নাটোরের বড়াইগ্রামে সদ্য জাতীয়করণ হওয়া বড়াইগ্রাম সরকারি অনার্স কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অভিযোগের পাহাড় জমেছে।
কলেজের সাধারণ শিক্ষকেরা প্রতিকার চেয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করেছেন।
ডিজির কাছে করা আবেদন থেকে জানা যায়, কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হবিবুর রহমান গত নভেম্বরে দায়িত্ব নিয়েছেন। এরপর থেকেই স্বজনপ্রীতি, আর্থিক দুর্নীতি, চাঁদা দাবি, স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাৎ, শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে অসদাচরণসহ অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।
সরকারি বিধি মোতাবেক একাডেমিক কাউন্সিলে কলেজ পরিচালনার যাবতীয় সিদ্ধান্তের অনুমোদন নিয়ে কলেজ পরিচালনার বিধান রয়েছে। অথচ তিনি একাডেমিক কাউন্সিলকে পাশ কাটিয়ে কোনো সভা না করেই অনিয়ম ও বিধিবর্হিভূতভাবে রেজুলেশন লিখে তাতে শিক্ষকদের নানা কৌশলে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন। এরপর রেজুলেশন খাতায় ফ্লুইড ব্যবহার ও ঘষামাজা করে সিদ্ধান্তসমূহ পরিবর্তন করেন।
গত ডিসেম্বরে কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের ট্রেজারির মাধ্যমে বেতন বরাদ্দের পর উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের সঙ্গে যোগসাজসে শিক্ষক-কর্মচারীদের পাঁচ থেকে ১১ হাজার টাকা করে চাঁদা দিতে বাধ্য করেন। প্রতিবাদ করায় অন্তত ১০ জন শিক্ষকের বেতন-ভাতা আটকে রেখে তাদের মানসিকভাবে নির্যাতন করেন। শিক্ষক-কর্মচারীদের উৎসব ভাতা, বকেয়া বেতন ও শ্রান্তি বিনোদন ভাতাসহ ছুটি মঞ্জুর করার ক্ষেত্রে তিনি প্রতিবারই ঘুষ নেন। অনিয়মের প্রতিবাদ করায় অন্তত ২৫ জন শিক্ষকের শ্রান্তি বিনোদন ছুটি মঞ্জুর করতে গরিমসি ও নানা রকম টালবাহানা করছেন। কোনো ক্রয় কমিটি না করে নিজেই দ্রব্যাদি কিনে অনুগত শিক্ষক দিয়ে বিল-ভাউচার তৈরি করেন।
সরকারি বিধান থাকলেও তিনি কোনো ভ্যাট প্রদান করেন না। তিনি কোনো সভা বা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে সরাসরি তার ভাতিজি জামাই ও নাতিকে ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দেন। স্থানীয় এমপিকে সংবর্ধনা প্রদান করে একাডেমিক কাউন্সিলে অনুমোদন ছাড়াই তিন লাখ ৭৫ হাজার টাকা তুলে নিয়েছেন। অনুগতদের খুশি রাখতে প্রতিদিন দুপুরে অফিস কক্ষে রান্না করে ভুড়িভোজ করান। কলেজের ইংরেজি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, হিসাববিজ্ঞান, পরিসংখ্যান ও দর্শন বিষয়ের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব বিধি বর্হিভূতভাবে পছন্দমতো অনুগত জুনিয়র শিক্ষককে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব দিয়েছেন। প্রতিবাদ করলে তিনি জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের সঙ্গে চরম অসৌজন্যমূক আচরণ করেন।
তিন হাজারের অধিক শিক্ষার্থীর এই প্রতিষ্ঠানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ বাবদ তিন হাজার ও কলেজ পাওনার নামে আরো দুই হাজার টাকা করে আদায় করেছেন। সরকারি বিধির তোয়াক্কা না করে ভর্তির ক্ষেত্রে একাদশ শ্রেণিতে দুই হাজার পাঁচশ’, ডিগ্রি (পাস) কোর্সে চার হাজার পাঁচশ’ এবং অনার্স শ্রেণিতে চার হাজার ৬৪০ টাকা করে আদায় করেন। কিন্তু সরকারি বিধি মোতাবেক নির্দিষ্ট অঙ্কের রশিদ কেটে ব্যাংকের সাধারণ তহবিলে জমা করেন। অবশিষ্ট টাকা আত্মসাৎ করেন।
এ বিষয়ে বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান নেকবর হোসেন বলেন, শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা নেয়াসহ অধ্যক্ষের বিষয়ে করা সকল অভিযোগ শতভাগ সত্য। শিক্ষকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূক আচরণ তার নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। ভর্তি থেকে শুরু করে ফর্ম পূরণ সকল ক্ষেত্রেই অর্থনৈতিক অনিয়ম আছে।
এদিকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হবিবুর রহমান তার বিরুদ্ধে করা শিক্ষকদের সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগগুলো অসত্য ও অনৈতিক। তিনি কোনো অনিয়ম করেন না। তার সমবয়সি শিক্ষকরা অধ্যক্ষ হতে না পারায় মনোকষ্টের কারণে এসব অভিযোগ করেছেন। তিনি কাউকে চাকরি নয়, দৈনিক মুজুরি ভিত্তিতে মাস্টার রোলে নাতি ও ভাতিজি জামাইকে নিয়োগ দিয়েছেন।