সন্তান ধারণ ঠেকাতে অনেক মহিলাই দিনের পর দিন গর্ভনিরোধক ওষুধ খান। সম্প্রতি এক গবেষণায় গর্ভনিরোধক ওষুধ খাওয়া লাখ লাখ নারীর মস্তিষ্কে টিউমার হওয়ার ঝুঁকি পাওয়া গেছে।
প্রোজেস্টেরন হরমোন ধারণকারী নারীদের দৈনিক সেবন করতে হয় ছোট্ট একটি গর্ভনিরোধক পিল যাতে আরেকটি হরমোন এস্ট্রোজেন থাকে। বিজ্ঞানীরা এখন দেখছেন, যে নারীরা পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই উভয় ধরনের হরমোন ধারণ ও গ্রহণ করেন তাদের মেনিনজিওমা নামে পরিচিত মস্তিষ্কের টিউমার হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
তারা বলেছেন, যদিও এতে ক্যান্সার হয় না কিন্তু এই টিউমারগুলো বড় হওয়ার সাথে সাথে মস্তিষ্কে চাপ তৈরি হতে পারে এবং মাথাব্যথা, খিঁচুনি, দৃষ্টি সমস্যা এবং স্মৃতিশক্তি হ্রাসের মতো লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে। যুক্তরাজ্যের শত শত নারী একই রকম হরমোন ধারণকারী গর্ভনিরোধক ইনজেকশন একই ঝুঁকি তৈরি করতে পারে এই আশঙ্কায় আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছেন বলে এই তথ্য প্রকাশ পাওয়ার কয়েক সপ্তাহ পরেই এই সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
চলতি বছরের শুরুতে পৃথক আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে টিকা নেওয়া নারীদের মেনিনজিওমা হওয়ার আশঙ্কা পাঁচ গুণ বেশি। সর্বশেষ গবেষণায়, ফরাসি বিজ্ঞানীরা আট হাজারের বেশি নারীর চিকিৎসা রেকর্ড বিশ্লেষণ করেছেন যাদের এই অবস্থার জন্য অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। তারা দেখেছেন যে, অনেকেই পাঁচ বছর বা তার বেশি সময় ধরে এক ধরনের
প্রোজেস্টেরন রয়েছে এমন সক্রিয় উপাদান ডেসোজেস্ট্রেলযুক্ত মিনি-পিল (ছোট্ট ট্যাবলেট) গ্রহণ করছেন। তবে, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মিনি-পিল গ্রহণকারী নারীদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তারা বলছেন, মিনি পিল এতটা আতঙ্কের নয়, কারণ তাতে সামগ্রিক ঝুঁকি খুব কম। ডেসোজেস্ট্রেল এমন নারীদের নিতে পরামর্শ দেয়া হয় যারা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে গর্ভ নিরোধে এস্ট্রোজেন নিতে পারেন না। যদিও গবেষণায় দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহার এবং মেনিনজিওমার মধ্যে একটি যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন।
ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত এ গবেষণাটিতে জোর দিয়েছিলেন যে, এতে বর্ধিত ঝুঁকি কম। ডেসোজেস্ট্রেল গ্রহণকারী প্রতি ৬৭ হাজার নারীর মধ্যে মাত্র একজনের মেনিনজিওমা এতটাই গুরুতর হয়ে থাকে যে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়।
ঝুঁকি কেবল তাদের মধ্যেই দেখা গেছে যারা পাঁচ বছর বা তার বেশি সময় ধরে মিনি-পিল গ্রহণ করেছিলেন এবং চিকিৎসা বন্ধ করার এক বছরেই তাদের (সেই টিউমার) অদৃশ্য হয়ে যায়। মেনিনজিওমা হল মস্তিষ্কের আস্তরণে তৈরি একটি টিউমার। এটা ৯০ শতাংশেরও বেশি ক্ষেত্রে ক্যান্সার হয় না, তবে এগুলো বড় হওয়ার সাথে সাথে গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। প্রতি বছর আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে টিউমার অপসারণের জন্য অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয় কারণ এটি মস্তিষ্কের ওপর অভ্যন্তরীণ চাপ বৃদ্ধি করে। মেনিনজিওমার সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে ক্রমাগত মাথাব্যথা এবং বমি ভাব হয়। একই সাথে প্রায়ই তন্দ্রার ভাব আসে। (এই টিউমার) ক্যান্সারের মতো শরীরের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি না থাকলেও, ভুক্তভোগীর সমস্যা তৈরি করতে পারে।
লন্ডনের কুইন মেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংখ্যা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মঞ্জেস থোরাট (এই গবেষণার সাথে জড়িত ছিলেন না) বলেন, (মেনিজিওমার) ঝুঁকি বাড়ার মাত্রা কম। মিনি পিলের স্বল্পমেয়াদি ব্যবহার ঝুঁকি বৃদ্ধির সাথে সম্পর্কিত নয় এবং এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্যবহার বন্ধ করার পরে অতিরিক্ত ঝুঁকি বন্ধ হয়ে যায়। তবে বিশেষজ্ঞরা গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ সীমাবদ্ধতাও উল্লেখ করেছেন, গবেষকরা শুধুমাত্র এক ধরনের মিনি-পিল ডেসোজেস্ট্রেলের ব্যবহার দেখেছেন এবং তারা অন্যান্য প্রোজেস্টেরন ফর্মুলেশন মূল্যায়ন করতে পারেননি।
লন্ডনের ইনস্টিটিউট অব ক্যান্সার রিসার্চের ড. জ্যোতি থোরাট বলেন, এই গবেষণার ফলাফল ওষুধের সব সংস্করণের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা সম্ভব নয়। তিনি ঝুঁকি আরো ব্যাপকভাবে মূল্যায়নের জন্য অন্যান্য দেশে আরও গবেষণা চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন।