ঢাকা শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪ , ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

nogod
nogod
bkash
bkash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
nogod
nogod
bkash
bkash

এ বিভীষিকার শেষ কোথায় 

জাতীয়

আমাদের বার্তা প্রতিবেদক 

প্রকাশিত: ০০:২০, ২ মার্চ ২০২৪

সর্বশেষ

এ বিভীষিকার শেষ কোথায় 

রাজধানীর নিউ বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে ভয়াবহ আগুনে ১২ শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ মোট ৪৬ জনের মৃত্যু ঘটেছে। এ ছাড়াও গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তত ২২ জন। নিহত ৪৬ জনের মধ্যে ৪০ জনের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। ৩৮ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে ৭৫ জনকে। এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।  

জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে ওই বহুতল ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় আগুন লাগার পর তা ওপরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। পাশাপাশি ক্রেনের সাহায্যে ভবনের সপ্তম তলা ও ছাদে আশ্রয় নেয়া ব্যক্তিদের নামিয়ে আনতে থাকেন তারা। ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিটের দুই ঘণ্টার চেষ্টায় ১১টা ৫০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ওই সময় ৪৪ জনের মৃত্যুর খবর জানা যায়।  
আগুনের সূত্রপাত

ভবনটির নিচতলার চমক জুস বার থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে জানিয়েছেন ভবনটিতে চাকরি করা কর্মীরা। মুহূর্তে তা ছড়িয়ে পড়ে ভবনটির সিঁড়িসহ আশপাশে। নিচতলা থেকেই যে আগুনের সূত্রপাত সে বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাওয়া সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া। ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দীন বলেন, এসব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কোনো কোনোটিতে ব্যবহার হতো গ্যাস সিলিন্ডার। এ কারণে পুরো ভবনটিই ছিলো অগ্নিচুল্লি।  

অনুমোদনহীন রেস্তোরাঁ

আগুন লাগা ভবনটিতে ছিলো আটটি রেস্তোরাঁ, একটি জুস বার (ফলের রস বিক্রির দোকান) ও একটি চা-কফি বিক্রির দোকান। ছিলো মুঠোফোন ও ইলেকট্রনিকস সরঞ্জাম এবং পোশাক বিক্রির দোকানও। তবে এতে রেস্তোরাঁ করার অনুমোদন ছিলো না বলে জানিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। রাজউক জানিয়েছে, ভবনটির অনুমোদন আটতলার। শুধু আটতলায় আবাসিক স্থাপনার অনুমোদন আছে।

তিনবার নোটিশ দেয়া হয় ভবন কর্তৃপক্ষকে

এদিকে আগুন লাগা ওই ভবন কর্তৃপক্ষকে তিনবার নোটিশ দেয়া হয়েছিলো বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন। তিনি বলেন, ওই ভবনে কোনো অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিলো না। মানুষের আসা-যাওয়ার জন্য কেবল একটি ছোট সিঁড়ি ছিলো। ভবন কর্তৃপক্ষকে অগ্নিনিরাপত্তা সংক্রান্ত নোটিশ দেয়া হয়েছিলো। কিন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

শিক্ষকসহ ১১ শিক্ষার্থীর মৃত্যু

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মৃতদের মধ্যে একসঙ্গে ৭ বান্ধবী রয়েছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়াও মৃতদের মধ্যে রয়েছেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষিকা লুৎফুর নাহার করিম (৪৭) ও তার মেয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী জান্নাতি তাজরিন (২৩), বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) লামিসা ইসলাম ও নাহিয়ান আমিন, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা বিভাগের তুষার হাওলাদার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ইভিনিং ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. নুরুল ইসলাম, মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ফৌজিয়া আফরিন রিয়া, ভিকারুননিসা নূন স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরিন আলিশা,  ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান নিমু ও রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজের দর্শন বিভাগের ছাত্রী অভিশ্রুতি শাস্ত্রী এবং এ বছর এইচএসসি পাস করে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি নেয়া ফরিদপুরের বিশ বছরের তরুণ সাগর হোসেন। 

আরো মারা গেছেন এক ইতালিপ্রবাসী ও তার পরিবারের চার সদস্য। রয়েছেন নাজিয়া আহমেদ (৩২) নামের এক নারী ও তার দুই শিশুসন্তান আরহান আহমেদ (৭) ও আবিয়াত আহমেদ (৩)। নিহত ও হতাহতদের মধ্যে কেউ কেউ ভবনটির রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়েছিলেন পরিবারসহ, কেউ গিয়েছিলেন বন্ধুদের সঙ্গে। কেউবা ভবনটিতে কাজ করে সংসার চালাতেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্য

এ ঘটনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন বলেন, যারা মারা গেছেন, সেটা কার্বন মনোক্সাইড পয়জনিংয়ের কারণে। এটা বদ্ধ ঘর থেকে বের হতে পারে না, তখন ওই ধোঁয়া শ্বাসনালিতে চলে যায়। তিনি আরো বলেন, চিকিৎসাধীন কেউই শঙ্কামুক্ত নন। এর মধ্যে দুজন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং ১০ জন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক

এ ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার এক শোকবার্তায় নিহত ব্যক্তিদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন ও আহত ব্যক্তিদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন। রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান। এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি নিহত ব্যক্তিদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন ও তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান। এ ছাড়া স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, শিক্ষামন্ত্রীসহ বিভিন্ন মন্ত্রী এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ ঘটনায় শোক জানান।   

তদন্ত কমিটি গঠন

ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার তদন্ত করতে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। কমিটির প্রধান করা হয়েছে সংস্থাটির পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী, সদস্যসচিব ঢাকা বিভাগের উপ-পরিচালক মো. ছালেহ উদ্দিন, সংশ্লিষ্ট জোনের উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি), সিনিয়র স্টেশন অফিসার এবং ওয়ারহাউজ ইন্সপেক্টর। এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার নেপথ্যের কারণ, ভবনের অগ্নি নিরাপত্তা ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণসহ হতাহত বেশি হওয়ার কারণ অনুসন্ধান করবে এই কমিটি।

জনপ্রিয়