বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান
রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙাড়ি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ সোহাগের হত্যাকারীকে অন্য জায়গা থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, পুরান ঢাকায় যে ঘটনাটি ঘটে গেছে, যে ছেলেটি মারা গেছে তার সঙ্গে হয়তো যুবদলের সম্পর্ক আছে। যে খুন করছে বা যে হত্যা করছে- আমরা যেটা খবর পেরেছি, তাকে অন্য জায়গা থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। তাকে ধরা হচ্ছে না। গ্রেপ্তার করা হলো অন্যদের। তাকে মনে হয় এখন পর্যন্ত আসামি করা হয়নি। কেন হয়নি, কেন ধরা হচ্ছে না?
শনিবার রাজধানীর গুলশানে লেক শোর গ্র্যান্ড হোটেলে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের উদ্যোগে ‘ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকীতে জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে সংগঠনের শহীদদের স্মরণে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ’ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের বক্তব্য শুনেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তাদের বক্তব্যের বিভিন্ন প্রশ্নের তাৎক্ষণিক জবাব দেন। বিভিন্ন দাবি পূরণে প্রতিশ্রুতি দেন।
মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়াম্যান বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে একবারও বলা হয়নি, অমুককে ধরা যাবে, তমুককে ধরা যাবে না। একবারও এই কথা বলা হয়নি। আমরা বরাবরই বলেছি, অন্যায়কারীর আইনের দৃষ্টিতে তার বিচার হবে। দলের সঙ্গে তার কি সম্পর্ক, কিছু যায় আসে না তাতে। তাকে দল কোনো রকম প্রশ্রয় দেবে না। কেউ যদি কোনো অন্যায় করে থাকে তাহলে তাকে প্রশাসন ধরছে না কেন?
তিনি বলেন, এখানে রিজভী সাহেব পরিষ্কার বলেছেন, দলীয় অবস্থান থেকে আমাদের যা যা করা প্রয়োজন, আমরা যেটি যেটি জেনেছি, তদন্তের পরে যাদের যাদের সম্পর্কে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে- আমরা আমাদের দলীয় অবস্থান থেকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাহলে কেন বসে আছেন? আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে চালায় কে? বিএনপি তো চালায় না? চালাচ্ছে তো সরকার। তাহলে সরকার কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না? সেটি দলের হোক কিংবা অন্য কোনো লোকই হোক। কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না?
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, নতুন করে আবার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। আমাদের সকলকে চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আমাদের যে আন্দোলন, আমাদের যে যুদ্ধ ছিল- সেই যুদ্ধ কিন্তু এখনো শেষ হয়ে যায়নি।
তিনি আরও বলেন, অনেকগুলো রাজনৈতিক দলকে আমরা দেখেছি, কারও ব্যাপারে আমরা দেখেছি- স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভূমিকা। যখন বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন, সেই সময় আমরা দেখেছি- দেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা কে করেছে। কাদের পক্ষ নিয়ে দেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে। আবার আমরা দেখেছি, কোন কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য এদেশের মানুষকে যুদ্ধের ডাক দেয়নি। বরং ডাক দেয়ার দায়িত্ব তাদের ছিল, কিন্তু ডাক না দিয়ে আমরা দেখেছি- সবাই মিলে কোনো একটি দেশে লুকিয়ে ছিল কিংবা আশ্রয় নিয়েছিল। আমরা কাউকে দেখেছি, দূরে একটি দেশের গান গাইতে, আবার কাউকে দেখেছি, প্রতিবেশী দেশের গান গাইতে। এখন তো দেখা যাচ্ছে, বিএনপি ছাড়া বিভিন্ন দল বিভিন্ন দেশের গান গাইছে বাংলাদেশে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এ সময়ে যদি আমরা মিডিয়া দেখি, আমরা দেখবো- একটি বিষয়কে ঘিরে একটি গল্প তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। পত্র-পত্রিকায় দেখছি, বিএনপি সংস্কারের এটি মানছে না, ওটি মানছে না, সেটি মানছে না। অপর পক্ষে আমরা দেখছি, অনেকগুলো দল সবকিছু মেনে নিচ্ছে। আমাদের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, এখানে তো আমরা এসেছি আলোচনা করার জন্য, যদি সব মেনেই নিতে হয় তাহলে আলোচনার দরকার কি ছিল? সরকার বলে দিতো যে, এই এই করতে হবে। কিন্তু আলোচনার জন্য ডাকা হয়েছে। সেই আলোচনায় দেখছি, কিছু ব্যক্তি, তারমধ্যে মিডিয়ার কিছু অংশসহ বলা ও তুলে ধরার চেষ্টা করছে যে- বিএনপি এটা মানছে না, ওটা মানছে না। আর কেউ কেউ এটা মানছে, ওটা মানছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, দেশ পরিচালনায় দায়িত্ব বিএনপি ছাড়া কি ওখানে আর কারও আছে? কারও নেই। সুতরাং বিএনপি যেটা মানছে এবং যেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, বিএনপি অভিজ্ঞতা থেকেই বলছে। কারণ বিএনপি জানে, বিএনপি’র ধারণা আছে। যে কোন কাজটি করলে দেশের জন্য ভালো হতে পারে, আর কোন কাজটি করলে দেশের জন্য ভালো না হতে পারে। বিএনপি’র দায়িত্ববোধ আছে। এজন্য বিএনপি’র আপত্তিগুলো তুলে ধরছে।
শহীদ পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, আপনারা বলেছেন জুলাই সনদ। এটি আমরা তিন মাসে আগে দিয়ে দিয়েছি। সরকার থেকে কেন বলছে না, জুলাই সনদের ব্যাপারে বিএনপি তো তিন মাসেই জানিয়ে দিয়েছে। কেন বলছে না? কেন কোনো কোনো দল পুরো বিষয়টিকে ভ্রান্তভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করছে? আপনারা বিচারের কথা বলেছেন। বিচারের কথা শুধু আপনাদের কথা না। বিচারের কথা দেশের প্রত্যেকটি গণতন্ত্রকামী মানুষের দাবি।
তিনি বলেন, আমাদের শহীদরা তারা যে প্রত্যাশা নিয়ে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করছে, সেই প্রত্যাশা যাতে আমরা পূরণ করতে পারি- এদেশের মানুষের সমর্থন নিয়ে একটি গণতান্ত্রিক উপায়ে সরকার গঠন করতে সক্ষম হলে সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে দেশ গড়তে চাই। আমরা অতীতে দেখেছি, দেশ বিভক্ত করে দেয়া হয়েছিল। সেজন্য দেশের প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান কীভাবে ভেঙেচুরে ছাড়খার হয়ে গেছে। আমরা বিশ^াস করি, দেশকে যদি গড়তে হয় জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। এই ঐক্যবদ্ধ করার জন্য সব প্রকার উদ্যোগ আমরা গ্রহণ করেছি।
অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, একটা কথা পরিষ্কার করে বলতে চাই, যে ঘটনাগুলো ঘটছে সরকারকে আহ্বান জানাবো, অতিদ্রুত তদন্ত করে প্রকৃত যারা অপরাধী তাদেরকে বের করে শাস্তির ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় জাতি আপনাদের ক্ষমা করবে না, জাতি আপনাদের দায়ী করবে গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে নেয়ার সময় এসব সমস্যা তৈরি করার জন্য।
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল বক্তব্য রাখেন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে কক্সবাজারে শহীদ তানভীর সিদ্দিকীর বাবা বাদশা মিয়া, বরিশালে শহীদ তাহিদুল ইসলামের বোন ইশরাত জাহান, ঢাকা কাফরুলে শহীদ আকরাম খান রাব্বীর বাবা মো. ফারুক খান, ভোলায় শহীদ মো. মহির হোসেনের ভাই হাসনাইন, টাঙ্গাইলে শহীদ ইমন মিয়ার ভাই মো. সুজন, মাগুরায় শহীদ মেহেদী হাসান রাব্বীর স্ত্রী রুমি খাতুন, নোয়াখালীতে শহীদ শাহাদাত হোসেন শাওনের ভাই মো. হানিফ, নরসিংদীতে শহীদ তাহমিদ ভূঁইয়ার মামা জোবায়ের মান্নান, দিনাজপুরে শহীদ সুমন পাটোয়ারীর বাবা ওমর ফারুক, কক্সবাজারে শহীদ ওয়াসিম আকরামের বাবা মো. শফি আলম, নোয়াখালীতে শহীদ ইমতিয়াজ হোসেন রিয়াজের বাবা মো. হাবিবুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ১৪২ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।