চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ না নিয়ে দুই শিক্ষার্থীর জিপিএ-৫ পাওয়ার ঘটনা খোঁজ করতে গিয়ে আরো ১৫ জনের তথ্য পাওয়া গেছে। যাদের প্রত্যেকে আইসিটি বিষয়ে অংশগ্রহণ করেননি। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর ১৭ জনের ফল বাতিল করা হয়। এ জালিয়াতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র সচিব ও বোর্ডের পরীক্ষা শাখার কতিপয় ব্যক্তি জড়িত রয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, চলতি বছরে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় চট্টগ্রামের বাঁশখালীর চাম্বল উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী গত ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত আইসিটি পরীক্ষায় অংশ নেননি। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করলেও গত ১২ মে প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে তারা এই বিষয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করেছেন। ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের এসএসসি পরীক্ষায় চাম্বল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৭৩ জন শিক্ষার্থী বাঁশখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নেন। এদের মধ্যে পাস করেন ৭২ জন। একজন শিক্ষার্থী ফেল করেছেন রসায়ন বিষয়ে। অর্থাৎ যে দুই শিক্ষার্থী আইসিটি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি তারাও পাস করেছেন।
বিষয়টি জানাজানি হলে শিক্ষা বোর্ডের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এরপর চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের ফলাফল প্রক্রিয়া যাচাই-বাছাই করতে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের দুজন প্রোগ্রামার আনা হয়। তারা গত ৬ জুন থেকে ৮ জুন পর্যন্ত এ নিয়ে কাজ করেন। তাদের অনুসন্ধানে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসে। শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসএসসির অন্যান্য বিষয়েও খোঁজ নিলে এমন অনেক ঘটনা পাওয়া যেতে পারে।
কয়েক বছর ধরে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে ফল জালিয়াতিসহ নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে। তবে প্রকৃত অপরাধী এবং জড়িতরা আইনের আওতায় আসছে না। সর্বশেষ শিক্ষা বোর্ডের একটি ট্রাঙ্ক থেকে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের এইচএসসি পরীক্ষার্থীর দুটি মার্কশিট গায়েব হওয়ার ঘটনা ঘটে। গত ১৯ মে সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তা বিষয়টি জানতে পারেন। গত ৪ জুন এ ঘটনায় নগরীর পাঁচলাইশ থানায় জিডি করা হয়।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবারের এসএসসি পরীক্ষায় আইসিটি বিষয়ে পরীক্ষা না দিয়ে পাস করা ১৭ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১২ জন ছাত্রী এবং ৫ জন ছাত্র। এরা হলেন-সাদিয়া সুলতানা, উর্মি আকতার, আবু আবদুল্লাহ মো. ওসামা, রবিউল হাসান অভি, তানিশা আকতার, সায়মা আক্তার রুমা, জান্নাতুল ফেরদৌস তিশা, মো. ইয়াসিন, মিফতাহুল জান্নাত, আফসানা আফরোজ জেনি, আকলিমা সুলতানা আঁখি মনি, সালমা আক্তার, জান্নাতুল মাওয়া, তাছমিনা আক্তার, রবিউল হোসেন মমিন, মো. সাজিন খান ও পাপিয়া দাশ। চিহ্নিত হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাদের ফলাফল বাতিল করা হয়।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেজাউল করিম বলেন, প্রাথমিকভাবে দুই পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত থেকে পাস করার বিষয়ে জানতে পেরে আমি হতবাক হয়ে যাই। পরে চিন্তা করলাম হয়তো আরো থাকতে পারে, এমন অনুমান থেকে যাচাই-বাছাই শুরু করি। এ কাজের জন্য লোকবল সংকট থাকায় কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড থেকে দুজন বিশেষজ্ঞ আনা হয়। পরে ১৭ জনের তথ্য পাই। তাদের ফল বাতিল করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, শিক্ষা বোর্ডের কার্যক্রম স্বচ্ছ এবং দুর্নীতিমুক্ত করতে কাজ করছি। ফল জালিয়াতির ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হবে। জড়িতদের বিরুদ্ধে বোর্ডের বিধিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।