পাবলিক পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে অনীহা শিক্ষকদের, বোর্ডের শক্ত অবস্থান | এসএসসি/দাখিল নিউজ

পাবলিক পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে অনীহা শিক্ষকদের, বোর্ডের শক্ত অবস্থান

অনেক পরীক্ষক নিজেরা খাতা দেখেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষার্থী ও স্বজনকে দিয়ে খাতা দেখানোয় অনেক ক্ষেত্রে ভুল হয়। এর প্রভাব পড়ে ফলে। দুর্ভোগ পোহাতে হয় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।

#পরীক্ষা #শিক্ষক #এসএসসি #শিক্ষার্থী

খাতা দেখতে হলে প্রাইভেট টিউশনির ব্যাচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার খাতা দেখার সম্মানীও খুব কম এবং তা হাতে পেতে দীর্ঘ সময় লাগে--এমন সব কারণে এসএসসি ও এইচএসসির মতো গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নে সরবকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের অনীহা। কয়েকবছর আগে বোর্ডগুলো খাতা দেখার বিষয়ে কড়াকড়ি শুরু হলে অনেকেই খাতা দেখা শুরু করেছিলেন। আবার কয়েকবছর ঢিলেঢালা ভাব হওয়ার পর এ বছর থেকে শিক্ষা বোর্ডগুলো কঠোর হয়ে এসএসসি পরীক্ষার খাতা দেখতে দিয়েছে শিক্ষকদের।

অনেক পরীক্ষক নিজেরা খাতা দেখেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষার্থী ও স্বজনকে দিয়ে খাতা দেখানোয় অনেক ক্ষেত্রে ভুল হয়। এর প্রভাব পড়ে ফলে। দুর্ভোগ পোহাতে হয় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।

শিক্ষা বোর্ডগুলোর পক্ষ থেকে এ বছর এ নিয়ে শিক্ষকদের চূড়ান্ত সতর্ক করা হয়েছে। শিক্ষকরা সঠিকভাবে খাতা মূল্যায়ন না করায় পাবলিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর পুনর্মূল্যায়নে বিপুল সংখ্যক পরীক্ষার্থী আগের তুলনায় বেশি নম্বর পাওয়ার ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের তদন্তেও পরীক্ষকদের ভুলের বিষয়টি উঠে এসেছে।

সূত্র জানায়, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষক ও প্রধান পরীক্ষকের অনেকেই এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার খাতা

দেখায় অনীহা প্রকাশ করেন। এতে এবার ফল মূল্যায়নে জটিলতাও তৈরি হয়। গত মে মাসের মাঝামাঝি পরীক্ষা শেষ হলেও পরীক্ষকরা বোর্ড থেকে মূল্যায়নের জন্য খাতা নিতে যাচ্ছিলেন না। এ পরিস্থিতিতে গত ১৩ মে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ পরীক্ষক ও প্রধান পরীক্ষকদের খাতা নিয়ে যাওয়ার কঠোর নির্দেশনা দেয়। খাতা না দেখলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করা হয়।

ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আবেদন করে প্রধান পরীক্ষক ও পরীক্ষক হলেও শিক্ষকদের অনেকেই খাতা মূল্যায়নে অনীহা দেখান।

এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার দুই মাসের মধ্যে ফল প্রকাশের রেওয়াজ চালু রয়েছে ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে। গত ৫ মে পরীক্ষকদের সতর্ক করে চিঠি দেয় শিক্ষা বোর্ডগুলো। পরীক্ষার খাতা অন্যকে দিয়ে দেখালে পরীক্ষকের জেল-জরিমানা হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

এ বিষয়ে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির আহ্বায়ক এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার বলেন, পরীক্ষা পরিচালনা আইন অনুযায়ী পাবলিক পরীক্ষার খাতা অন্যকে দিয়ে মূল্যায়ন করানো বা বৃত্ত পূরণ করানো শাস্তিমূলক অপরাধ।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বলছেন, ফল পুনর্নিরীক্ষণের অর্থ নতুন করে খাতা দেখা। কিন্তু বাস্তবে তা হয় না। মূলত উত্তরপত্রের নম্বর যোগ ও বৃত্ত ভরাট ঠিক আছে কিনা, তা দেখেই পুনর্নিরীক্ষণ শেষ করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নম্বর যোগ-বিয়োগের ভুলেই প্রতিবছর একেকটি পাবলিক পরীক্ষায় হাজার হাজার শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়। এ ক্ষেত্রে পুনরায় খাতা দেখলে আবেদনকারীর বেশির ভাগেরই ফল পরিবর্তন হতো। পরীক্ষকদেরও আরও ভুল ধরা পড়ত।

জানা গেছে, অযোগ্য পরীক্ষক ঠেকাতে এর আগে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষকদের ডিজিটাল ডেটাবেজ করার উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু কোনো ধরনের গাইডলাইন ছাড়া তৈরি এই ডেটাবেজেও ঢুকে পড়ছেন অযোগ্য শিক্ষকরা। প্রতিষ্ঠানপ্রধান সম্মতি দিলেই একজন শিক্ষক হয়ে যাচ্ছেন পরীক্ষক। এতে জুনিয়র শাখার শিক্ষক হয়ে যাচ্ছেন মাধ্যমিকের পরীক্ষক, কলেজের শিক্ষকরাও মাধ্যমিকের পরীক্ষক হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। আবার কোনো শিক্ষক যদি স্বল্প সময়ের জন্যও কোনো একটি বিষয় পড়ান, তাহলেও তিনি ওই বিষয়ে খাতা দেখার আবেদন করতে পারছেন। এক বিষয়ের শিক্ষক হয়েও অন্য বিষয়ের পরীক্ষক হওয়ার সুযোগ থেকে যাচ্ছে। মাদ্রাসা বোর্ডে তদবিরে পরীক্ষক হওয়ার প্রবণতা বেশি।

শিক্ষকরা আমাদের বার্তাকে বলেন, খাতা দেখার সম্মানী নামমাত্র। সেটিও পেতে বছর পার হয়ে যায়। এক বছর শেষে আরেকবার খাতা দেখা শুরু হলেও সম্মানী মেলে না। এসব নিয়ে পরীক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে।

#পরীক্ষা #শিক্ষক #এসএসসি #শিক্ষার্থী