ছবি : সংগৃহীত
হজের সফর সাধারণ কোনো ভ্রমণ নয়; একটি আধ্যাত্মিক সফর, আল্লাহর প্রেম ও ভালোবাসায় সিক্ত হওয়ার সফর। তাই এই সফরের প্রতিটি সময় ধৈর্য ও আমলের মধ্যে কাটানো উচিত। সাধারণ সময়ে ব্যস্ততার দরুণ মনে চাইলেও অনেক ইবাদত করতে পারি না। হজের সফরে যেহেতু পারিবারিক, ব্যবসায়িক ও পেশাগত তথা জাগতিক সকল কাজ থেকে মুক্ত থাকা হয় তাই দিনরাতের পুরোটা সময় ইবাদতে কাটানোর সুযোগ আছে।
কোরআন তিলাওয়াত: মক্কা ও মদীনা আমাদের প্রিয়নবীর স্মৃতিময় পুণ্যভূমি। এই দুই শহরের অলিগলিতে নবীজি (সা.) দীনের প্রচারে ঘুরে বেড়িয়েছেন। এখানেই অবতীর্ণ হয়েছে পবিত্র কোরআন মাজিদ। তাই হজের সফরে এই পুণ্যভূমিতে বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করা উচিত। কোরআন তেলাওয়াতের সময় মনে এই কথা জাগ্রত রাখব যে মসজিদে হারামের আশপাশে, এই শহরের ছোট-বড় পাহাড়ে নাজিল হয়েছিল কোরআন, এখানে বসেই আমি সেই কোরআন তেলাওয়াত করছি। যারা কোরআনের অর্থ বুঝে তাদের অন্তরে এই পুণ্যভূমিতে কোরআন তেলাওয়াত এক অন্য রকম আবেগ অনুভূতি সৃষ্টি করে। যেমন, সুরা কোরাইশের আয়াত- ফাল ইয়াবুদু রাব্বা হাযাল বাইত। এই আয়াতের অর্থ হলো: তোমরা এই ঘরের প্রতিপালকের ইবাদত করো। এই ঘর দ্বারা উদ্দেশ্য পবিত্র কাবা শরিফ। কাবা শরিফের সামনে বসে যখন এই আয়াত তেলাওয়াত করবেন তখন মনে যে অপার্থিক সুখানুভূতি ছড়িয়ে পড়বে, বাংলাদেশে বসে সেই অনুভূতি কোথায় পাবেন! তাই হজের সফরে বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করব। যত বেশি সম্ভব কোরআন খতম দিতে চেষ্টা করব।
মসজিদে হারামে বেশি সময় অবস্থান করা: খাওয়া-দাওয়া ও বিশ্রাম ব্যতীত বাকি পুরোটা সময় মসজিদে হারামে কাবা শরিফের সামনে থাকার চেষ্টা করব। মসজিদে হারামে বসে কোরআন তেলাওয়াত করব, নামাজ পড়ব, তাওয়াফ করব। কখনো কেবল কাবা শরিফের দিকে তাকিয়ে থাকব। কাবা শরিফের দিকে তাকিয়ে থাকাও সাওয়াবের কাজ। কাবা শরিফের সামনে দোয়া কবুল হয়, তাই বেশি বেশি দোয়া করব। নিজের জন্য দোয়া করব, অপরের জন্যও দোয়া করব।
নবীজির রওজা জেয়ারত করা: হজের সফরে প্রত্যেক হাজি মদিনা শরিফে যান। মদিনা শরিফে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো নবীজির রওজা মোবারকে হাজির হয়ে সালাম পেশ করা। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে নববিতে আদায় করা। প্রত্যেক নামাজের পরে নবীজির রওজায় সালাম পেশ করার চেষ্টা করা। রিয়াজুল জান্নায় নামাজ ও দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়, তাই রিয়াজুল জান্নায় প্রবেশ করে নামাজ ও দোয়ার চেষ্টা করা। যদিও বর্তমানে রিয়াজুল জান্নায় প্রবেশ করাটা অনেক কঠিন হয়ে গেছে।
এছাড়া হজের সফরে বেশি পরিমাণে নফল নামাজ পড়া, দুরুদ পাঠ করা, তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা উচিত।
লেখক: শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক