সন্ন্যাসজীবন যাপনের মধ্যেই যে আসলে মুক্তির স্বাদ রয়েছে তা বিশ্বাস করেন তাঁরা। তাই লক্ষ টাকার বেতন পেলেও চাকরি ও উচ্চবিত্ত জীবন ছেড়ে হয়েছেন সন্ন্যাসী। মু্ম্বাইয়ের আইআইটি থেকে স্নাতক স্তরের ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন গৌরাঙ্গ দাস। ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে পাস করেছিলেন ধাতুবিদ্যায়। তারপর পেয়েছিলেন লাখ টাকা বেতনের চাকরি। কিন্তু তাঁর আগ্রহ জন্মায় আধ্যাত্মিক জীবনের প্রতি।
‘দ্য আর্ট অফ ফোকাস’ নামে একটি বই লিখেছেন গৌরাঙ্গ। বহু বেসরকারি সংস্থার পাশাপাশি স্কুল-কলেজে বক্তৃতা করেন তিনি। সন্ন্যাসজীবন ধারণ করে প্রেরণামূলক বক্তা হিসাবেও নিজের পরিচিতি তৈরি করেছেন গৌরাঙ্গ।
আইআইটি থেকে পাস করে আমেরিকার কর্নেল ইউনিভার্সিটিতে এমবিএ করার জন্য ভর্তি হন রসনাথ দাস। এমবিএ করার পর সেখানে ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার হিসাবে কাজ শুরু করেন তিনি।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে রসনাথ জানিয়েছিলেন, কাজের ফাঁকে অবসর পেলে তিনি ম্যানহাটনের একটি মঠে চলে যেতেন। সেখানে গিয়ে মাটিতে শুয়ে থাকতেন। তার পর প্রতি দিন দু’ঘণ্টা ধরে ধ্যান করা শুরু করেন রসনাথ।
সাক্ষাৎকারে রসনাথ জানিয়েছিলেন, ধীরে ধীরে বিলাসবহুল জীবন থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিতে থাকেন তিনি।
আধ্যাত্মিকতার দিকে ঝোঁক বাড়লে ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে চাকরি ছেড়ে মঠে চলে যান। বর্তমানে সন্ন্যাস জীবন কাটাচ্ছেন তিনি।
মুম্বইয়ের আইআইটি থেকে গণিত নিয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন খুরশেদ বাটলিওয়ালা। আইআইটি থেকে পাস করার পর তিনি বিলাসিতা থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নেন।
খুরশেদের মতে, অর্থ এবং বিলাসিতা বর্জন করে সাধারণভাবে জীবন যাপন করাই যায়। সাধারণভাবে জীবনযাপনের পদ্ধতি শেখানোর জন্য দেশবিদেশের নানা জায়গায় ওয়ার্কশপ করান তিনি। সন্ন্যাস জীবন যাপন করার পাশাপাশি বইও লিখেছেন।
দিল্লির আইআইটি থেকে স্নাতক ডিগ্রি নেয়ার পর কলকাতার আইআইএম থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন স্বামী মুকুদানন্দ। যোগবিদ্যা ও আধ্যাত্মিকতা নিয়ে বই লিখেছেন তিনি। বর্তমানে আধ্যাত্মিক গুরু হিসাবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন।
বারাণসীর আইআইটি থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন অভিরাল জৈন। পড়াশোনার পর ভাল বেতনের চাকরিও পান তিনি। বছরে ৪০ লাখ টাকা পারিশ্রমিকের চাকরি ছেড়ে আধ্যাত্মিকতার পথ বেছে নেন তিনি।
মুম্বাইয়ের আইআইটি থেকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করেছেন সঙ্কেত পারেখ। আমেরিকায় চাকরিও পেয়েছিলেন তিনি। প্রতি বছর ১২ লাখ টাকা কেবল আয়করই দিতেন।
জৈনধর্মের প্রতি ধীরে ধীরে আগ্রহ জন্মাতে থাকে সঙ্কেতের। তাদের আচার-আচরণ, রীতিনীতি মেনে জীবনযাপন করতে শুরু করেন তিনি। আড়াই বছর জৈনধর্ম বিষয়ে প়ড়াশোনা করার পর চাকরি ছেড়ে দেন।
দিল্লির আইআইটি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন আচার্য প্রশান্ত। তার পর ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে আহমদাবাদের আইআইএম থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। উচ্চপদের সরকারি চাকরি ছেড়ে বেদ-উপনিষদ নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। বর্তমানে একটি অসরকারি সংস্থার কর্ণধার আচার্য। গীতা ও উপনিষদ নিয়ে শিক্ষাদানও করেন তিনি। আধ্যাত্মিক গুরু হিসাবে বইও লিখেছেন।
১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে মুম্বাইয়ের আইআইটি থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন রাধেশ্যাম দাস। তার পর চাকরিও শুরু করেন তিনি। কিন্তু চাকরি ছেড়ে ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে বেছে নেন সাধক জীবন।
আইআইটি কানপুর থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন মহান মহারাজ। তার পর ক্যালিফর্নিয়ার ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করেন। আধ্যাত্মিকতা ও দর্শনের প্রতি আগ্রহ তৈরি হওয়ায় সন্ন্যাস জীবনযাপন শুরু করেন। বর্তমানে মুম্বাইয়ের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত পড়ান তিনি। সূত্র: আনন্দবাজার