খুলনার সরকারি বিএল কলেজে একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি নিয়ে প্রশ্ন থাকায় ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
বিষয়টি নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই কলেজ প্রশাসন পরীক্ষা বাতিল করে এবং প্রশ্নপত্র প্রণয়নকারী শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেয়।
বিতর্কিত প্রশ্নটি করা হয়েছিল বুধবার (২ জুলাই) অনুষ্ঠিত সমাজবিজ্ঞান প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষায়। পরীক্ষা শুরুর প্রায় দেড় ঘণ্টা পর প্রশ্নপত্রে একাধিক অসঙ্গতি লক্ষ্য করে কর্তৃপক্ষ তা প্রত্যাহার করে নেয় এবং পরবর্তীতে পরীক্ষা বাতিল ঘোষণা করা হয়।
উল্লেখ্য, ৯ নম্বর প্রশ্নের উদ্দীপকে লেখা ছিল: জনাব রিয়াজ তার নাতনিকে নিয়ে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি পরিদর্শনে যান। সেখানে একজন মহান নেতার ছবির সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, এই ছবিটি আমাদের সেই প্রিয় নেতার, যিনি ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে কিছু দাবি পেশ করেছিলেন। আর এগুলো ছিল আমাদের প্রাণের দাবি, প্রত্যাশিত স্বপ্ন পূরণের চাবিকাঠি। এ অংশের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের চারটি প্রশ্নের উত্তর দিতে বলা হয়।
তবে বিতর্কিত এই অংশ ছাড়াও পুরো প্রশ্নপত্রে ছিল একাধিক ভুল ও অসঙ্গতি। দেখা যায়, প্রশ্নগুলোর ক্রম শুরু হয়েছে ৫ নম্বর থেকে, এরপর ৬, তারপর ১, ২, ৩—এইভাবে অগোছালোভাবে সাজানো হয়েছে। এছাড়া আরও কিছু প্রশ্নে উদ্দীপকের সঙ্গে প্রশ্নের কোনো সম্পর্ক না থাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়।
এই প্রশ্নপত্র প্রণয়নের দায়িত্বে থাকা সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নিত্য রঞ্জন সরকারকে শোকজ করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি, ঘটনার তদন্তে ইসলামি ইতিহাস বিভাগের প্রধান আবু তালেবকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
পরীক্ষার কক্ষে দায়িত্বে থাকা বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শেখ জহিরুল ইসলাম বলেন, “প্রথমে ৩০ নম্বরের এমসিকিউ অংশ নেওয়া হয়। পরে লিখিত অংশের প্রশ্নপত্র হাতে পেয়ে ক্রমগত গড়মিল লক্ষ্য করি। পুরো প্রশ্ন পড়ে দেখি, এর মধ্যে স্পর্শকাতর বিষয় রয়েছে। তখনই অধ্যক্ষকে জানালে তিনি প্রশ্নপত্র প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন।”
অধ্যক্ষ অধ্যাপক সেখ হুমায়ুন কবির বলেন, “শুধু ৯ নম্বর নয়, ৪, ৭, ৯ ও ১১ নম্বর প্রশ্নেও ভুল ছিল। কিছু প্রশ্নের সঙ্গে উদ্দীপকের কোনো মিল ছিল না। প্রশ্নপত্র পেয়ে শিক্ষার্থীরা হাসাহাসি শুরু করে। তখন আমরা তাৎক্ষণিকভাবে প্রশ্ন তুলে নিই এবং পরীক্ষাটি বাতিল করি।”
তিনি আরও বলেন, “বিএল কলেজের প্রশ্নপত্র অনেক কলেজ অনুসরণ করে, এমনকি টেস্ট পেপারেও তা ছাপা হয়। একজন শিক্ষক কীভাবে এতগুলো ভুল করেন, তা জানতে চেয়ে তাকে শোকজ করা হয়েছে। নমুনা কিছু প্রশ্নপত্র সংরক্ষণ করা হয়েছে, বাকিগুলো নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।”