চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পদোন্নতির সাক্ষাৎকার দিতে আসা শিক্ষককে বরখাস্তের দাবিতে শুক্রবার হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে।
এ ঘটনায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে স্ট্যাটাস দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন।
তার স্ট্যাটাসটি হুবহু নিচে দেওয়া হলো—
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পদোন্নতির সাক্ষাৎকার দিতে আসা শিক্ষককে বরখাস্তের দাবিতে একদল শিক্ষার্থী ভিসির রুমে ঢুকে যায় এবং সেখানে যেইভাবে হট্টগোল করে তা অকল্পনীয়।
একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির অফিসে কি এমন মব হতে পারে? সেখানে ছাত্ররা ঢুকে গিয়ে এই রকম আচরণ করতে পারে? কোন অজুহাত বা কোন কারণে কি এমন হতে পারে? অথচ এটি দেশের চারটি পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি!
ওখানে ভিসি প্রফেসর ইয়াহিয়াকে আঙুল উঁচিয়ে একজন শিক্ষার্থী বলেছে ‘স্যার আপনাকে আমরা বসাইছি, আপনি নিজের যোগ্যতায় এখানে আসেননি’! কি সাংঘাতিক কথা। সেই ভিসিরতো আর এক মুহূর্তও সেই পদে থাকে কি করে?
ব্যক্তিগতভাবে আমি উনাকে যতটা জানি উনি একজন ভালো মানুষ। কিন্তু এই দেশের কোন ভালো মানুষই সম্মান পায় না। আজকে যদি তিনি ততোধিক খারাপ হতেন উনার চারপাশে শিক্ষক ও ছাত্রদের মধ্যে যারা গুন্ডাপান্ডা প্রকৃতির তারা তাকে ঘিরে রাখতো।
আসল আমাদের বড় পদে যাওয়া মানুষজন পদত্যাগ করতে জানে না। যত অপমান অপবাদই আসুক ততক্ষণ পর্যন্ত পদ আগলে রাখে যতক্ষণ না পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া না হয়। কখন পদত্যাগ করতে হয় এইটা না জানাটা অযোগ্যতার লক্ষণ।
ইনফ্যাক্ট ৫ আগস্টের পর দেশের অধিকাংশ পদে যারাই বসেছেন তাদের সবার পদ পাওয়াকে শিক্ষার্থীরা মনে করে তারা বসিয়েছেন। আসলে শিক্ষার্থীরাতো মনে করে স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টাকেও তারা বসিয়েছে এবং প্রধান উপদেষ্টা সেটা প্রথম থেকেই বলে আসছেন। কথাতো ঠিক।
আজকে চারিদিকে যেই অরাজকতা দেখছেন এইসব সেই আস্কারার ফলাফল। প্রধান উপদেষ্টা সেদিন যদি শিক্ষার্থীদের বলতেন ‘তোমরা তোমাদের কাজ করেছ। এখন আমাদেরকে আমাদের কাজ করতে দাও আর তোমরা তোমাদের কাজে ফিরে যাও।
প্রথম আলোর রিপোর্ট বলছে ‘একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা হাবিবুল্লাহ খালেদ উচ্চ স্বরে কথা বলছেন।
তার সঙ্গে থাকা অন্যরা হইচই করছেন। তাদের সামনে শিক্ষক কুশল বরণ চক্রবর্তী। উপাচার্য অধ্যাপক ইয়াহইয়া আখতার, সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিনও উপস্থিত ছিলেন। এ সময় উপাচার্য নির্লিপ্তভাবে চেয়ারে বসে থাকতে দেখা গেছে।
সেই ভিডিওটি আমিও দেখেছি। শিক্ষার্থীদের যেই আচরণ দেখলাম তা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হতে পারে না। কোন কারণে বা কোন অজুহাতেই হতে পারে না। আর সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অফিসের ভেতরে? কল্পনা করতে পারেন?
এই শিক্ষার্থীরা যখন বিসিএস সরকারি চাকরি পাবে কি করবে? বা এমপি মন্ত্রী হলে কি করবে? আসলে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই আমাদের শিক্ষার্থীরা সকল কু-কর্মগুলো শেখে তারপর বড় হয়ে চাকরি পেয়ে চাকরিস্থলেও এই সবই করে। এর জন্য দায়ী দলীয় ভিত্তিতে ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি।
খোঁজ নিয়ে দেখেন এর পেছনের আর্চিটেক্ট হলো ছাত্র ও শিক্ষক রাজনৈতিক শাখার নেতারা। এই দেশ ভালো হবার আর কোন সম্ভবনা দেখি না।