বরিশালের গৌরনদীতে বিনামূল্যের সরকারি নতুন (এ বছরের) পাঠ্যবই বিক্রির অভিযোগে ভ্যান চালক ও মাদরাসা কর্মচারীকে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ। এ সময় বিনামূল্যের সরকারি ৭৪ খানা নতুন পাঠ্যবই জব্দ করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গৌরনদী পৌরসভার কাছেমাবাদ এলাকায় মেসার্স মদিনা স্টোরের মালিক মজিবর বেপারীর ভাঙাড়ির গেডাউনের সামনে এ ঘটনা ঘটে। উদ্ধার অভিযানের সময় এডিসির তদবিরে গৌরনদীর ইউএনও রিফাত আরা মৌরির বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি ও পক্ষপাতিত্বের কারণে গোডাউনের মালিক মজিবর বেপারীকে আটক না করার অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় ভ্যানচালক শফিকুল তালুকদার, বই বিক্রেতা সুজন বেপারী ও কলাবাড়িয়া দারুল আরকাম ইবতেদায়ি মাদরাসার দপ্তরি সাগর হোসেনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো দুই-তিন জনকে আসামি করে ওইদিন রাতেই থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আটককৃত শফিকুল ও সুজনকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে বরিশাল আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
ঘটনাস্থলে বসে পিঙ্গলাকাঠি গ্রামের ভ্যানচালক শফিকুল তালুকদার বলেন, আমার প্রতিবেশী ভাঙাড়ি ব্যবসায়ী সুজন বেপারী ৫ জুন সকালে আমাকে ফোন দিয়ে কাছেমাবাদ হেলিপ্যাড সংলগ্ন মেসার্স মদিনা স্টোরের মালিক মজিবর বেপারীর ভাঙাড়ির গেডাউনে কিছু ভাঙাড়ি মালামাল পৌঁছে দিতে বলেন। গত ৫ জুন দুপুরে প্রথম দফায় ভাঙাড়ি টিন ও সাইকেল ভাঙা পৌঁছে দিই। একই দিন দুপুরে দ্বিতীয় দফায় আনাম বাবুর্চির বাড়ি থেকে ভ্যানভর্তি করে সরকারি পাঠ্যবইগুলো মজিবর বেপারীর ভাঙাড়ির গেডাউনে নিয়ে গেলে মজিবরের শ্রমিকরা বইগুলো গোডাউনে মজুত শুরু করেন।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, মজিবরের গোডাউনের কর্মচারীরা বিপুল পরিমাণ নতুন বই ভ্যান থেকে নামাচ্ছে দেখে সাংবাদিকদের খবর দেন তারা। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ইউএনও রিফাত আরা মৌরি ও পরিদর্শক (তদন্ত) মো, মাহবুবুর রহমান সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছেন।
ভ্যানে থাকা ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের সরকারি নতুন পাঠবইসহ গোডাউন ভর্তি বিভিন্ন বছরের সরকারি পাঠ্যবইয়ের বিশাল মজুত দেখতে পান। সবার সামনেই বই গণনার নির্দেশ দেন ইউএনও। এ সময় মজিবর বেপারী নিজেকে এডিসি কাওছার হোসেনের ভাই হিসেবে ইউএনওর কাছে পরিচয় দেন। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই ইউএনওর সরকারি মোবাইল ফোনে এডিসি নিজেই কল করেন।
গোডাউনভর্তি বিপুল সরকারি পাঠ্যবই থাকা সত্ত্বেও এলকাবাসী ও সাংবাদিকদের সামনেই ইউএনও ফোনে এডিসিকে বলেন, 'ভ্যানে সরকারি পাঠ্যবই পাওয়া গেলেও গোডাউনে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। হ্যাঁ স্যার সমস্যা নেই, আমি এখানে আছি।' ইউএনওর নির্দেশে ঘটনাস্থল থেকে ভ্যানচালক শফিকুলকে আটক করে পুলিশ। তখন ভ্যানে থাকা ৭৪ খানা নতুন বই জব্দ করেন। এডিসির তদবিরে ইউএনওর স্বজনপ্রীতি ও পক্ষপাতিত্বের কারণেই গোডাউনে থাকা নতুন বই জব্দ করা হয়নি ও অভিযুক্ত গোডাউন মালিক মজিবর বেপারীকে আটক না করার অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।
তবে গৌরনদীর ইউএনও রিফাত আরা মৌরি বলেন, ‘গোডাউন তল্লাশি করে পুরাতন কিছু বই পাওয়া গেলেও এ বছরের সরকারি নতুন পাঠ্যবই পাওয়া যায়নি। তবে ভ্যান থেকে এ বছরের সরকারি কিছু নতুন বই জব্দ করা হয়েছে। তবে আটককৃতদের জবানবন্দি অনুযায়ী তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। এডিসি স্যার বিষয়টি জানতে চেয়েছিলো।
ভাঙাড়ি গোডাউনের মালিক মজিবর বেপারী বলেন, 'ইউএনও স্যার এলে আমি আমার ভাই কাওছারকে (এডিসি) ফোন করি। পরে সে ইউএনওর সঙ্গে কথা বলেন। বইগুলো আমি ক্রয় করি নাই। গোডাউনে কোনো নতুন বই ছিল না। কেউ রাস্তা দিয়ে বই নিয়ে গেলে তার দায় আমার নয়।
গৌরনদী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, গোডাউনের ভেতর বিনামূল্যের অনেক সরকারি নতুন পাঠ্যবই ছিলো, তা আমি ও উপস্থিত সবাই দেখেছি। আমি ইউএনও স্যারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করেছি।'
শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিয়োগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।