তিনি পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ছিলেন। তারও আগে স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিকল্পনা, পরিবীক্ষণ, মূল্যায়ন ও পরিদর্শন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ছিলেন ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান।
পোস্টারে ছবিসহ নাম এসেছে নাজমা মোবারেকেরও। তিনি সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব। গত বছরের ৩১ অক্টোবর আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব হিসেবে যোগদান করেন।
এ বিভাগে যোগদানের পূর্বে তিনি মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি গত ২০২৩ সালের ৫ জুন সচিব হিসেবে পদোন্নতি পান এবং ৬ জুন থেকে ২০২৪ সালের ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
সচিব হিসেবে যোগদানের পূর্বে তিনি অতিরিক্ত সচিব হিসেবে অর্থ বিভাগে কর্মরত ছিলেন। নাজমা মোবারেক বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১৩তম ব্যাচের একজন কর্মকর্তা।
পোস্টারে নাম থাকা আরেক আমলা ফারহিনা আহমেদ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব। তিনি ২০২২ সালের ২২ মে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে যোগদান করেন। সরকারি চাকরিতে ৩০ বছরের পথ পরিক্রমায় তিনি অর্থ বিভাগে অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসচিব এবং উপসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়া, তিনি বিসিএস প্রশাসন একাডেমির পরিচালক এবং ওই একাডেমির সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও মাঠ প্রশাসনের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ড. আহমেদ বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের একাদশ ব্যাচের একজন কর্মকর্তা।
২০২২ সালের ১৫ ডিসেম্বর সচিব হিসেবে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেন নাজমুল আহসান। পোস্টারে তারও নাম রয়েছে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে যোগদানের আগে তিনি বাংলাদেশ তৈল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
তিনি ১৯৯৪ সালের ২৫ এপ্রিল বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ত্রয়োদশ ব্যাচে প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান করেন এবং মাঠ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে কাজ করেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও বান্দরবান পার্বত্য জেলার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সহকারী কমিশনার হিসেবে, শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট, নেত্রকোনা সদর ও নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসাবে এবং কুমিল্লা জেলায় নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) হিসেবে কাজ করেন।
তিনি ২০১৭ সালে খুলনা জেলার জেলা প্রশাসক হিসেবে কর্মরত থাকাকালে জনসেবা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘জনপ্রশাসন পদক’ লাভ করেন। এছাড়া ২০২২ সালে পেট্রোবাংলা’র চেয়ারম্যান পদে কর্মকালে তিনি শুদ্ধাচার পুরস্কার পান।
অপসারণের দাবিতে পোস্টারিংয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি (পোস্টার লাগানো) আগেরবারও আমার জানা ছিল না, এবারও না। সরকার যতদিন এই পদে রাখবে, ততদিনই আমি আমার দায়িত্ব পালন করবো। এর বেশি তো বলার কিছু নেই।’
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোকাব্বির হোসেন জানিয়েছেন, ‘বিষয়টি শুনেছি, এ পর্যন্তই। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে সরকারি সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।’
জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারক জানিয়েছেন, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে আমাকে যেখানে সরকার পদায়ন করবে সেখানেই দায়িত্ব পালন করবো। এর বেশি তো বলার কিছু নাই।
পরিবেশ সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ বলেন, ‘পোস্টারের বিষয়টি আমার জানা নেই। সরকার এই মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে যেখানে দেবে সেখানে কাজ করবো।’ এ নিয়ে ‘ভাবনার কিছু নেই’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিয়োগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।