ঢাকা মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪ , ৬ কার্তিক ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

বিশ্বজুড়ে বাড়ছে পুরুষাঙ্গের ক্যানসার

আন্তর্জাতিক

আমাদের বার্তা ডেস্ক

প্রকাশিত: ০০:১০, ২৩ জুন ২০২৪

সর্বশেষ

বিশ্বজুড়ে বাড়ছে পুরুষাঙ্গের ক্যানসার

বিশ্বব্যাপী পুরুষাঙ্গের ক্যানসারে আক্রান্তের হার বাড়ছে। ব্রাজিলে গত এক দশকে এই ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ৬ হাজার ৫০০ জনের বেশি পুরুষের অঙ্গচ্ছেদ করতে হয়েছে।

ব্রাজিলে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে এক ব্যক্তির পুরুষাঙ্গে একটি আঁচিল দেখতে পান। কেনো এই আঁচিল হলো, তা জানতে তিনি অনেক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। ৬৭ বছর বয়সী এ ব্যক্তি বলেন, এটি কী, তা জানতে আমি অনেক হাসপাতালে যাওয়া শুরু করি। কিন্তু সব চিকিৎসকই বলেছেন, পুরুষাঙ্গে এটি অতিরিক্ত ত্বক। কেবল এর থেকে নিরাময় করতে ওষুধ লিখে দেন চিকিৎসকেরা।

কিন্তু ওষুধ খাওয়া সত্ত্বেও তার আঁচিল বাড়তে থাকে। এটি তার দাম্পত্য জীবনের ওপরও প্রভাব ফেলতে শুরু করে। তিনি বলেন, ওই সময় আমরা অনেকটা ভাইবোনের মতো ছিলাম। বিষয়টি আমার পরিবারের জন্য খুব অপ্রীতিকর ও বিস্ময়ের চেয়ে আরো বেশি কিছু ছিলো।

ব্রাজিলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ থেকে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে ২১ হাজার ব্যক্তির পুরুষাঙ্গের ক্যানসার হওয়ার খবর নথিভুক্ত হয়েছে। এতে ৪ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আর গত এক দশকে গড়ে প্রতি দুই দিনে একজনের পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলতে হয়েছে। সংখ্যায় যা ৬ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি।

পুরুষাঙ্গের ক্যানসারের লক্ষণ শুরু হয় একটি ঘা দিয়ে। যা কিছুতেই নিরাময় হয় না এবং ওই ঘা থেকে তীব্র গন্ধযুক্ত স্রাব বের হতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে রক্তপাত হয় এবং পুরুষাঙ্গের রং পরিবর্তিত হয়ে যায়।

এই ক্যানসার প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা হলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ক্ষত অপসারণ, রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপির মতো চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হওয়ার ভালো সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু যদি চিকিৎসা করা না হয়, তাহলে পুরুষাঙ্গের আংশিক বা সম্পূর্ণ বিচ্ছেদ এবং আশপাশের যেমন অণ্ডকোষও কেটে ফেলার প্রয়োজন হতে পারে।

তবে কোনো কোনো রোগীর পুরুষাঙ্গের সম্পূর্ণ অঙ্গচ্ছেদ করা হয়। এতে জীবন বদলে যায়। সাও পাওলোর এসি ক্যামার্গো ক্যানসার সেন্টারের ইউরোলজি বিভাগের চিকিৎসক থিয়াগো ক্যামেলো মুরাও বলেছেন, আংশিক অঙ্গচ্ছেদের ক্ষেত্রে, পুরুষাঙ্গ দিয়ে প্রস্রাব করায় কোনো জটিলতা হয় না।

থিয়াগো ক্যামেলো মুরাও আরো বলেন, সম্পূর্ণ অঙ্গচ্ছেদের ক্ষেত্রে মূত্রনালির ছিদ্রটি অণ্ডকোষ ও মলদ্বারের মধ্যে পেরিনিয়ামে স্থানান্তর করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে রোগীকে টয়লেটে বসে প্রস্রাব করতে হয়।

ব্রাজিলিয়ান সোসাইটি অব ইউরোলজির চিকিৎসক মাউরিসিও ডেনার কর্ডেইরো বলেছেন, যৌন ভাইরাস হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাসের (এইচপিভি) ক্রমাগত সংক্রমণ এই রোগের ঝুঁকির প্রধান একটি কারণ। শারীরিক সংসর্গের সময় এইচপিভি সংক্রমণ হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে এই সংক্রমণ মুখ ও পুরুষাঙ্গের ক্যানসারের কারণ হতে পারে।

মাউরিসিও ডেনার কর্ডেইরো বলেন, সংক্রমণ ও ক্ষত প্রতিরোধে এইচপিভির বিরুদ্ধে গণটিকা দরকার। ব্রাজিলে এই টিকা দেয়ার হার অনেক কম।

যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের (এনএইচএস) ওয়েবসাইট অনুসারে, ধূমপান পুরুষাঙ্গের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। পুরুষাঙ্গ পরিষ্কার রাখতে অগ্রভাগের চামড়া (পুরুষাঙ্গ আচ্ছাদিত ত্বক) যদি টানতে সমস্যা হয় (ফিমোসিস), তাহলে পুরুষাঙ্গের ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।

তবে শুধু ব্রাজিলে পুরুষাঙ্গের ক্যানসার বাড়ছে তা নয়। সাম্প্রতিক গবেষণা অনুসারে, বিশ্বজুড়ে এই ক্যানসারে আক্রান্তের পুরুষের সংখ্যা বাড়ছে।

২০২২ খ্রিষ্টাব্দে জেএমআইআর পাবলিক হেলথ অ্যান্ড সার্ভিল্যান্স জার্নাল ৪৩টি দেশের সর্বশেষ তথ্যসংবলিত একটি বড় মাপের বিশ্লেষণের ফলাফল প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, ২০০৮ থেকে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে পুরুষাঙ্গের ক্যানসারে আক্রান্তের সর্বোচ্চ ঘটনা পাওয়া গেছে উগান্ডায়। ওই সময় দেশটিতে প্রতি ১ লাখ পুরুষের মধ্যে ২ দশমিক ২ জন এই ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। এর পরের অবস্থানে ছিল ব্রাজিল, প্রতি ১ লাখ পুরুষের মধ্যে ২ দশমিক ১ জন এবং থাইল্যান্ডে প্রতি ১ লাখ পুরুষের মধ্যে ১ দশমিক ৪ জন এই ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। আর সর্বনিম্ন অবস্থানে ছিলো কুয়েত, এই দেশে প্রতি ১ লাখ পুরুষের মধ্যে শূন্য দশমিক ১ জন এই ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন।

চীনের সান ইয়াত-সেন বিশ্ববিদ্যালয়ের লেইওয়েন ফু ও তিয়ান তিয়ানের নেতৃত্বে একদল গবেষক গবেষণাটি করেছেন। তাঁরা বলেছেন, ‘উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এখনো পুরুষাঙ্গের ক্যানসারের উচ্চ প্রকোপ ও মৃত্যুর হার বেশি হরেও বেশির ভাগ ইউরোপীয় দেশে এ ঘটনা বাড়ছে।’

গ্লোবাল ক্যানসার রেজিস্ট্রি প্রেডিকশন টুলের তথ্য অনুসারে, এই পরিসংখ্যানগুলো শুধু উচ্চতর ক্যানসার ঝুঁকির কারণে করা হয়েছে। তারা ধারণা করছে, ২০৫০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে বিশ্বব্যাপী পুরুষাঙ্গের ক্যানসারের ঘটনা ৭৭ শতাংশেরও বেশি বেড়ে যাবে।

ফ্রিমলি হেলথ এনএইচএস ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের ইউরোলজি বিভাগের ক্লিনিক্যাল লিড নিল বারবার বলেছেন, খতনা করানো জনগোষ্ঠীর মধ্যে পুরুষাঙ্গের ক্যানসারে আক্রান্তের কথা প্রায় শোনা যায় না। দুর্বল স্বাস্থ্যবিধি এবং পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগের নিচে সংক্রমণ, পাশাপাশি ফিমোসিসের মতো অবস্থা যা সামনের চামড়া তুলে নেয়া কঠিন করে তোলে।

জনপ্রিয়