বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সামনের সারিতে ছিলেন রাজশাহী কলেজের একমাত্র শহীদ আলী রায়হান (২৮)। তাই তাকে স্মরণে কলেজের একটি নতুন ভবনে তার নামে নামকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। তবে সেই নামকরণে নাম বিকৃতির অভিযোগ উঠেছে প্রশাসনের বিরুদ্ধে। নতুন দশ তলা সেই ভবনের নামফলকে ‘শহীদ আলী রায়হান ভবন’ এর পরিবর্তে লেখা হয়েছে ‘শহীদ রায়হান ব্যবসায় প্রশাসন ভবন’।
শুক্রবার (২০ জুন) সকালে বিষয়টি জানাজানি হয়। এরপর থেকেই এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের ৫ আগস্ট রাজশাহীতে পুলিশের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আইসিইউতে তিনদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ৮ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন ছাত্রনেতা আলী রায়হান। তার আত্মত্যাগকে স্মরণ করে ভবনের নামকরণ হলেও ‘আলী’ শব্দটি বাদ দিয়ে এবং বিভাগীয় নাম জুড়ে দিয়ে শহীদের পূর্ণ পরিচয় বিকৃত করা হয়েছে বলে অভিযোগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের।
শিক্ষার্থীরা জানান, আওয়ামী দোসরদের প্রত্যক্ষ মদদে পরিকল্পিতভাবে শহীদের নামকে খাটো করতেই এ প্রচেষ্টা চালানো হতে পারে। শাহাদাতের মাত্র এক বছর না পেরোতেই শহীদের নাম নিয়ে এমন ছিনিমিনি খেলা হলে ভবিষ্যতে হয়তো তার অবদান সব জায়গা থেকেও মুছে ফেলা হবে। ছাত্র-জনতার রক্ত পেরিয়ে প্রশাসনের গুরুদায়িত্ব গ্রহণের পর শহীদদের অবমাননা সাধারণ শিক্ষার্থীরা মেনে নিবে না বলেও প্রশাসনকে সতর্ক করেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী রাফিন বলেন, শহীদের ‘আলী’ বাদ দিয়ে শুধু ‘রায়হান’ বলার মানে তার প্রকৃত পরিচয় মুছে ফেলা হয়েছে। এটা কোনো সাধারণ নাম নয়, একজন শহীদের নাম। নাম বিকৃতি মানে ইতিহাস বিকৃতি।
রাজশাহী কলেজ শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, তৎকালীন অধ্যক্ষ আব্দুল খালেক স্যার এই দশতলা ভবনটির নাম শহীদ আলী রায়হানের নামে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আমরা তখন প্রস্তাব দিয়েছিলাম যে সব ভবনের নাম স্বৈরাচারদের নামে রয়েছে, সেগুলোর নাম জুলাই বিপ্লবের শহীদদের নামে নামকরণ করতে হবে। সেই ধারাবাহিকতায় এই ভবনের নাম শহীদ আলী রায়হানের নামে নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে শহীদের পূর্ণাঙ্গ নাম ব্যবহার না করে সংক্ষিপ্ত ও বিকৃতভাবে নামটি টানানো হয়েছে, যা শহীদের প্রতি অসম্মান। আমরা বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছিলাম যে নামটি ভুল হচ্ছে। এরপরও কেন ভুল নাম টানানো হলো তা আমাদের বোধগম্য নয়।
রাজশাহী কলেজ শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক খালিদ বিন ওয়ালিদ আবির বলেন, শহীদদের নাম বিকৃতি করা অত্যন্ত দুঃখজনক ও লজ্জাজনক। আমরা শুরু থেকেই শহীদ সাকিব আঞ্জুমের পুরো নাম ব্যবহারের দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু কলেজ প্রশাসন তখন শুধু ‘সাকিব’ কিংবা ‘আঞ্জুম’ নামটি ব্যবহারের প্রস্তাব দেন। তখনই আমরা বলেছিলাম, একজন শহীদের পূর্ণ নাম ছাড়া তার পরিচয় অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। ঠিক একইভাবে শহীদ আলী রায়হানের ক্ষেত্রেও যদি শুধু ‘রায়হান’ নাম ব্যবহার করা হয় তাহলে তার ইতিহাস ও পরিচয় বিকৃত হবে।
তিনি আরও বলেন, কলেজ প্রশাসন বারবার ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। আমরা বুঝতে পারছি না তারা ইচ্ছাকৃতভাবে কেন শহীদদের নামকে ছোট করার চেষ্টা করছে। এই কলেজ ও ভবন যাদের রক্ত ও ত্যাগের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে সেই শহীদের নাম বিকৃত করা মানে তাদের সম্মানহানি এবং ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা। এটি অত্যন্ত কষ্টদায়ক ও নিন্দনীয়।
জানতে চাইলে রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মু. যহুর আলী বলেন, যাদের দায়িত্ব দেওয়া ছিল তারা হয়তো লেখার সময় ভুলবশত আলী শব্দটি বাদ দিয়েছেন। তবে আলী শব্দ বাদ পড়ার বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরও ভুল নামফলক লাগানোর প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ জানান, এটা সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্ব থাকা স্যাররা বলতে পারবেন। হয়তো পরবর্তীতে এটা সংশোধন হতে পারে।