পিছিয়ে পড়া সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কারিগরিতে রূপান্তরের প্রস্তাব | কারিগরি নিউজ

পিছিয়ে পড়া সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কারিগরিতে রূপান্তরের প্রস্তাব

বাংলাদেশে বেকারত্ব হ্রাস ও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির মূল অন্তরায় সাধারণ শিক্ষাধারার আধিক্য। এই আধিক্য থেকে ক্রমান্বয়ে বেরিয়ে আসা যায়।

#কারিগরি #শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান #ডিআইএ #কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ

দেশের বেকারত্ব হ্রাস ও দক্ষ মানব সম্পদ তৈরিতে সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সম্পূর্ণরূপে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রূপান্তরে নীতিমালা প্রণয়নের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে গতকাল মঙ্গলবার পাঠানো একটি চিঠিতে এ প্রস্তাব দেয়া হয়। চিঠিটি পাঠিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) পরিচালক প্রফেসর মো. সাইফুল ইসলাম।

চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বেকারত্ব হ্রাস ও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির মূল অন্তরায় সাধারণ শিক্ষাধারার আধিক্য। এই আধিক্য থেকে ক্রমান্বয়ে বেরিয়ে আসা যায়। নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন না করে পিছিয়ে পড়া/রুগ্ন সাধারণ ধারার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সম্পূর্ণরূপে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা যায়। এজন্য শিক্ষার্থী ভর্তির অনুপাত নির্ধারণসহ কারিগরি শিক্ষার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে একটি নীতিমালা প্রণয়নের প্রস্তাব বিবেচনা করা যায়।

প্রস্তাবনায় যা আছে

কারিগরি শিক্ষা সম্প্রসারণে নতুন এই নীতিমালা প্রণয়নের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ১. যেসব বেসরকারি এমপিওভুক্ত কিংবা এমপিওবিহীন স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা পিছিয়ে রয়েছে বা রুগ্ন বা পাবলিক পরীক্ষায় ০-২০ জন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয় অথবা কাম্য সংখ্যক শিক্ষার্থী/পরীক্ষার্থী/পাসের হার অর্জনে ব্যর্থ সেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সম্পূর্ণরূপে কারিগরি শিক্ষায় রূপান্তর করা যেতে পারে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শনাক্তে ও এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ও ব্যানবেইসের সহায়তা নেয়া যেতে পারে।

২. যেসব বেসরকারি বিদ্যালয়/মাদরাসায় নবম শ্রেণিতে ১০০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হন সেসব বিদ্যালয় ও কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ও মাদরাসার ক্ষেত্রে আলিম পর্যায়ে ২০০ জন বা তার অধিক শিক্ষার্থী ভর্তি হন কিন্তু কারিগরি শিক্ষার অনুমোদন নেই- সেসব বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদরাসায় সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি পর্যায়ক্রমে বাধ্যতামূলকভাবে কারিগরি শিক্ষা চালু করা যেতে পারে। এসব প্রতিষ্ঠানে সাধারণ শিক্ষায় ভর্তিকৃত শিক্ষার্থী এবং কারিগরি শিক্ষায় ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীর প্রাথমিক অনুপাত হবে ন্যূনতম ৬:৪। অর্থাৎ সাধারণ ধারায় ৬০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হলে কারিগরি ধারায় ৪০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির নির্দেশনা দেয়া যেতে পারে।

৩. যেসব বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাধারণ শিক্ষাধারার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষায় পাঠদানের অনুমতি রয়েছে সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নবম/একাদশ শ্রেণিতে সাধারণ শিক্ষাধারার এবং কারিগরি শিক্ষাধারার শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে ৬:৪ অনুপাত অনুসরণ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় অবকাঠামোসহ সক্ষমতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে।

৪. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধাসম্বলিত উন্নতমানের ওয়ার্কশপ নির্মাণ করা যেতে পারে। যাতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা লাভের পাশাপাশি ওয়ার্কশপে কাজ করে কিছু অর্থ উপার্জনেরও সুযোগ থাকে। এতে ওয়ার্কশপগুলো সচল থাকবে।

৫. এরূপ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষ কোর্স/সান্ধ্যকালীন কোর্স চালু করা যেতে পারে। যাতে নিয়মিত শিক্ষার্থীর বাইরের শিক্ষার্থীরাও (অধিক বয়সের শিক্ষার্থী) যারা উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন তারা যাতে ভর্তি হতে পারেন এবং প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভের সুযোগ পান।

৬. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ট্রেড কোর্স চালুর ক্ষেত্রে ভৌগোলিক অবস্থান, স্থানীয় বাজারের চাহিদা ও পাঠদানের ক্ষেত্রে সহায়ক পরিবেশ ও সুযোগ সুবিধার বিষয় এবং বিশ্ব বাজারে বর্তমান ও ভবিষ্যত চাহিদাকে গুরুত্ব দেয়া যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ যে এলাকায় যে ধরনের শিল্প-কলকারখানা রয়েছে সে এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সে ধরনের শিল্প-কলকারখানার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ও সহায়ক ট্রেড কোর্স চালু করা যেতে পারে।

৭. কারিগরি শিক্ষাধারার শিক্ষকদের জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা যেতে পারে। নতুন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে পর্যটন এলাকাগুলিকে অগ্রাধিকার দেয়া যেতে পারে।

৮. কারিগরি শিক্ষার্থীদের প্রথম ৫ বছর বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করা যেতে পারে।

৯. কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে শিক্ষক, প্রশিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য কারিগরি শিক্ষা ভাতা (৩০ শতাংশ) চালু করা যেতে পারে।

১০. মোট শিক্ষার্থীর ৪০ শতাংশ কারিগরি ধারার শিক্ষায় ভর্তির বিষয়টিকে সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার তালিকায় স্থান দেয়া যেতে পারে।

পিছিয়ে পড়া সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কারিগরিতে রূপান্তরের প্রস্তাব

প্রস্তাবের যৌক্তিকতা

প্রস্তাবের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে- নীতিমালা প্রণয়ন করে তার আলোকে কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা সহজ, সুশৃঙ্খল ও টেকসই হবে। নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করার প্রয়োজন হবে না। প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব জমি, সীমিত অবকাঠামো, সাধারণ ধারার জন্য শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োজিত রয়েছে। নতুন করে জমি ক্রয়/অধিগ্রহণ করার প্রয়োজন হবে না। দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়নযোগ্য এবং কম বিনিয়োগ করে অধিক সুবিধা পাওয়া যাবে। সময় এবং রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয় সাশ্রয় হবে। শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে আনুপাতিক হার চালু করা হলে সাধারণধারার শিক্ষা হতে বেরিয়ে এসে কারিগরি শিক্ষা ধারার দ্রুত সম্প্রসারণ হবে। শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে আনুপাতিক হার চালুকরণের ক্ষেত্রেও নীতিমালার প্রয়োজন।

করণীয়

কারিগরি শিক্ষার সম্প্রসারণের জন্য সার্বিক বিষয় যুক্ত করে 'কারিগরি শিক্ষা সম্প্রসারণ নীতিমালা' নামে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। এ নীতিমালা প্রণয়নে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সম্মতির প্রয়োজন হবে। প্রতিটি জেলা শিক্ষা অফিসে কারিগরি শিক্ষার জন্য একজন অতিরিক্ত জেলা শিক্ষা অফিসার/সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসারের পদসহ প্রয়োজনীয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ সৃজনের প্রয়োজন হতে পারে। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের প্রয়োজনীয় সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে। প্রয়োজনে প্রতিটি জেলায় কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের লিয়াজোঁ/কো-অর্ডিনেশন অফিস স্থাপন করা যেতে পারে। এ নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য দীর্ঘ মেয়াদি একটি প্রকল্প গ্রহণ করা যেতে পারে। যে প্রকল্পের আওতায় নির্বাচিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রাথমিকভাবে ট্রেডভিত্তিক শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ, প্রয়োজনীয় ল্যাব/ওয়ার্কশপ স্থাপন করা যেতে পারে। প্রকল্পের আওতায় নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রকল্প শেষে পরবর্তীতে এমপিওভুক্ত/আত্তীকরণ করা যেতে পারে।

কারিগরি শিক্ষার সম্প্রসারণের জন্য এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সকল মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে ইতিবাচক প্রচারণা চালাতে হবে। বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে এবং ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে প্রচারণা চালাতে হবে। তাদের মধ্যে কারিগরি শিক্ষার আগ্রহ তৈরি করতে হবে। প্রয়োজনে প্রতি মাসে ভিডিয়ো কন্টেন্ট তৈরি করে এবং প্রতি ৬ মাস অন্তর পুস্তিকা প্রকাশ করে কারিগরি শিক্ষার সফলতা সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের অবহিত করা যেতে পারে। প্রচারণার জন্য কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে একটি পৃথক অনুবিভাগ/শাখা চালু করা যেতে পারে। যোগ্য, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক কারিগরি জ্ঞানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে।

কাঙ্ক্ষিত ফলাফল

এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে দেশে দ্রুত কারিগরি শিক্ষার সম্প্রসারণ হবে। কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দক্ষ মানব সম্পদ তৈরি হবে। বেকারত্ব ও অপরাধ প্রবণতা হ্রাস পাবে। জিডিপি বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। বিদেশে শ্রম বাজারের সম্প্রসারণ হবে। দেশের অর্থনীতি উন্নত ও মজবুত হবে।

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিয়োগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

#কারিগরি #শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান #ডিআইএ #কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ