স্বামী বিবেকানন্দ : মানবজাতির অভ্রান্ত পথনির্দেশক | মতামত নিউজ

স্বামী বিবেকানন্দ : মানবজাতির অভ্রান্ত পথনির্দেশক

তার আগমনে শুধু যে তমসাচ্ছন্ন ভারত কর্মযোগে জেগে উঠেছে-তা নয়, উন্মত্ত ইউরোপ-আমেরিকাও তার শিক্ষা-দীক্ষায়, ধ‍্যান-জ্ঞানে নূতন আলোর সন্ধান পেয়েছে, আধ‍্যাত্মিকতার একটি শাশ্বতরূপ দেখে মানুষ আজ ধর্ম বিষয়ে নিজের ভুল বুঝতে শুরু করেছে।

জীবে প্রেম করে যেইজন, সেইজন সেবিছে ঈশ্বর। জীবসেবাকে ঈশ্বরের সেবা হিসেবে ভাবতেন স্বামী বিবেকানন্দ। তার সমস্ত চিন্তাভাবনা ছিলো মানবজাতির কল্যাণ। সমগ্ৰ মানবজাতির কল‍্যাণের জন‍্য জ্ঞান,ভক্তি,কর্ম ও ধ‍্যানের একটি পরিপূর্ণ আদর্শ রূপে স্বামী বিবেকানন্দ আবির্ভূত হয়েছিলেন।

জড়বিজ্ঞানের চমকপ্রদ সাফল‍্যে ধর্মের প্রভাব তখন কিছুটা স্তিমিত; অশিক্ষা ও কুশিক্ষায়, পরাধীনতা ও দারিদ্র‍্যে ধর্মের প্রাণকেন্দ্র ভারতও যেনো পথ হারিয়ে ফেলেছে; সেই যুগসন্ধিক্ষণে ভবিষ‍্যৎ মানবজাতির অভ্রান্ত পথনির্দেশক রূপে স্বামী বিবেকানন্দের আবির্ভাব।

তার আগমনে শুধু যে তমসাচ্ছন্ন ভারত কর্মযোগে জেগে উঠেছে-তা নয়, উন্মত্ত ইউরোপ-আমেরিকাও তার শিক্ষা-দীক্ষায়, ধ‍্যান-জ্ঞানে নূতন আলোর সন্ধান পেয়েছে, আধ‍্যাত্মিকতার একটি শাশ্বতরূপ দেখে মানুষ আজ ধর্ম বিষয়ে নিজের ভুল বুঝতে শুরু করেছে।

মাত্র ৩৯ বছর স্বামীজী এই মর্ত‍্যলোকে অবস্থান করেন, প্রকাশ‍্যভাবে তার ব‍্যাপক ও গভীর কর্মজীবন মাত্র ৯ বৎসর কাল। পরিব্রাজক জীবনের শেষে শ্রীগুরুর ইঙ্গিতে ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি শিকাগো ধর্ম-মহাসভায় যান। সেখানে অপূর্ব সাফল‍্যের পর তিনি আমেরিকা ও ইউরোপে সার্বভৌম আধ‍্যাত্মিক বাণী প্রচার করেন।

পাশ্চাত‍্যে বেদান্ত- প্রচারের কার্য দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করে ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ভারতে ফিরে আসেন ও স্বদেশের এক প্রান্ত হতে অপর প্রান্ত পর্যন্ত বজ্রনির্ঘোষে নব জাগরণের বাণী শুনাতে থাকেন। অতঃপর শ্রীরামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের ভিত্তি স্থাপন করে ১৮৯৯ খ্রীষ্টাব্দে স্বামীজী পুনরায় পাশ্চাত‍্যে গমন করেন ও বিভিন্ন দেশে, বিশেষত আমেরিকায় নবযুগের উদার ভাব প্রচার করতে থাকেন।

সংস্কৃতে ‘স্বামী’ শব্দের অর্থ ‘প্রভু’ এই সূত্র ধরেই স্বামী বিবেকানন্দের নামের আগে ‘স্বামী’ শব্দের প্রয়োগ করে তাকে যথাযথ সম্মান দেখানো হয়েছে। রাজস্থানের ক্ষেত্রির রাজা অজিৎ সিং ছিলেন তার বিশেষ বন্ধু ও অনুসারী।

তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে দুবার ক্ষেত্রি ভ্রমণ করেন। তার জ্ঞান ও প্রতিভায় অজিৎ সিং মুগ্ধ ছিলেন। দ্বিতীয়বার আমেরিকা যাওয়ার আগে অজিত সিং তাকে স্বামী বিবেকানন্দ নামে ভূষিত করেন। এ নামের কারণ হলো অজিৎ সিং মনে করতেন বিবেকানন্দ হচ্ছেন তার আধ্যাত্মিক গুরু। সম্মানীয় ব্যক্তিবর্গের নামের পূর্বে সম্মানবাচক শব্দের ব্যবহারের রীতি সারা পৃথীবিতেই দৃশ্যমান। যেমন- বৃটেনে লর্ড বা মাস্টার, পর্তুগীজে ফিদেলো। ধর্মীয় ক্ষেত্রেও এরূপ ব্যবহার লক্ষ করা যায়। যেমন- মাওলানা। সংস্কৃতে ‘স্বামী’।

সাধারণত যেকোনো সাধুর নাম,‘স্বামী’ উপাধি দিয়েই শুরু হয়। কিন্তু পরম্পরা গত ভাবে রামকৃষ্ণ সংঘে স্বামী বিবেকানন্দকে স্বামীজী বলে ডাকা হয় অর্থাৎ রামকৃষ্ণ সংঘে দাঁড়িয়ে স্বামীজি বলা মানে স্বামী বিবেকানন্দকে বোঝানো হয়। অন্যথায় যেকোনো সন্ন্যাসিকেও স্বামীজি বলে ডাকা যায় । রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের কাছে দীক্ষালাভের পর নরেন্দ্রনাথ দত্ত বিভিন্ন ছদ্দনামে ভারত ভ্রমণ করেছিলেন। এইভাবে ঘুরতে ঘুরতেই তিনি খেত্রি রাজ্যে পৌঁছেছিলেন। তখন খেতরির রাজা ছিলেন অজিত সিং। তিনি নরেন্দ্রনাথ দত্তকে বারবার ছদ্দনাম না নিয়ে শুধু স্বামী বিবেকানন্দ নামটি ব্যবহার করতে বলেন। এভাবেই নরেন্দ্রনাথ দত্ত হয়ে ওঠেন কোটি কোটি মানুষের আদর্শ স্বামী বিবেকানন্দ। তিনি কোনো ধর্মের মানুষকে ছোট করে দেখতেন না। তিনি মানব ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন।